1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

মুসলিম সন্তানের জন্য যেসব নাম রাখা হারাম

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫

সন্তানের জন্মের পর নাম রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। নাম শুধু পরিচয়ের উপায় নয়, এটি তার সত্ত্বা ও জীবনধারার প্রতিচ্ছবিও বটে।

একটি নাম মানুষের সঙ্গে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত থেকে যায় কেবল তাই নয়, মৃত্যুর পরও তার পরিচয়ে রয়ে যায় সে নাম।

এজন্য ইসলাম নাম রাখাকে শুধু সামাজিক প্রয়োজন নয় বরং ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবেও বিবেচনা করে।

কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক মুসলিম পরিবারে এমনসব নাম সন্তানের জন্য রাখা হচ্ছে, যেগুলো শুনে বুঝাই যায় না যে সে মুসলমান কিনা।

কেউ কেউ কোরআন থেকে যেকোনো শব্দ বেছে নিয়ে সন্তানের নাম রাখেন, ভেবে দেখেন না সেটি আদৌ নাম হিসেবে গ্রহণযোগ্য কি না।

অথচ কোরআনে ফেরাউন, আবু লাহাব, হামান, কারুন ও ইবলিশের মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ধিক্কৃতদের নামও রয়েছে। কেবল কোরআনের শব্দ হলেই তা ইসলামসম্মত নাম হবে না।

ইসলামে নাম রাখার নিয়ম কী?

ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, নবজাতকের তৃতীয় অথবা সপ্তম দিনে সুন্দর ও অর্থবোধক একটি নাম রাখা সুন্নত।

এই দায়িত্ব মূলত পিতা-মাতার হলেও আত্মীয়স্বজনের পরামর্শ এবং অভিজ্ঞ আলেমের সহায়তা গ্রহণ করাও উত্তম।

হাদিসে উল্লেখ আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের প্রতি পিতার অন্যতম দায়িত্ব হলো তার জন্য একটি উত্তম নাম রাখা এবং তাকে সঠিকভাবে লালন-পালন করা।

খারাপ অর্থের নাম কেন পরিহারযোগ্য?

একটি নাম শুধু পরিচয়ের প্রতীক নয়, তা ব্যক্তির মানসিকতা ও চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে।

যেমন, সাহাবি সাঈদ ইবনুল মুসাইব (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার দাদার নাম ছিল ‘হাজান’ (অর্থ: শক্ত জমি)।

রাসূল (সা.) সে নাম পরিবর্তন করে ‘সাহল’ (অর্থ: কোমল জমি) রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তার দাদা নাম পরিবর্তন করেননি।

পরবর্তীতে দেখা যায়, তাদের বংশে রুঢ়তা ও কঠোরতার প্রবণতা থেকে গেছে।

একইভাবে হুদায়বিয়ার সন্ধিতে কাফেরদের পক্ষ থেকে যিনি প্রতিনিধিত্ব করেন তার নাম ছিল ‘সুহাইল’ (অর্থ: সহজকারী)।

নবীজী (সা.) তার নাম শুনে বলেন, “সুহাইল তোমাদের কাজ সহজ করে দিতে এসেছেন।”

অর্থাৎ নামের ইতিবাচক প্রভাব হাদিসে পরিস্কারভাবে উঠে এসেছে।

মা-বাবার নাম মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখা কি জরুরি?

অনেকে সন্তানের নামের সঙ্গে মা বা বাবার নাম যুক্ত করে দিতে ভালোবাসেন। ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, এটি বাধ্যতামূলক নয়।

নামের সৌন্দর্য ও অর্থবোধকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে বংশ পরিচয়ের স্বার্থে সন্তানের নামের সঙ্গে পিতার নাম যুক্ত করা উত্তম।

হাদিসে বলা হয়েছে, কিয়ামতের দিন মানুষকে তাদের ও তাদের পিতার নাম দিয়ে সম্বোধন করা হবে।

যেমন বলা হবে, ‘অমুকের ছেলে অমুক।’ তাই পিতার নামসহ পরিচিতি গ্রহণ করা ইসলামী ঐতিহ্যের অংশ।

ইসলামে ‘আবদ’ (অর্থ: বান্দা) শব্দটি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ব্যবহারযোগ্য। যেমন: আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান।

এগুলো আল্লাহর প্রিয় নামগুলোর মধ্যে অন্যতম। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হলো ‘আব্দুল্লাহ’ ও ‘আব্দুর রহমান’। কারণ এতে আল্লাহর দাসত্বের স্বীকৃতি রয়েছে।

তবে আমাদের সমাজে অনেকেই না জেনে ‘আবদ’ শব্দটি আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর সঙ্গে যুক্ত করে থাকেন, যেমন: আব্দুল কালাম, আব্দুর রাসূল, আব্দুল হাজার ইত্যাদি।

এগুলোর অর্থ হয় বক্তব্যের দাস, রাসূলের গোলাম কিংবা পাথরের বান্দা যা ইসলামসম্মত নয়। সাহাবিদের মধ্যেও কারো কারো এমন নাম থাকলে রাসূল (সা.) তা পরিবর্তন করে দিয়েছেন।

ধর্মীয় পরিচয় লুকায় এমন নাম কেন পরিহারযোগ্য?

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে অনেক নামই ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ করে না। যেমন: বাবু, খোকা, খোকন, মানিক, রতন, রাজা, বাদশা ইত্যাদি। কেউ কেউ প্রকৃতি অনুসরণে সন্তানের নাম রাখেন আকাশ, নদী, সাগর, বর্ষা, চৈতি ইত্যাদি।

আবার কিছু নামের অর্থই স্পষ্ট নয়,যেমন: বুলেট, সনেট, বল্টু, পল্টু। এসব নাম ধর্মীয়, অর্থবোধক কিংবা শালীনতার মানদণ্ডে পড়ে না।

কোরআন থেকে শব্দ নিলে নাম হতে পারে?

অনেকেই ভাবেন, কোরআনের যেকোনো শব্দ দিয়ে সন্তানের নাম রাখা যায়। যেমন কেউ নাম রাখেন ‘জিদনি’ বা ‘ইলমা’, যেগুলো কোরআনের আয়াত ‘রব্বি জিদনি ইলমা’ (অর্থ: হে আমার প্রভু, আমাকে জ্ঞানে বৃদ্ধি দিন) থেকে নেওয়া।

কিন্তু এগুলো নাম নয়, দোয়া বা বাক্যাংশ। এগুলো ব্যক্তির নাম হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং, কোরআন বা হাদিস থেকে যেকোনো শব্দ পছন্দ করার আগে অভিজ্ঞ আলেমের কাছে পরামর্শ নেয়া জরুরি সেই শব্দটি নাম হিসেবে গ্রহণযোগ্য কি না, তার অর্থ কী এবং তা ইসলামী পরিপ্রেক্ষিতে কতটা উপযুক্ত।

সন্তানের জন্য একটি সুন্দর, অর্থবোধক ও ইসলামসম্মত নাম রাখা প্রতিটি পিতামাতার দায়িত্ব।

কেবল শব্দের সৌন্দর্য নয়, এর অর্থ, প্রভাব এবং ধর্মীয় প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, একটি নাম সন্তানের সারাজীবনের পরিচয় বহন করে, এমনকি মৃত্যুর পরও।

তাই নাম রাখার ক্ষেত্রে হালকাভাবে না ভেবে সচেতনতা ও জ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া উত্তম। মহান আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে পথ চলার তৌফিক দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com