1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি : শিল্প খাতে স্থবিরতা আরও বাড়বে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫

মাত্র সপ্তাহখানেক আগে বাংলাদেশে যে বড় আকারের বিনিয়োগ সম্মেলনটি হয়ে গেল, তাতে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি মিলেছে বলে জানিয়েছেন বিডার নির্বাহী চেয়ার‍ম্যান আশিক চৌধুরী। এটা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক খবর।

কিন্তু এর সঙ্গে দুঃসংবাদটি হলো নতুন শিল্পকারখানার জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এ সিদ্ধান্ত এমন সময়ে নেওয়া হলো, যখন অর্থনীতির গতি মন্থর, ব্যাংকঋণের সুদের চড়া হার এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যোগ হয়েছে ডলার–সংকট।

বিইআরসি রোববার নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে ৩৩ শতাংশ। তারা বলেছে, প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে। অন্যদিকে পুরোনো শিল্পকারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে গ্যাসের বাড়তি দাম আরোপ হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈষম্যমূলক এই দামের কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা অসম প্রতিযোগিতায় পড়বেন এবং বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবেন। গ্যাসের দাম নির্ধারণের এই প্রক্রিয়া শিল্পের জন্য বৈষম্য তৈরি করবে। একই খাতে পুরোনো কারখানা কম দামে গ্যাস পাবে আর নতুনদের বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে, এটা কী ধরনের নীতি?

বাংলাদেশে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ সব সময়ই তুলনামূলক কম ছিল, সাম্প্রতিককালে সেটা আরও কমছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগের হার ছিল ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কমে ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশে নেমেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম ছয় মাসে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ব্যাংকঋণের প্রবৃদ্ধি গত ফেব্রুয়ারিতে যে পর্যায়ে নেমেছে, তা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন (৬ দশমিক ৮২ শতাংশ)। গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশের মতো। শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণও কমছে। বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়া শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতারই ইঙ্গিত।

বিনিয়োগ সম্মেলনে দেশি–বিদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল, তার অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে যাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে। সব দেশেই নতুন বিনিয়োগকারীদের বাড়তি প্রণোদনা দিয়ে থাকে। কিন্তু গ্যাসের দামের ক্ষেত্রে করা হলো উল্টো।

জনমনে এই ধারণা পোক্ত হয়েছে যে আইএমএফএর ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবেই সরকার জ্বালানি পণ্যের ওপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে আইএমএফের ঋণ আমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু ভর্তুকি কমানোর কারণে জনজীবনে যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, সেটাও উপেক্ষা করা যাবে না। সরকার এমন সময়ে গ্যাসের দাম বাড়াল, যখন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ নতুন কর ধার্য করেছে। তিন মাসের জন্য এই সিদ্ধান্ত স্থগিত আছে, এটা সাময়িক স্বস্তি হলেও ভবিষ্যতে নাটকীয় পরিবর্তন আশা করা যায় না।

জ্বালানি খাতে ঘাটতির কথা বলে এর আগেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই খাতে যে সিস্টেম লসের নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় ও চুরি হচ্ছে, সেদিকে সরকারের নজর নেই। গ্যাস খাতে বর্তমানে কারিগরি ক্ষতির হার প্রায় ৩ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে, কারিগরি ক্ষতি শূন্য দশমিক ২০ থেকে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে কারিগরি ক্ষতি কমিয়ে এনেও সরকার ভর্তুকি কমিয়ে আনতে পারে। গ্যাসের দাম যদি বাড়াতেই হয়, সেটা করতে হবে সহনীয় পর্যায়ে। এক লাফ ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com