আজকাল আমরা কম বেশি সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। একটু ওজন বেড়ে গেলেই সেই বাড়তি ওজন কমানোর জন্য আমরা ক্রমাগত চেষ্টা করে যাই। অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলার সাথে সাথে মাথার চুলও যখন পড়তে শুরু করে তখন আমরা খুব হতাশ হয়ে যাই। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে এক থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ টা পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু এর চেয়ে বেশি পড়লে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
ওজন কমানো এবং চুল পড়ার মধ্যে একটি পরোক্ষ সম্পর্ক থাকতে পারে। যখন কেউ ওজন কমানোর জন্য কঠোর ডায়েট করে বা শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না, তখন এর প্রভাব চুলের ওপর পড়তে পারে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি, জিঙ্ক, এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো পুষ্টি উপাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদি ওজন কমানোর ডায়েট ভারসাম্যপূর্ণ না হয় এবং শরীরে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি হয়, তাহলে চুলের বৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে এবং চুল পড়ে যেতে পারে।
ওজন কমানোর সাথে চুল পড়ার সম্পর্ক কি?
পুষ্টির ঘাটতি: আপনি যখনই সীমিত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করবেন, আপনার প্রোটিন ইনটেকও কিন্তু কমে যাবে। অ্যামিনো অ্যাসিডের কমতি হলে চুলের যে স্ট্রাকচারাল প্রোটিন থাকে, সেটার উৎপাদন কম হবে। ফলে প্রথমে চুল ভেঙে যাওয়া শুরু হয়, পরে আস্তে আস্তে গোড়া থেকে ঝরতে থাকে। আপনার শরীরের অভ্যন্তরীন সিস্টেমের প্রথম কাজ হচ্ছে আপনাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যে ফাংশনগুলো কার্যকর রাখা একান্ত প্রয়োজন, সেগুলোতে আগে পুষ্টি সরবরাহ করা।
যখন শরীরে হুট করে খুব সীমিত পরিমাণে প্রোটিন ইনটেক হয়, তখন আপনার চুল বা ত্বক কম প্রাধান্য পায় বলে সেখানে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছায় না। যার ফলাফল হিসেবে চুল পড়া আগের থেকে বাড়ে ও চুলের আগা ফেটে যায়!প্রোটিন, আয়রন, বায়োটিনের অভাব চুলের গোড়া দুর্বল করে।
ডায়েট: অতিরিক্ত হেয়ার ফল একটি আরেকটির সাথে কানেক্টেড, সেটি আমরা অনেকেই জানি। ক্র্যাশ ডায়েট খুব লিমিটেড ফুড আইটেমে সীমাবদ্ধ থাকে বলে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি, ফ্যাটি অ্যাসিড, জিংক, আয়রন এগুলোর চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
আর হঠাৎ করে খুব অল্প আর সিলেক্টেড খাবারে সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে মেন্টাল স্ট্রেসও পড়ে আমাদের। কি বিষয়টি রিলেট করা যাচ্ছে? স্ট্রেস ও পুষ্টির ঘাটতির কারণে চুল পড়া শুরু হয়।
স্ট্রেস: ওজন কমানোর জন্য বেশি স্ট্রেস নিলে এটি চুল পড়ার কারণ হতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের ফলে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে এবং পাচনতন্ত্রের উপর ভয়ানক চাপ পড়ে। এর ফলে আস্তে আস্তে শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করে। অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকার ফলে আমরা যাই খাই না কেন, আমাদের শরীরে পুষ্টি পায় না । তাই পুষ্টির অভাবে চুল পড়তে থাকে ।
হরমোনাল পরিবর্তন: দ্রুত ওজন কমানো শরীরে হরমোনাল ভারসাম্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা চুল পড়া বাড়িয়ে দিতে পারে। ওজন কমানোর জন্য বেশি স্ট্রেস নিলে এটি চুল পড়ার কারণ হতে পারে। খুব দ্রুত ওজন কমানো বা ওয়েট লস সার্জারির ফলাফল হিসেবে শরীরে যে নিউট্রেশনের ঘাটতি হয়, হরমোনাল চেঞ্জ আসে, ওজন নিয়ে যে স্ট্রেস আমরা নেই; সেগুলোর কারণে আমাদের শরীর অনেক সময় প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়ার একটি হচ্ছে চুল পড়ে যাওয়া।
বয়স: পুরুষ হোক বা মহিলা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে নানা পরিবর্তন ঘটতে থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চুল পড়ার প্রবণতা ও বাড়তে থাকে। হরমোনের সমস্যা থাকলেও চুল পড়া বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট খেতে হবে।
খারাপ রক্ত সঞ্চালন: পুষ্টির অভাবে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে চুলের গ্রোথ সাইকেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেহের প্রতিটি কোষের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত রক্তসঞ্চালন প্রয়োজন। আমাদের দেহে প্রায় ৬০ হাজার মাইল রক্তনালি রয়েছে। এসব রক্তনালির মধ্য দিয়েই দেহের প্রতিটি কোষে রক্ত সঞ্চালিত হয়। দেহের কোনো অংশে রক্তসঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের অভাবে পড়ে সেখানকার কোষ।
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও চুল পড়া বাড়ে । সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। নিজে থেকে কোনো পদক্ষেপ নিবেন না বা ট্রিটমেন্ট করবেন না।
চুল পড়া নিয়ন্ত্রণের উপায়
সুষম খাবার খাওয়া: পুষ্টিকর খাবার চুলের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রাখে। কয়েকটি পুষ্টিকর খাবার যেমন- ফল, সবজি, চর্বিহীন প্রোটিন ও শস্য। ভিটামিন এ, সি এবং ই, এছাড়াও, বায়োটিন, প্রোটিন, জিংক এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার চুলের বৃদ্ধি ও ফলিকল সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখে।
ওজন হ্রাস: চুল পড়ার সমস্যা কমাতে ওজন কমাতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করা শুধু ওজন কমাতে সহায়তা করে না বরং রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। যা চুলের ফলিকলে পুষ্টি সরবারহ করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মাথা মালিশ করা: চুল পড়া কমানোর অন্যতম সহজ উপায় হল নিয়মিত মাথার ত্বক মালিশ করা। এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, চুল বড় হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিয়মিত মালিশ করার ফলে মানসিক চাপ কমার কারণেও চুল পড়ার ঝুঁকি কমে।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ চুল পড়ার অন্যতম কারণ। নিয়মিত যোগ ব্যায়াম, ধ্যান বা বড় শ্বাস গ্রহণ করা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
Leave a Reply