1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

মামলায় সামনে ফ্যাসিস্টের নাম পেছনে সুবিধা নেওয়ার চিন্তা

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৫

প্রায় আট মাস পর এসেও গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় মামলা হচ্ছে। এখন বেশিরভাগ মামলা হচ্ছে আদালতে। গত মার্চেও ঢাকার আদালত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন থানাকে মামলা গ্রহণ করতে অথবা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব মামলার প্রথম দিকে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যের নাম থাকছে। আর তাদের পেছনে অপরিচিত ব্যক্তিদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা, পূর্বশত্রুতা, অর্থনৈতিক ধান্দাসহ বিভিন্ন কারণে এসব নাম মামলায় যুক্ত করা হচ্ছে। নিরীহ মানুষকে আসামি করায় এসব মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

যদিও এসব মামলার ব্যাপারে সরকারের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় মামলা হলেই আসামিকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পক্ষে জারি করা এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত প্রমাণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বৈষম্যবিরোধী মামলার এজাহার নামীয় কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না।

বেশ কয়েকটি মামলা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সামনের দিকে প্রকৃত অপরাধীদের নাম থাকলেও মামলার ভেতরে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু ব্যক্তির নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সব ব্যক্তি মামলার অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত ছিলেন না। পূর্বশত্রুতার জেরে ব্যবসায়ীকে আওয়ামী লীগ নেতা সাজিয়ে মামলা দেওয়া, চাঁদা না দেওয়ায় এনসিপি নেতাকে আসামি করা, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে কানাডাপ্রবাসীকে আসামি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব মামলার বাদীও আসামিদের চেনেন না। আবার বাদীর আইডি কার্ড জাল করে মামলা করার ঘটনাও ঘটেছে। বাদী নিজেই জানেন না তিনি মামলা করেছেন। এসব মিথ্যা মামলা দায়ের ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর ক্ষেত্রে আইনজীবীর ভূমিকার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এক শ্রেণির আইনজীবী মামলা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে অথবা কোনো পক্ষ হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এসব মিথ্যা মামলার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন।

গত ৮ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সাংবাদিকদের বলেন, গণমামলায় গণআসামি থাকবে না। অযথা কাউকে হয়রানি করা হবে না। যারা অপরাধে জড়িত না, তাদের ধরা হবে না। জুলাই-আগস্টের ঘটনায় করা অনেক মামলার বাদী মামলা-বাণিজ্য করছেন। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা হবে।

যেসব মামলা হয়েছে, সেসব মামলায় অন্য কায়দায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাদী মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে প্রমাণ না পেলে নাম বাদ দেবেন। অনেক বাদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করেছেন পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্য করতে। এজন্য ১৫০-২০০ বা আরও বেশি আসামি করা হয়েছে। প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা বা বিগত সরকারের শীর্ষ নেতাদের নাম দিয়ে পরে ঢালাওভাবে ইচ্ছামতো নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুলিশকে মামলা নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর পার্শ্ববর্তী সাভার থানার ভাকুর্তা ইউনিয়নের মোগরাকান্দার বাসিন্দা জুলহাস মিয়াকে দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা এবং অন্যটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে। দুটি মামলাতেই তার পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কিন্তু বাস্তবে তিনি কোনোদিন রাজনীতি করেননি। নিজ গ্রামে একটি কোম্পানির কেনা জমি দেখাশোনা ও স্থানীয়ভাবে জমির ব্যবসা করেন তিনি।

প্রথম মামলাটি হয় গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর। সাভার থানায় এ হত্যা মামলার নম্বর ০৮/২০২৫। এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭১ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলা দায়েরের বেশ কয়েক মাস পর পুলিশ জুলহাস মিয়াকে গ্রেপ্তার করতে যায়। কিন্তু নিরপরাধ হওয়ায় এবং তার কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা না থাকায় পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। সর্বশেষ গত ১২ মার্চ তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও একটি হত্যাচেষ্টার মামলা হয়েছে। সি আর মামলা নম্বর ৪০২/২০২৫। এ মামলায়ও শেখ হাসিনাসহ ৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় জুলহাস ১৭ নম্বর আসামি। এ মামলায়ও জুলহাসকে ইউনিয়ন আওয়ামী লগের সহসভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকার আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। এভাবে একের পর এক মামলা হওয়ার পর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জুলহাস ও তার পরিবার।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ মামলা হওয়ার পেছনে একজন আইনজীবীর হাত রয়েছে। ওই আইনজীবীর সঙ্গে জুলহাসের পূর্বশত্রুতা রয়েছে। জানা গেছে, হত্যাচেষ্টা মামলাটির বাদী সাভার পৌরসভার সুতোর নোয়াদ্দা এলাকার বাসিন্দা। কালবেলাকে তিনি বলেন, আমার ছেলে জুলাই আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হন। সন্তানের সুচিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। ছেলের চিকিৎসার স্বার্থে আমি বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি এবং বিভিন্ন মানুষের সাহায্য ও পরামর্শ চেয়েছি। একপর্যায়ে আমার পূর্বপরিচিত আইনজীবী তানভীরের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তখন তিনি আমাকে একটি মামলা করার পরামর্শ দেন এবং বলেন, মামলা করলে আমি আর্থিক সহায়তা পাব। এতে ছেলের চিকিৎসা নিশ্চিত হবে, পাশাপাশি সরকার থেকেও স্বীকৃতি মিলবে। পরে উকিলের চাহিদা মোতাবেক মামলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমি দিয়েছি। পরে তিনি আমাকে মামলা করতে সহযোগিতা করেছেন। তবে মামলায় কতজন আসামি দেওয়া হয়েছে এবং কারা এই মামলার আসামি—আমি কিছুই জানি না। মামলায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া সব আসামির তালিকা অ্যাডভোকেট তানভীর আহম্মেদ দিয়েছেন।

সাভারের চেম্বারে একাধিক দিন যাওয়ার পর অ্যাডভোকেট মো. তানভীর আহম্মেদ খানের বক্তব্য পাওয়া যায়। তিনি বাদীকে মামলা করার পরামর্শ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কাদের আসামি করা হয়েছে, তা জানেন না বলে দাবি করেন। অ্যাডভোকেট তানভীর বলেন, আসামির বিষয়ে মামলার বাদী এবং মামলাটি পরিচালনাকারী অ্যাডভোকেট ভালো বলতে পারবেন। এমনকি আসামি জুলহাস মিয়াকেও তিনি চেনেন না বলে দাবি করেন। তবে মামলার বাদী অ্যাডভোকেট তানভীর ছাড়া মামলা পরিচালনাকারী অন্য আইনজীবীদের চেনেন না বলে উল্লেখ করেছেন। তাহলে জুলহাস মিয়ার নাম কে মামলায় জড়াল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

জানতে চাওয়া হলে জুলহাস মিয়া বলেন, আইনজীবী তানভীরের সঙ্গে আমার পূর্বশত্রুতা ছিল। জমি নিয়ে স্থানীয় একটি সালিশে আমি একপক্ষে এবং অ্যাডভোকেট তানভীর অন্যপক্ষে ছিলেন। সালিশে তানভীর হেরে যান। এ কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এ মামলা করেছেন বলে আমি মনে করি। তা ছাড়া আমাকে মামলায় জড়ানোর আর কোনো কারণ দেখি না। আমি স্থানীয় কোনো রাজনীতিও করি না। মামলায় আমাকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম, তাহলে আমি স্বেচ্ছায় কারাগারে যাব।

মামলা প্রত্যাহারে বাদী ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়: গত বছরের ২৪ আগস্ট রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছে। মামলার বাদী হিসেবে নাম আছে তেজগাঁও থানা যুবলীগ কর্মী নাজির আহম্মেদের। আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের ৬২ জনকে। তবে নিজ দলের সভানেত্রীর বিরুদ্ধে করা এ মামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ করেছেন নাজির আহম্মেদ। তিনি নিজেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানান। এনআইডি জালিয়াতি করে কেউ তার নাম উল্লেখ করে মামলা দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। মামলা প্রত্যাহার চেয়ে তিনি আদালতে হলফনামাও দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নাজির আহম্মেদ কালবেলাকে বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু সৈনিক। তেজগাঁও থানার ২৬নং ওয়ার্ডের যুবলীগ কর্মী। ওয়ার্ডটির ২ নম্বর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম। ৫ আগস্টের পরে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য বা বাসাবাড়িতে ছিলাম না। দুই মাস পর জানতে পারি আমাদের সভানেত্রীসহ দলের অনেকের নামে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে, যেটার বাদী আমি নিজে। কিন্তু আমি কিছুই জানি না।

তিনি আরও বলেন, আমার এনআইডি জাল করে কেউ অপব্যবহার করেছে। সভানেত্রীসহ বড় বড় নেতাকর্মী বাদে মামলার অধিকাংশ আসামিকে আমি চিনি না। আমি হলফনামা দিয়েছি, মামলা তুলতে। কিন্তু বিচারক বলেছেন, তদন্ত হোক। আমার মামলাটি শতভাগ ভুয়া।

‘চাঁদা না পেয়ে এনসিপি নেতাও আসামি’: ভুয়া আসামির হাত থেকে রেহায় পাননি জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আহসান মাহবুব জোবায়ের। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির এ নেতা উত্তরায় একটি বায়িং হাউসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার কাছে প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় জুলাই আন্দোলনের হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে। গত ২০ জুলাই গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় গুলিবিদ্ধ মো. জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে এ মামলা করা হয়েছে। মামলায় শুরুর দিকে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করে পেছনের দিকে অনেক নিরপরাধ মানুষকে আসামি করা হয়েছে বলে দাবি তার।

এ বিষয়ে আহসান জোবায়ের কালবেলাকে বলেন, গাজীপুরে আমাদের নির্মাণাধীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে স্থানীয় বিএনপি নেতা আলী আসাদ ও অমিত কুমার দাস চাঁদা দাবি করে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানাই এবং একটি মামলা করি। এ ঘটনায় তারা বিরাগভাজন হয়ে আমার নামসহ আমার মামলার সব সাক্ষীকেও জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যাচেষ্টা মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশে যেভাবে ভুয়া মামলা হচ্ছে, মামলার বাদী এই ভুক্তভোগী যদি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তও হন, তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না। আদালতে এই মামলা টিকবে না, জানি। কিন্তু আমাকে আদালতে যেতে হবে কেন?

ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে আসামি কানাডা প্রবাসী: উত্তরার একটি বায়িং হাউসের সিইও এবং কানাডিয়ান নাগরিক মোহাম্মদ মনির উদ্দিনের নামেও ব্যক্তিগত রেশে দুটি হত্যাচেষ্টা মামলা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি আন্দোলনের সময় ৫ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দেশের বাইরে কানাডায় অবস্থান করছিলেন।

ফেনীর পরশুরামে ক্রয়কৃত জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে উত্তরা তুরাগ থানার বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন ও আব্দুল কাদের উত্তরার দুটি হত্যাচেষ্টা মামলায় ভুক্তভোগী প্রবাসী মনির উদ্দিনের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টা, পুলিশের আইজিপির কাছে মামলা থেকে অব্যাহতি ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য চিঠি দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে প্রবাসী ব্যবসায়ী মনির উদ্দিন বলেন, প্রবাসী ব্যবসায়ী হিসেবে গত ১০ বছর ধরে আমার পুরো পরিবার কানাডায় বসবাস করছে। মহিউদ্দিনের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক কিছু বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে, যা পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। কিন্তু পারিবারিক জেরে আমাকে দুটি মিথ্যা মামলায় নাম ঢুকিয়েছে। তিনি ঢাকায় আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলে আমাকে হয়রানি করতেন ও নিয়মিত চাঁদা দাবি করতেন। মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলায় আমাকে হয়রানির পরে গত ২ মার্চ আমার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিলে আমার বিরুদ্ধে করা ভুয়া হত্যাচেষ্টা মামলা থেকে নাম প্রত্যাহার করবে বলে জানান।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার হত্যা, হত্যাচেষ্টাসহ নানা অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ২৪শর মতো মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তাসহ আসামি প্রায় দেড় লাখ। মামলার উল্লেখযোগ্য অভিযোগ হচ্ছে—আন্দোলনের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি কর্মকর্তারা এতে হুকুমদাতা, অর্থদাতা এবং পরিকল্পনাকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হত্যা মামলাগুলোর ঘটনাস্থল ও মামলার তারিখ ছাড়া এজাহারসহ সবকিছুই প্রায় অভিন্ন। কোনো কোনো মামলা হচ্ছে ঢাকায় আর আসামি হচ্ছে অন্য জেলায়। ফলে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ আসামির ক্ষেত্রে ‘হুকুমদাতা-নির্দেশদাতা ও ইন্ধনকারী’ উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে এসব মামলা প্রমাণ করে শেষ পর্যন্ত বিচার নিশ্চিত করা অনেক কষ্টকর হবে।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: মানবাধিকার কর্মী ও গুম সংক্রান্ত কমিশনের সদস্য নূর খান লিটন বলেন, গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্র করে যেসব মামলা হয়েছে, তার অনেক ক্ষেত্রেই বাদীরা আসামিদের চেনেন না। বিভিন্ন মামলার নথিপত্র, এজাহার দেখে মনে হচ্ছে, এগুলো সৃজনকৃত মামলা। এই সৃজনটা কে বা কারা করেছে, এটা একটা বিষয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মামলা করার কথা বলে, নাম বাদ দেওয়ার জন্য, নাম যোগ করার জন্য চাঁদাবাজিরও একটা বিষয় ছিল। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, এ ধরনের মামলা যারা সৃজন করেছে তাদেরই এখন আইনের আওতায় আনা দরকার।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, এটা নতুন একটা ব্যবসা শুরু হয়েছে। এমন ব্যবসা আগে আওয়ামী লীগের আমলেও ছিল। তখন একটা মামলায় শত শত বিএনপি নেতাকর্মীর নাম দিয়ে হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হতো। ওই ব্যবসাটা পুরোদমে বহাল আছে, বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, গণহত্যা মামলায় শত শত মানুষকে যেভাবে আসামি করা হয়েছে, এর তদন্ত শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যাবে। আর সঠিক আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলে এগুলোর বিচার হতে আরও বহু বছর লাগবে। মামলায় ২০০ জনের নাম থাকলে তাদের সবার বিষয়েই তদন্ত করতে হবে পুলিশকে। তিনি বলেন, এসব মামলায় দোষী ব্যক্তি যেমন আছে, তেমনি নির্দোষ মানুষ প্রচণ্ড ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আর আইনগতভাবে আমি একজনের নাম মামলায় দিলাম। আবার পরে গিয়ে বললাম আমি জানি না। ভুলে দিয়ে দিছি। আইনের চোখে এসব বিষয়ও অপরাধ।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী কালবেলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আসামির নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এখন এটা সম্পূর্ণ তদন্ত কর্মকর্তার ওপর ন্যস্ত। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে যাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাবে না তাদের খালাস দেবেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাবেন, নতুন নাম দেবেন। মূলত যে কেউ জুলাইয়ে শহীদ ও আহত বললেই মামলা হবে। আমরা মনে করি, কিছু আসামি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে সব ঘটনাই সত্য। তদন্তেই এর সুরাহা হবে।’

আইনজীবীদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মামলার আসামি করা ও নাম কাটানোর অভিযোগ নিয়ে কথা হয় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আলমের সঙ্গে। সিনিয়র এই আইনজীবী কালবেলাকে বলেন, মামলায় নাম ঢোকানো বা নাম কাটা আইনজীবীদের বিষয়ে কিছুটা তথ্য আমরা শুনছি। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য-প্রমাণ সহকারে আইনজীবী সমিতিতে অভিযোগ দিলে আমরা বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেব। বিচার করতে পারব। তবে আইনজীবীরাই যে জড়িত, এমন নয়। বাদীদের বিরুদ্ধেই অভিযোগটা বেশি। মামলায় আসামি দিয়ে পরে এফিডেভিট করে। আইনজীবীকে বলে শুনানি করতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com