1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন

চাপ প্রদানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সতর্কবার্তা ইরানের

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪

ইরানের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বলেন, তার সরকার জাতীয় স্বার্থ এবং শান্তির পূর্বশর্তগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘সকল দেশের সাথে সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য’ তৈরি করবে। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে জোর দিয়ে বলেন, তার দেশ চাপ প্রদানে কোনো সাড়া দেবে না।

মাসুদ পেজেশকিয়ান শুক্রবার রাতে দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেহরান টাইমস-এ ‘নতুন বিশ্বে আমার বার্তা’ লিখেন। এতে তিনি সর্বসাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রশংসা করেন যা ‘উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করেছে’ এবং ‘আমার প্রচারাভিযানের সময় আমি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম’ তা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন।

পেজেশকিয়ান ৬৯ বছর বয়সী হার্ট সার্জন এবং দীর্ঘদিনের আইনপ্রণেতা, মে মাসে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য কট্টরপন্থী সাবেক পারমাণবিক আলোচক সাঈদ জালিলিকে ৫ জুলাইয়ের ফিরতি নির্বাচনে হারিয়ে জয়লাভ করেন।

তিনি তার বার্তায় বলেন, তার প্রশাসন প্রতিবেশীদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে অগ্রাধিকার দেবে এবং আরব দেশগুলোকে গাজা ভূখণ্ডে চলমান ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ‘সমস্ত কূটনৈতিক সুবিধা’ ব্যবহার করার আহ্বান জানান। যুদ্ধটি ৭ অক্টোবর শুরু হয়।

ইরান দীর্ঘদিন ধরে বিদ্রোহী গোষ্ঠী হামাসকে সমর্থন করে এসেছে এবং পেজেশকিয়ান বুধবার গোষ্ঠীটির প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে একটি বার্তায় ‘ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের’ প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন প্রকাশ করেন।

শুক্রবারের চিঠিতে পেজেশকিয়ান রাশিয়া এবং চীনের সাথে তার দেশের সম্পর্কের প্রশংসা করেন, যারা কঠিন সময়ে সব সময় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, মস্কো একটি মূল্যবান কৌশলগত মিত্র এবং তার সরকার দেশটির সাথে দ্বি-পক্ষীয় সহযোগিতা প্রসারিত করবে। তিনি চলমান যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে উদ্যোগসমূহ সমর্থন করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন।

প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি বেইজিংয়ের সাথে সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেয়ার জন্য আগ্রহী এবং সাত বছরের কূটনৈতিক উত্তেজনার পর ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য একটি চুক্তির মধ্যস্থতার জন্য দেশটির প্রশংসা করেন।

পেজেশকিয়ান বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের ওঠা-নামা সত্ত্বেও তিনি পারস্পরিক শ্রদ্ধার নীতির ভিত্তিতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে গঠনমূলক সংলাপে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী।

২০১৮ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে। এটি একটি পারমাণবিক চুক্তি যাতে রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন থেকে পাশ্চাত্যের শক্তিগুলো ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে তার পারমাণবিক কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং ইউরেনিয়াম নজিরিবিহীনভাবে ৬০ শতাংশ স্তরে সমৃদ্ধ করা, অস্ত্র তৈরি করার গ্রেড স্তরে উন্নীত করার জন্য অভিযুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর, প্রধানত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

পেজেশকিয়ান যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পরে ইউরোপীয় দেশগুলোকে কার্যকর ব্যাংক লেনদেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে কোম্পানিগুলোর কার্যকর নিরাপত্তা এবং ইরানে বিনিয়োগের প্রচার নিশ্চিত করার জন্য করা প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার অভিযোগ করেন। তবে তিনি বলেন, ইরান ও ইউরোপের মধ্যে সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে।

এরপরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সম্বোধন করেন, ‘চাপের জবাব দিতে’ তার দেশের প্রত্যাখ্যানের ওপর জোর দেন এবং বলেন, ‘ইরান ২০১৫ সালে জেসিপিওএ-তে সৎ বিশ্বাস নিয়ে যোগদান করে এবং আমাদের বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে।’

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পিছিয়ে আসার পর তা আমাদের অর্থনীতির শত শত বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে এবং নিষেধাজ্ঞাটি ইরানের জনগণের ওপর, বিশেষত কোভিড মহামারী চলাকালীন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হয়েছে।’

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘পাশ্চাত্যের দেশগুলো এই অঞ্চল ও বিশ্বে শুধু উত্তেজনা কমাতে ও পরিচালনা করার ঐতিহাসিক সুযোগই হাতছাড়া করেনি, বরং অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তিকেও মারাত্মকভাবে অবমূল্যায়ন করেছে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইরানের প্রতিরক্ষানীতিতে পারমাণবিক অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত নয়।’

ইরান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সাথে পরোক্ষ আলোচনা করেছে, যদিও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমাবদ্ধ করার জন্য কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

পেজেশকিয়ান তার খোলা চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে ইরানের আঞ্চলিক সামরিক তৎপরতার স্থপতি জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার মাধ্যমে ‘শত্রুতা’ বাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগও করেন। কাসেম সোলেইমানি ২০২০ সালে প্রতিবেশী দেশ ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় নিহত হন।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আঞ্চলিক অস্থিরতা এবং উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের পাশাপাশি ইরানের প্রেসিডেন্ট স্থানীয়ভাবে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। তাকে এখন ক্ষুব্ধ জনসাধারণকে বুঝাতে হবে যে তিনি তার প্রতিশ্রুত পরিবর্তনগুলো প্রয়োগ করতে পারবেন, যার অনেকগুলোই নিষেধাজ্ঞা, অপ্রত্যাশিত উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্বের কারণে আর্থিক চাপের মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া তাকে একটি প্রশাসনের সাথেও মোকাবিলা করতে হবে যা এখনো অনেকাংশে কট্টরপন্থীদের হাতে শাসিত।

পেজেশকিয়ান প্রেসিডেন্ট পদের জন্যে তার প্রচারণার সময় থেকে নিজেকে অন্যান্য মধ্যপন্থী এবং সংস্কারবাদী ব্যক্তিত্বের সাথে সংযুক্ত করেছেন। তার প্রধান সমর্থক হলেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ, যিনি ২০১৫ সালের জেসিপিওএ চুক্তিটি করেন। পেজেশকিয়ান জারিফকে অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রশাসনটির কৌশলগত কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। বিশেষজ্ঞ এবং উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে গঠিত কাউন্সিলটি মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের মূল্যায়ন এবং নেতৃত্বের নিরবচ্ছিন্ন হস্তান্তর নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করবে।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com