1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ০৭:০৫ অপরাহ্ন

আজ পবিত্র হজ লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাত ময়দান

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০২৫

লাখো কণ্ঠে সৌদি আরবের মক্কার আরাফাতের ময়দানে আজ ধ্বনিত হবে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ, আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার। আজ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন সারা বিশ্ব থেকে জড়ো হওয়া লাখো মুসলমান। আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আরাফাতে অবস্থানই হলো হজ (মুসনাদে আহমদ ৪/৩৩৫)।

এর আগে মক্কার মিনায় হাজীদের অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিশ্বের লাখ লাখ মুসলিম সেখানে উপস্থিত হন। হজের অংশ হিসেবে হাজীরা ৮ থেকে ১২ জিলহজ মিনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মক্কায় অবস্থান করবেন।

হজ মহান আল্লাহর একটি বিশেষ বিধান। হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান সব মুসলমান পুরুষ ও নারীর ওপর হজ ফরজ। জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনে (মূলত ৯ জিলহজ) হজের নিয়তসহ ইহরাম পরিধান করে আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা এবং পবিত্র কাবা শরিফ তাওয়াফ করা হজ।

সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে গেলে অত্যন্ত বিনয়ী ও তাকওয়ার সঙ্গে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন হাজীরা। এ দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম, এ জন্যই আরাফায় আসেন তারা। কিবলার দিকে মুখ করে দুই হাত উঁচু করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ক্ষমা চান, দয়া কামনা করেন ও মনের আকাক্সক্ষা আল্লাহ তাআলার কাছে ব্যক্ত করেন। আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ?, দরুদে ইবরাহিম, তালবিয়া, তাকরির, জিকির, ইস্তিগফার ও দোয়া করেন। নিজের জন্য ও পরিবার-আত্মীয়স্বজনের জন্য, তারপর প্রতিবেশী-পরিচিতজনদের জন্য এবং পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করেন হাজীরা।

হাদিসে বর্ণিত রয়েছে- রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে দূরে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর প্রকৃত হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়’ (বুখারি : ১/২০৬)।

পবিত্র কাবাঘর প্রদক্ষিণ, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান, সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে দৌড়ানো, মিনার জামারায় পাথর নিক্ষেপ, আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি ইত্যাদি হজের ইবাদত। এর প্রতিটি ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও ঐতিহ্য। এগুলোর সঙ্গে হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানি, আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা-বিশ্বাস, আনুগত্যের শিক্ষা রয়েছে।

আজ সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত সব হাজী আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকেন। আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের প্রতিদানস্বরূপ আল্লাহ হাজীদের নিষ্পাপ ঘোষণা করেন। হাদিসে আছে- ‘আরাফার দিন আল্লাহ এত বেশি পরিমাণ জাহান্নামিকে অগ্নি থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য কোনো দিবসে দেন না (মুসলিম)।’

আরাফাতের ময়দানে মসজিদে নামিরাহ থেকে আজ হজের খুতবা দেওয়া হবে। মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দান। আজ আরাফাতের ময়দানে খুতবার পর জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন হাজীরা।

আরাফা থেকে হাজীরা চলে যাবেন মুজদালিফায়। সেখানে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন। মিনায় এসে বড় শয়তানকে পাথর মারা, দমে শোকর বা কোরবানি দেওয়া ও মাথা মু-ন বা চুল ছেঁটে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ি করবেন। সেখান থেকে তারা আবার মিনায় ফিরবেন। পরে মিনায় ১১ ও ১২ জিলহজ থেকে তিনটি (বড়, মধ্যম, ছোট) শয়তানকে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করবেন। সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ি তওয়াফের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

গত শুক্রবার সৌদি আরব সরকারের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে আশা হজযাত্রীরা মক্কা নগরে পৌঁছেছেন। এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় ৪০টির বেশি সরকারি সংস্থা এবং আড়াই লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী মোতায়েন করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ভয়াবহ গরমে কয়েকশ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল। তাই এবারের প্রস্তুতিতে তাপজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় জোর দেওয়া হয়েছে। সৌদি হজমন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ জানিয়েছেন, এবার মক্কায় ছায়াযুক্ত এলাকার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) করা হয়েছে। মোতায়েন করা হচ্ছে অতিরিক্ত কয়েক হাজার চিকিৎসক। চার শতাধিক শীতলীকরণ ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে।

এবার হজে খুতবা দেবেন মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়খ ড. সালেহ বিন হুমাইদ। এই খুতবা বাংলাসহ ২০টি ভাষায় অনুবাদ করা হবে।

এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতেই হজযাত্রীরা এহরাম বেঁধে মক্কা থেকে মিনার উদ্দেশে রওনা দেওয়া শুরু করেন। গতকাল বুধবার জোহরের আগেই সব হজযাত্রী মিনায় নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নেন।

‘সৌদি গেজেট’ রিপোর্ট সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের পবিত্র স্থান মিনা এখন ঝলমল করছে। বুধবার সকাল থেকে ১৫ লাখেরও বেশি হজযাত্রী বিস্তৃত তাঁবু নগরীতে অবস্থান করেন। তাদের ৯ জিলহজ, বৃহস্পতিবার ভোরে আরাফাতের উদ্দেশে মিনা ত্যাগ করার কথা।

মিনার তাঁবুগুলো আগুন প্রতিরোধী এবং হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সজ্জিত। তাঁবুর শহর এমন একটি এলাকাজুড়ে বিস্তৃত, যেখানে ২৬ লাখের বেশি হজযাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

মক্কা থেকে বাংলাদেশ হজ অফিসের সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে ২২৪টি ফ্লাইটে সর্বমোট ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত একজন মহিলাসহ ১৭ জন মারা গেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com