গাজা ভূখণ্ডের দক্ষিণাঞ্চলের এক বিরাট সংখ্যক লোককে ওই অঞ্চল ছাড়ার ইসরাইলি আদেশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। জাতিসঙ্ঘ বলছে, এর ফলে হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সংবাদদাতাদের বলেন, ‘গতকাল খান ইউনিস ও রাফার ১১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা খালি করার যে আদেশ দেয়া হয়েছে তাতে গাজা ভূখণ্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। গত অক্টোবরের আদেশের পর এটি হবে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে অন্যত্র সরে যাবার আদেশ। ওই সময়ে সেখানকার অধিবাসীদের গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে সরে যেতে বলা হয়েছিল।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী জাতিঙ্ঘের দফতর ইউএনআরডব্লিউএ‘র হিসেব মতে, এই আদেশ যখন জারি করা হয় ওই সময়ে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ লোক বাস করতেন।
দুজারিক বলেন, ওই সমস্ত এলাকার লোকেরা এখন এমন সব এলাকায় পুনর্বাসিত হচ্ছে যেখানে ‘বেছে নেয়ার কিছু নেই’। সেখানেতো বসবাসের কোনো স্থান নেই, নেই কোনো পরিষেবা কিংবা সেখানেই থেকে যেতে হবে যেখানে লড়াই হবে।
তিনি বলেন, নতুন যে স্থানটি ত্যাগ করতে বলা হয়েছে সেখানে ৯০টিরও বেশি স্কুল রয়েছে, যার বেশির ভাগে রয়েছেন বাস্তুচ্যূত লোকজন। ওই অঞ্চলে রয়েছে চারটি চিকিৎসা কেন্দ্রও।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গলবার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য সর্বসাম্প্রতিক নির্দেশ দেয়ার এক দিন পরই ইসরাইল খান ইউনিসের ওপর বোমা হামলা চালায়।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মঙ্গলবার জানিয়েছে, ইসরাইলি বসতি লক্ষ্য করে ২০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল, খান ইউনিসের এমন একটি এলাকায় রাতভর তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। তাছাড়া, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের রাফা শহরেও বিমান হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইলি স্থল বাহিনীও গাজার মধ্যাঞ্চলে হামাসের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
ইসরাইল সাধারণত কোনো সামরিক অভিযানের আগে গাজার কিছু কিছু অঞ্চল থেকে ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলে। ইসরাইল বলে এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধ থেকে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান। এই স্থান ত্যাগ এবং লড়াই সব মিলিয়ে জনগণকে নিরাপত্তার জন্য বহুবার পালাতে হয়েছে।
ওই খালি করার অঞ্চলে বসবাসকারী আহমাদ নাজ্জার সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ওই স্থান খালি করার আদেশের পর জনগণের মনে আশঙ্কা এবং প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে’। তিনি দেখছেন, ‘বিশাল সংখ্যক লোকজন স্থানচ্যূত হচ্ছেন’।
ত্রাণ পরিস্থিতি
গাজার জন্য মানবিক ও পুনর্নিমাণ বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের ঊর্ধ্বতন সমন্বয়ক সিগরিড কাগ জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেন যে- মে মাসের শুরুতে রাফায় ইসরাইল তার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে গাজায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশ ও বিতরণের পরিমাণ ‘লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে’।
তিনি বলেন, ‘সামরিক তৎপরতা এবং গাজার অভ্যন্তরে নিরাপদ পথের অভাবে মানব্কি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।’
কাগ বলেন, জাতিসঙ্ঘ ইসরাইলকে বলেছে, নিরাপদে ত্রাণ বিতরণের জন্য একটা সমাধান খুঁজে বের করতে। ইসরাইল তার প্রতিশ্রুতি পালন করছে না, এমন অভিযোগের সাথে ইসরাইল সহমত নয় এবং বলছে যে- বিভিন্ন প্রবেশ পথ থেকে তারা গাজায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যদিও সদিচ্ছা এবং প্রতিশ্রুতি মেনে নেয়া যেতে পারে তবুও একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য পরিবর্তন ও অগ্রগতি হচ্ছে গাজায় ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ও তাদের ভালো থাকার বিষয়টি।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা
Leave a Reply