রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য হাঙ্গেরির নেতা ভিক্টর অরবান মস্কোতে গিয়ে পৌঁছেছেন বলে অরবানের প্রেস প্রধান শুক্রবার জানান। দু’বছরেরও বেশি সময় আগে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর এটি হচ্ছে একজন ইউরোপীয় নেতার রাশিয়ায় এক বিরল সফর।
অরবানের এই সফরের কয়েকদিন আগে তিনি একই ধরনের অঘোষিত সফরে ইউক্রেনে যান। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকির সাথে বৈঠক করেন এবং প্রস্তাব দেন যে ইউক্রেন যেন অবিলম্বে রাশিয়ার সাথে অস্ত্রবিরতিতে সম্মতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে।
ব্যাপকভাবে মনে করা হয়, সব ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্ক খুবই উষ্ণ এবং তিনি ইউক্রেনকে সাহায্য করার এবং এই যুদ্ধের কারণে মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ইইউর’ সব প্রচেষ্টাকে আটকে দিয়েছে অথবা বিলম্বিত করেছে কিংবা খাটো করে দেখেছে। তিনি ইউক্রেনে বৈরিতা বন্ধ করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি উত্তাপন করেছেন কিন্তু কখনো এমন কোনো রূপরেখা দেননি যাতে দেশটির আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা সম্পর্কে কিছু বুঝা যায়।
এই অবস্থান হাঙ্গেরির ইইউ ও ন্যাটো মিত্রদের হতাশ করেছে কারণ তারা সকলেই রাশিয়ার এই আক্রমণকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে।
শুক্রবার এক ইমেইলে অরবানের প্রেস চিফ বার্টালান হাভাসি বলেন, হাঙ্গেরির নেতার এই সফর হচ্ছে, ‘তার শান্তি মিশনের অংশ’- রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুরোদমে ইউক্রেনের উপর আক্রমণ চালানোর সময় থেকে লোকরঞ্জনকারী এই নেতার শান্তিরক্ষাকারী হিসেবে প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হচ্ছে। হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজার্তো মস্কোর এই সফরে যুক্ত হয়েছেন বলে ফেইসবুকের একটি পোস্টে জানানো হয়েছে।
এই মাসের শুরু থেকে ছয় মাসের জন্য হাঙ্গেরি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিষদের প্রেসিডেন্টের পদ গ্রহণ করেছে, পালাক্রমিক এই ভূমিকাটি আনুষ্ঠানিক যা এই ব্লকের নীতি ও আলোচ্যসূচি নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। অরবান বলেন যে- তিনি তার দেশের এই প্রেসিডেন্টের সময়টাতে ইউক্রেনের লড়াই বন্ধের পক্ষে কাজ করে যাবেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দ্যমিত্রি পেসকভ শুক্রবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের এক সংবাদদাতাকে বলেন যে- অরবান ও পুতিনের বৈঠকের সময়ে আলোচ্যসূচিতে ইউক্রেন থাকবে।
পুতিনের কাছে যাবার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়েনের কর্মকর্তারা অরবানের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক বিবৃতিতে বলেন, মস্কোতে অরবানের এই সফর ‘হাঙ্গেরি ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পৃথক এক পরিকাঠামোর মধ্যে ঘটছে’।
বোরেল বলেন, ‘মস্কো সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রী অরবান ইইউ কাউন্সিলের কাছ থেকে কোনো নির্দেশ পাননি। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসী যুদ্ধ সম্পর্কে ইইউ’র অবস্থান ইউরোপীয় কাউন্সিলের বহু সিদ্ধান্তেই প্রতিফলিত হয়েছে। আর সেই অবস্থানের মধ্যে রয়েছে ইইউ ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের মধ্যে কোন রকম সরকারি যোগাযোগ পরিহার করার বিষয়টি। সুতরাং কোনোভাবেই হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করছেন না।
তিনি আরো বলেন, পুতিনকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত দোষী সাব্যস্ত করেছে এবং জোর করে শিশুদের ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় শিশুদের পাঠানোর ব্যাপারে তার ভূমিকার জন্য তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে মস্কোর উদ্দেশে রওয়ানা হবার আগে হাঙ্গেরির রাষ্ট্র পরিচালিত বেতারে অরবান বলেন যে- তিনি এটা জানেন যে তার দেশের ইইউ’র সদস্যতা, ‘তাদেরকে কারো পক্ষে মধ্যস্থতা করার অধিকার দেয় না’।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা
Leave a Reply