আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর, শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট এবং আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কাঠামোয় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন আনা হচ্ছে। কাস্টমস আইনে মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা পণ্যের জরিমানা অর্ধেকে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইমপোর্ট জেনারেল ম্যানিফেস্ট (আইজিএম) সংশোধনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম জরিমানার ৫০ হাজার টাকার বিধানটি বাতিল করে সর্বোচ্চ জরিমানার সীমা ২ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ট্যারিফের ক্ষেত্রে ১০০ পণ্যের কাস্টমস ডিউটি পুরোপুরি তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এসব পণ্যে কিছু ভ্যাট ও অন্যান্য কর বলবৎ থাকবে। আগামী ২ জুন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের জন্য অর্থ বিল ২০২৬ পেশ করার মাধ্যমে এমন প্রস্তাব আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ব্যবসায়ীদের শিপমেন্ট জটিলতা দূর করতে কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়্যারহাউস ব্যবস্থার সুযোগ চালু করারও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী বাজেট ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব হবে। যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে, বিনিয়োগ বাড়ে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। কিছু জায়গায় অনলাইন প্রক্রিয়ার ঘাটতি আছে। আমরা সেসব সমাধানেরও চেষ্টা করছি।
জানা গেছে, প্লাস্টিক পণ্য, আসবাবপত্র, তৈজসপত্রসহ বেশকিছু খাতে ভ্যাটের স্ট্যান্ডার্ড হার করার চিন্তাভাবনা চলছে। স্থানীয়ভাবে তৈরি এয়ার কন্ডিশনার ও ফ্রিজের বর্তমান সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রয়েছে। হাতে তৈরি ও মাটির তৈরি পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি অব্যাহত রাখা হতে পারে। যেসব খাতে দীর্ঘদিন ভ্যাট অব্যাহতি ছিল, সেখানে নতুন করে হার আরোপ করা হতে পারে। এ ছাড়া তুলা আমদানির ভ্যাটহার বাড়ানো হতে পারে। রডের ক্ষেত্রেও বাড়ানো হতে পারে ভ্যাট, যার প্রভাব নির্মাণ খাতে পড়বে। পাশাপাশি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎসে কর ১০ শতাংশ পর্যন্ত করা হতে পারে।
শেয়ারবাজারে ব্রোকারেজ হাউজের লেনদেনের ওপর উৎসে কর কমানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে বছরে ৩ কোটির বেশি টার্নওভার হলে দশমিক ৬ শতাংশ কর দিতে হয়- এই হার কমানো হতে পারে। নতুন কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে কর ছাড় ও শর্ত সহজ করার কথাও ভাবছে সরকার।
সূত্র আরও জানায়, চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তপূরণে সরকার প্রায় ৫০টিরও বেশি পণ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপ করেছিল। তবে গণ-আন্দোলনের মুখে কিছু ক্ষেত্রে তা প্রত্যাহার করা হয়। আসন্ন বাজেটে সেই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আরও সূক্ষ্মভাবে কর কাঠামো নির্ধারণ করা হচ্ছে।
Leave a Reply