আজ আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। দেশের গ-ি পেরিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তির বার্তা বয়ে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান অংশীদার। হাড় কাঁপানো শীত, মরুভূমির তীব্র গরম, দুর্গম পাহাড়ে বিপদ সংকুলতা উপেক্ষা করে মানুষকে নিরাপদ রাখতে জীবনবাজি রাখছেন তারা। সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন সংঘাতপূর্ণ এলাকার বিপন্ন মানুষের মাঝে। বর্তমানে পৃথিবীর ১০টি দেশে ৫ হাজার ৮১৮ বাংলাদেশি বিশ^ মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। পৃথিবীর শান্তিরক্ষায় অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি রেমিট্যান্স হিসেবে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও দেশে নিয়ে আসছেন শান্তির এই বাহকরা।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তিরক্ষী মিশনে সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্যের যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের পতাকাতলে একতাবদ্ধ হয় বাংলাদেশ। এরপর যোগ দেয় নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী। ১৯৮৯ নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে জাতিংসংঘ মিশনে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারীদের অন্যতম বাংলাদেশ।
সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১ বছরের মধ্যে চার বছর জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০১৯ সালে তৃতীয় স্থানে থাকা বাংলাদেশ ২০২০ সালে উঠে আসে দ্বিতীয় স্থানে। পরবর্তী দুই বছর ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রথম স্থানে অবস্থান করে। জানা গেছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এই বছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বিশ্বের সব শান্তিরক্ষীর অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।
আইএসপিআর জানায়, দীর্ঘ চার দশকের শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ৪৩টি দেশ ও স্থানে ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ৫ হাজার ৮১৮ শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা মিশনে আছে, যার মধ্যে রয়েছেন ৪৪৪ নারী শান্তিরক্ষী।
বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, পুলিশের ২১ হাজার ৮১৫ শান্তিরক্ষী ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে পেশাদারত্ব ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। শান্তিরক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেছেন পুলিশের ২৪ শান্তিরক্ষী। বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, সাউথ সুদান ও সেন্ট্রাল আফ্রিকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশের ১২৮ পুরুষ ও ৭১ নারীসহ ১৯৯ শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছেন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রধান অতিথি হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার সকালে ‘শান্তিরক্ষী দৌড়/র্যালি-২০২৫’ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে। চলতি বছর ২ জন আহত শান্তিরক্ষীকে সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত থাকবেন।
শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে আজ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠান ঘিরে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা পর্যন্ত রোকেয়া সরণির উড়োজাহাজ চত্বর থেকে আগারগাঁও সার্কেল পর্যন্ত সড়কটি ‘যথাসম্ভব’ পরিহার করে বিকল্প রাস্তায় চলাচলের অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে আইএসপিআর।
Leave a Reply