অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে পড়েছেন ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে তাকসিম এ খানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল বুধবার বিকালে দুদকের মহাপরিচালক আখতার হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, অনুমোদিত পদ না থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে দুই কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামির মধ্যে আছেন ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এফসিএ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মাহমুদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রতিনিধি মো. নুরুজ্জামান, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার একেএম হামিদ, ডিএনসিসির সাবেক কাউন্সিলর আলেয়া সারওয়ার ডেইজি ও সাবেক কাউন্সিলর মো. হাসিবুর রহমান মানিক।
নানা অনিয়মের অভিযোগ ও বিতর্কের পরও তাকসিম এ খান ১৫ বছর ধরে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই মাসেই ঢাকা ওয়াসার এমডির পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এর পর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরস্পর যোগসাজশ করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত ও ঢাকা ওয়াসায় বৈধ কোনো পদ সৃষ্টি না করে এবং নিয়োগসংক্রান্ত নীতিমালা ও প্রচলিত বিধিবিধান অনুসরণ না করে নিজেদের পছন্দের দুজন ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করেছে। ওয়াসার ২৫২তম বোর্ডসভায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭-এর ৫ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়েছে। এ কারণে মামলায় বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ ৭ জন সদস্য ও চাকরি গ্রহণকারী দুজনসহ মোট ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে সুবিধাভোগী হিসেবে এক কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, এর পর ধাপে ধাপে সময় বাড়িয়ে দীর্ঘদিন এ পদে বহাল ছিলেন তাকসিম। অন্যদিকে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিয়োগবাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সহিদ উদ্দিনকে ২০২২ সালের ১৯ অক্টোবর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দুদকে।
জানা যায়, ঢাকা ওয়াসার উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম সহিদ উদ্দিন মূলত ২০১৬ সালে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরপরই ওয়াসার কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। মাসে দেড় লাখ টাকা বেতনে এক বছর চার মাস কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করেন সহিদ উদ্দিন। এর পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে তাকে দুই বছরের চুক্তিতে পরিচালক (কারিগরি) হিসেবে নিয়োগ দেন এমডি তাকসিম এ খান। অথচ ঢাকা ওয়াসার অর্গানোগ্রামে এমন কোনো পদ নেই। মন্ত্রণালয় কিংবা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়
তাকে। এর পর ধাপে ধাপে পদোন্নতি দিয়ে ডিএমডি বানানো হয় সহিদ উদ্দিনকে। একই ধরনের অভিযোগ ছিল পরিচালক (উন্নয়ন) মো. আবুল কাশেমের বিরুদ্ধেও। অর্গানোগ্রামের বাইরে অবৈধভাবে পদ সৃষ্টি করার অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে এমন নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নিয়োগ পাওয়ার চার মাস পর মন্ত্রণালয় থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি বেতন-ভাতা বন্ধ করে দাপ্তরিক সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখারও আদেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই আদেশে ১৯৯৬ সালের পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ আইন এবং পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকরির প্রবিধানমালা-২০১০-এর সংশ্লিষ্ট ধারা পরিপন্থি ও বিধিসম্মত না হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।
২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় মেয়াদ বাড়িয়ে আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে আরও তিন বছরের জন্য তাকসিম এ খানের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। এর পর থেকে তিনি সপ্তমবারের মতো মেয়াদ বাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আর নিজ কার্যালয়ে না এসে গা-ঢাকা দেন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানেন না ওয়াসার কোনো কর্মকর্তাও।
Leave a Reply