1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

জ্ঞান চর্চায় নারী সাহাবিদের অবদান

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত। আর সেই আশরাফুল মাখলুকাতের মধ্যে নারীরা হলেন মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। শুধুমাত্র পারিবারিক জীবনই নয় বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে নারীরা তাদের মেধা ও মনন দিয়ে জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে যখন সাহাবিদের মধ্যে পুরুষদের অধিকাংশই বৈষয়িক এবং ধর্মীয় জ্ঞানে আগ্রহী ছিলেন তখন নারী সাহাবিরাও তাদের জ্ঞান চর্চায় অবদান রাখেন। ইসলামের মহান শিক্ষা কেবল পুরুষদের জন্য নয় নারীদের জন্যও সমানভাবে উন্মুক্ত ছিল।

নারী সাহাবিরা প্রমাণ করেছিলেন যে, তারা কেবল গৃহকর্ম বা পরিবার পরিচালনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তারা ধর্মীয়, সামাজিক এবং বৈষয়িক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে সমাজে ভূমিকা পালন করতেও সক্ষম। তাদের অমূল্য অবদান আজও ইসলামী জ্ঞানচর্চায় প্রেরণা হয়ে আছে।

জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে নারী সাহাবিদের মধ্যে হযরত আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা.) এর নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয়। তিনি কুরআন, হাদিস, ইসলামি আইন এমনকি রাজনৈতিক বিষয়ে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন।

হযরত আয়েশা (রা.) অধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবিদের মধ্যে একজন। কুরআনের তাফসির বর্ণনা, রসুল (সা.) এর হাদিস বর্ণনা ও হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে সারা বিশ্বে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা.) সমস্ত নারী সাহাবিদের তুলনায় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২২১০।

হযরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বলেন, আমাদের রাসুলুল্লাহ (সা.) এর  সাহাবিদের কাছে কোনো হাদিস বোঝা কষ্টসাধ্য হলে হযরত আয়েশা (রা.)-কে প্রশ্ন করে তার কাছে এর সঠিক জ্ঞান লাভ করেছি। (তিরমিজি, হাদিস ৩৮৮৩)

উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা (রা.) ৩৭৮-টি হাদিস বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও হাফসা (রা.), সাফিয়া (রা.), উম্মে হাবিবা (রা.), ফাতিমা (রা.), জুওয়াইরিয়া (রা.), আসমা বিনতে আবু বকর (রা.), উম্মে আতিয়া (রা.), ফাতেমা বিনতে কায়েস(রা.), উম্মে হানী (রা.),আসমা বিনতে ইয়াযিদ (রা) সহ প্রমুখ নারী সাহাবী বহুসংখ্যক হাদিস বর্ণনা করেছেন।

ফিকহশাস্ত্রে নারী সাহাবিদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক এতো অধিক ফতওয়া বর্ণিত হয়েছে যা একত্রিত করলে এক বৃহৎ গ্রন্থ হয়ে যেতে পারে।

অনুরূপ, উম্মে সালমা (রা) কর্তৃক বর্ণিত ফাতওয়া সমূহ একখানা পুস্তিকার আকার ধারণ করতে পারে।

ফতোয়া দানকারী নারী সাহাবিদের মধ্যে হাফসা (রা.),উম্মে হাবিবা (রা.), উম্মে আতিয়া (রা.), সাফিয়া (রা), লায়লা বিনতে কায়েস (রা.), উম্মে দারদা (রা.), যায়নাব বিনতে উম্মে সালামা (রা.), আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ফারায়েয (মৃতব্যক্তির ওয়ারিশ সম্পর্কিত বণ্টননীতি) বিষয়ে হযরত আয়েশা (রা.) সহ অন্যান্য নারী সাহাবিরাও পারদর্শী ছিলেন। জীবনের সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক নারী-পুরুষ নারী সাহাবিদের নিকট শরণাপন্ন হতেন।

এসব মহীয়সী নারীরা তাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শীতার দ্বারা মুসলিম উম্মাহকে সকল সমস্যার সমাধান দিয়ে সাহায্য করেছেন।

অনেক নারী সাহাবী আল কুরআনুল কারিমের দারস দিতেন। রাবিতা বিনতে হায়্যান, উম্মে ইমাম বিনতে হারিসা, হিন্দ বিনতে উবায়েদ, উম্মে সাদ ইবনে রবী (রা) সহ প্রমুখ নারী সাহাবি পবিত্র কুরানের বেশিরভাগ আয়াতের হাফিজা ছিলেন।

আরবি সাহিত্যে নারী সাহাবিদের অতুলনীয় অবদান রয়েছে। হযরত খানসা বিনতে আমর ইবনুশ শারীদ (রা.) একজন বিখ্যাত কবি ও সাহাবি ছিলেন। আরবি সাহিত্যে নারী কবিদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও বিশেষভাবে খ্যাত। তাঁর ভাই শাখর ইবনে আমর এবং মুয়াবিয়া ইবনে আমর -এর মৃত্যুতে শোকগাথা কবিতা রচনা করে আরবি সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। ইসলাম নিয়ে যেসব জাহেলি কবি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা রচনা করতো, তিনি কবিতা দিয়েই সেগুলির জবাব দিতেন।

এছাড়া হযরত আয়েশা (রা) কবিতা রচনা করতেন। তিনি বহু কবিতা কণ্ঠস্থ করেছিলেম এবং কবিতা আবৃত্তিও করতেন। তিনি একজন বিদুষী কবি, ঐতিহাসিক এবং বক্তাও ছিলেন। অন্যদের মধ্যে সাওদা, উমামা, হিন্দ বিনতে হারিস, উম্মে আয়মান, মায়মুনা, রুকাইয়া, আতিকা বিনতে যায়েদ, কসবা বিনতে রাফে, বালাবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহা সহ প্রমুখ নারী সাহাবি কবিতায় অতিশয় খ্যতি লাভ করেন।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক প্রতিভাবান নারী সাহাবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। হযরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) এর শাসনামলে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে হযরত আয়েশা (রা.) এর সাথে পরামর্শ করতেন এবং তার সিদ্ধান্তকে অত্যাধিক গুরুত্ব দিতেন। শিফা বিনতে আবদিল্লাহ (রা.) এর সিদ্ধান্তকে হযরত উমর (রা.) অনুমোদন করতেন। তিনি নারী বিষয়ক কোনো সরকারি কাজের দায়িত্ব শিফা (রা.) কে দিতেন।

অনেক নারী সাহাবি ইলমে ‘তিব্ব’ তথা চিকিৎসা বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে ইলমে তিব্ব বিদ্যায় পারদর্শী নারীরা মুজাহিদ সৈন্যদের সেবায় নিয়োজিত হতেন। হযরত শিফা (রা.) চর্মরোগের চিকিৎসা জানতেন যা তিনি নবিপত্নী হযরত হাফসা (রা.)-কেও শিখিয়েছিলেন।

রাসুল (সা.) অসুস্থ হলে আরবের তিব্ব বিদ্যায় বিশেষজ্ঞরা তার চিকিৎসার ব্যপারে যা আলোচনা করতেন হযরত আয়েশা (রা.) তাই মনে রাখতেন। তিনি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক সম্পর্কে শিক্ষালাভ করেন এবং পরবর্তীতে সেসব বিষয়ে নারীদেরকে শিক্ষা দেন।

ইসলামের ইতিহাসে নারী সাহাবিদের অবদান লিখে শেষ করার মতো নয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা যে  বিস্ময়কর অবদান রেখেছেন তার মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে তারা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তাদের এ অবদান আজও আমাদের সমাজের নারী জাতিকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে।

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার সকল নারীকে তাদের আদর্শ গ্রহণ করে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করার তাওফিক দান করুক, আমিন।

লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com