1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ০৭:৩২ অপরাহ্ন

দেশে থাইরয়েড রোগী ৪ কোটি

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫

বিশ্ব থাইরয়েড দিবস আজ রবিবার। ২০০৯ সাল থেকে সারাবিশ্বে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে বেসরকারিভাবে সভা-সেমিনারসহ সচেতনতামূলক নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) বহুমাত্রিক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ঝর্ণা হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার থাইরয়েড গ্রন্থিকে জানুন, দ্রুত শনাক্ত করে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন’। এদিকে দেশে ৪ কোটি থাইরয়েড রোগী রয়েছে বলে জানা গেছে।

থাইরয়েড নিয়ে চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা খুবই উদ্বিগ্ন। তারা মনে করছেন প্রতিনিয়ত এই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে সচেতনতার অভাব, রোগ প্রতিরোধে বড়-পরিসরে উদ্যোগ না নেওয়া এবং অপরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস প্রভৃতির কথা বলছেন। এতে দৈহিক গঠন ও মেধাবিকাশে বাধা, বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, থাইরয়েড থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাটাও উদ্বেগজনক। বিশেজ্ঞরা মনে করেন, সরকার, চিকিৎসক ও জনগণ যার যার জায়গা থেকে এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করলে এ থেকে অনেকাংশেই রেহাই পাওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিম আমাদের সময়কে বলেন, অন্য দিবসের মতোই মূল টার্গেট হলো জনগণকে তথ্য জানানো, সচেতন করা এবং এই ক্ষেত্রে কী করণীয় তা নির্ধারণ করা। এটি জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকে যদি উদ্যোগ নেন তাহলে অনেক বেশি রোগী আগে শনাক্ত হবেন এবং চিকিৎসা করে ভালো থাকতে পারবেন। তিনি জানান, বাংলাদেশে থাইরয়েড রোগ ভয়াবহ অবস্থায় আছে। কারণ ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় তা অনেক বেশি। পৃথিবীতে প্রায় ৮২ কোটি থাইরয়েডের রোগী আছে। এর মধ্যে ৪ কোটি রোগী বাংলাদেশে। অর্থাৎ মোট রোগীর ২০ ভাগের ১ ভাগ বাংলাদেশে। এই ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাপক উদ্যোগী হওয়া উচিত। কিন্তু সে উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। তিনি আরও বলেন, সামগ্রিকভাবে অনেক কিছু করতে হবে। কিছু কিছু করছি, কিছুই হচ্ছে না তা না। তবে যা করতে হবে তার তুলনায় খুবই নগণ্য।

ডা. শাহজাদা সেলিম তাদের সংস্থার উদ্যোগ এবং করণীয় বিষয়ে বলেন, আমরা বাংলাদেশ এন্ড্রোক্রাইন সোসাইটি থাইরয়েড টাস্কফোর্স থেকে চেষ্টা করছি সরকারকে বোঝাতে, সংশ্লিষ্টদের তথ্যগুলো দিতে। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। সবচেয়ে বড় যে কাজ আমাদের দরকার তা হলো জাতীয়ভাবে গবেষণা করা। কারা, কেন আক্রান্ত হচ্ছেন, কী করলে এই রোগ ঠেকাতে পাড়তামÑ তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

এই রোগের প্রভাব বিষয়ে শাহজাদা সেলিম বলেন, থাইরয়েডে গর্ভকালীন মহিলারা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি। এতে গর্ভবতী মহিলা এবং শিশু উভয়েই ঝুঁকিতে থাকেন। এছাড়া স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতির কারণে মেধাবী হওয়ার পথে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন।

অনেকে দৈহিক গঠনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকে বাচ্চা নিতে পারছেন না। এর সবগুলোই কিন্তু আমলে নেওয়ার অবকাশ রয়েছে। এটা মোকাবিলায় তীব্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এখানে সরকারি উদ্যোগ, চিকিৎসকদের যুক্ত হতে হবে, জনগণকে যুক্ত হতে হবে। যার যার জায়গা থেকে ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে এই চিকিৎসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

এই রোগ প্রতিরোধে আয়োডিনের উপকারিতার কথা জানিয়ে শাহজাদা সেলিম বলেন, আমাদের একটা ভালো রিসোর্স ছিল, তার অপর্যাপ্ত ব্যবহার হচ্ছে। আয়োডিন হরমোন তৈরি করে। সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতি আয়োডিনের উৎস। কিন্তু আমরা খেতে এতটা অভ্যস্ত নই। এগুলো খাওয়া দরকার। আমাদের বাজারে আয়োডিন যুক্ত লবণ ছিল, সেটা নিয়ে দ্বিধা রয়ে গেছে। আয়োডিন যুক্ত লবণ একটা ভালো উদ্যোগ। এর কিছুটা ভালো ফল আমরা পাচ্ছি।

শাহজাদা সেলিম জানান, পরিবারকে বাড়ন্ত ছেলেমেয়েদের বিষয়ে যত্নবান হতে হবে। জন্মের পরই একবার থাইরয়েড পরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। সন্তান ধারণের স্বপ্নের সঙ্গে থাইরয়েডের হরমোনের মাত্রা জানা যোগ করতে হবে। উদ্বেগের উদাহরণ টেনে ডা. শাহজাদা সেলিম আরও বলেন, আরেকটি ঘটনা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে মোট ক্যানসার রোগীর ১ শতাংশের কম ছিল থাইরয়েডের রোগী। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় ভিন্ন চিত্র দেখছি। বাংলাদেশে ৪ শতাংশের বেশি থাইরয়েডের রোগী ক্যানসারে আক্রান্ত। এটা আমাদের বড় পরিসরে ভাবাচ্ছে।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএমইউ) সহকারী অধ্যাপক ডা. মারুফা মোস্তারী জানান, প্রতি ১০ জনে ১ জন নারী থাইরয়েডজনিত রোগে ভোগেন। নারীরা পুরুষের তুলনায় ৮ গুণ বেশি আক্রান্ত হন। গবেষণা অনুযায়ী, থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্তদের একটা বড় অংশ হয় কিশোরী মেয়ে ও মধ্যবয়সী নারী। তিনি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছেন- ৩০ বছরের বেশি বয়সী নারী, পরিবারের কারও থাইরয়েড রোগের ইতিহাস থাকলে, গর্ভবতী নারী, পূর্বে আয়োডিন ঘাটতির অঞ্চল থেকে আগত ব্যক্তি।

হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন ক্লান্তিভাব, অনিয়মিত মাসিক বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, গলায় চাকা বা গোটা অনুভূত হওয়া, হৃৎস্পন্দনের পরিবর্তন (খুব ধীরে বা দ্রুত), বারবার গর্ভপাত, গর্ভধারণে সমস্যা, হাড়ক্ষয়, শিশুদের বৃদ্ধি ঠিকমতো না হওয়া, বয়ঃসন্ধি বিলম্বিত হওয়া, অবসন্নতা দেখা দেওয়া থাইরডের লক্ষণ বলে জানান ডা. মোস্তারী। নীতিনির্ধারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, থাইরয়েড পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য সরকারি বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং গবেষণা উৎসাহিত করতে হবে। উপসর্গ অনুযায়ী দ্রুত পরীক্ষার পরামর্শ দেন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com