করোনা থেকে সেরে উঠলেও এর ক্ষতিকর প্রভাব শরীরে থেকে যায় অনেক দিন। পুরোপুরি সুস্থ হতে লেগে যায় অনেক সময়। অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি চুল পড়ার সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে কারো কারো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুরুতর কোনো সংক্রমণের পর চুল পড়া অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ক্ষতিকর ভাইরাসের আক্রমণ মোকাবিলা করে সেরে উঠছে আমাদের শরীর। এ ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে শরীরে অনেক ধরনের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে থাকে। ফলে করোনা থেকে সেরে উঠলেও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চুল পড়তে পারে। করোনা সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়ার পর চুল পড়তে থাকলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ এটি কয়েক মাস পর নিজ থেকেই ঠিক হয়ে যায়। চুলের বৃদ্ধি আবার আগের মতোই শুরু হয়। তবে এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
করোনার কারণে শরীরে যে চাপ পড়ে, এ কারণে চুল পড়তে পারে। মানসিক চাপও একটি বড় কারণ। এ সময় প্রতিদিন ১০০ থেকে ২০০টি চুল পড়া খুব স্বাভাবিক। তবে এই পরিমাণ চুল পড়তে থাকলে তা রোগীর কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতেই পারে। তবে এ সমস্যা সাময়িক। তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে এটি ঠিক হয়ে যায়। নতুন চুল গজিয়ে চুলের পরিমাণ আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
চুল পড়তে শুরু করলে এর কারণ জেনে নেওয়া জরুরি। এটি হতে পারে অন্য কোনো কারণেও। এ সময় সূর্যাস্ত, ঘুম, সঠিক খাবার, যোগব্যায়াম, শরীরচর্চা, মেডিটেশন ইত্যাদি মেনে চলা জরুরি। করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে নতুন চুল গজাতে শুরু করলে বুঝবেন- শরীর নিজে থেকে ভারসাম্য স্থাপন করে সাধারণ অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে ১০০টি চুল পড়া খুবই স্বাভাবিক। গ্রোথ ফেস থেকে রেস্টিং এবং এর পর শেডিং ফেস পর্যন্ত চুলের একটি সাইকেল চলে। ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট জ্বর বা অন্য কোনো কারণে আসা জ্বরের ফলে শরীরে যে প্রদাহ হয় ও চাপ বাড়ে, তা চুল শেডিং ফেসে প্রবেশ করতে বাধ্য করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম টেলোজেন ইলুভিয়াম। চুল কয়েক মাস পরই আবার আগের অবস্থায় ফিরতে শুরু করে থাকে। তবে এ সময় শরীরের প্রতি বাড়তি যত্ন নেওয়ার কিছু পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অনেক সময় এ ক্ষেত্রে হেয়ার সাপ্লিমেন্ট ও পেপ্টাইড বেজড সিরাম দেওয়া হয়। ফলে দ্রুত চুল গজিয়ে ওঠে। চুল পড়ার কারণ যদি অপুষ্টির কারণে হয়, তা হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার।
এ সময় যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন : খাবারের তালিকায় যোগ করুন পর্যাপ্ত আয়রন সমৃদ্ধ খাবার। চুলে তেলের ব্যবহার কিছুদিন বন্ধ রাখুন। নিয়মিত খান আমন্ড, আখরোট, সিদ্ধ চীনাবাদাম, চিয়া বীজ, সবুজ শাকসবজির মতো অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি খাদ্য। এটি সংক্রমণ থেকে শরীর সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন। চুলে খুশকির সমস্যা থাকলে তা দূর করুন। চুল যদি অস্বাভাবিক হারে পড়তে থাকে এবং মাথায় টাক দেখা দেয়, তা হলে যত দ্রুত সম্ভব ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। চুল ও মাথার ত্বক পরিষ্কারের জন্য মাইল্ড সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এ ছাড়া একজন ত্বক, চর্ম ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জনের পরামর্শ মোতাবেক চলা ভালো।
লেখক : চর্ম, যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট
Leave a Reply