1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪, ০৫:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

নবীজীর বিদায় হজের ভাষণ

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪

দশম হিজরির জিলকদ মাসের পঁচিশ তারিখ শনিবার নবীজী হজ করার উদ্দেশে সাহাবিদের নিয়ে মক্কা অভিমুখে রওনা করলেন। মক্কা পৌঁছে নির্ধারিত দিনগুলোতে হজের কার্যাবলী সুস¤পন্ন করেন। অতঃপর জিলহজ মাসের ১০ তারিখ কোরবানির দিন মিনা প্রান্তর মতান্তরে আরাফার ময়দানে সাহাবিদের উদ্দেশে এক-ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন। ইতিহাসের পাতায় যা হাজ্জাতুল বিদা, হাজ্জাতুল বালাগ ও হাজ্জাতুল ইসলাম নামে অখ্যায়িত।

আল্লাহর নাম ও প্রশংসায় ভাষণের সূচনা
ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ভাষণের শুরুতে নবীজী আল্লাহর নাম নেন এবং তার প্রশংসা করেন। আমাদের উচিত প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহর নাম ও প্রশংসা দিয়ে শুরু করা। যাতে কাজটি বরকতপূর্ণ হয়। অন্যথায় তা বরকতশূন্য হয়। হাদিসে এসেছে, নবীজী বলেন, প্রত্যেক বরকতময় কাজ যা বিসমিল্লাহ ছাড়া শুরু করা হয়, তা অস¤পূর্ণ থাকে। (জামেউস-সগির ২:১৫৮) অন্য হাদিসে এসেছে যা আল-হামদুলিল্লাহ ছাড়া শুরু করা হয় তা লেজ-কাটা বরকতশূন্য হয়। (আবু দাউদ : ৪৮৪০)

মানুষের জীবন-সম্পদ ও সম্মানহানি নয়
ইবনে আব্বাস রা: বলেন, ভাষণের শুরুতে নবীজী সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, হে লোক সকল! আজকের দিনটি কোন দিন? তারা বললেন, এটি সম্মানিত দিন। নবীজী বললেন, এটি কোন শহর? লোকেরা বললেন, এটি সম্মানিত শহর। নবীজী আবার বললেন, এটি কোন মাস? লোকেরা বললেন, সম্মানিত মাস। এবার তিনি বললেন, তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের ইজ্জত-সম্মান তোমাদের জন্য তেমনি সম্মানিত ও হারাম যেমন সম্মানিত ও হারাম এদিন, এ মাস এবং এই শহর। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বলেন। (বুখারি : ১৭৩৯)

মুসলিম হত্যা কুফুরি কাজ
অন্যায়ভাবে কোনো মুমিন মুসলিমকে হত্যা করা কুফুরি কাজ। ইসলামে যার শাস্তি খুবই ভয়াবহ। নবীজী সেদিনের ভাষণে বলেছিলেন, তোমরা আমার ইন্তেকালের পর একে-অন্যের ঘাড়ে আঘাত (হত্যা) করে কাফের হয়ে যেও না। (নাসাঈ : ৪১২৭) অন্য একটি হাদিসে এসেছে, নবীজী বলেন, মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকি (গোনাহের কাজ) আর তাকে হত্যা করা কুফুরি। (বুখারি : ৪৮)

সুদ বন্ধে আইন জারি
ভ্রাতৃত্বপূর্ণ, সৌহার্দ্যময় সমাজ ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে সুদ অন্যতম প্রধান অন্তরায়। সুদের কারণে সুদি-মহাজনেরা ফুলে- ফেঁপে কলাগাছ বনে যায়। বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হয়। আর গরিবরা সুদের গ্যাড়াকলে পিষ্ট হয়ে আরো নিঃস্ব হয়। তাই আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন। কুরআনে এসেছে, আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। (সূরা বাকারা : ২৭৫) সেদিন নবীজী উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, জেনে রাখো! আজ থেকে জাহেলি যুগের সব ধরনের সুদকে বাতিল করা হলো। তোমরা শুধু মূলধন পাবে। তোমরা জুলুম করো না তাহলে তোমাদের ওপরও জুলুম করা হবে না। (আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া ১ : ৬৪০)

রোগ হলে শেফাও আছে
আল্লাহ বান্দাকে দেয়া প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রেখেছেন। মানুষের প্রতিটি পেরেশানির সমাধান রেখেছেন। প্রতিটি বিপদ থেকে মুক্তির রাস্তা রেখেছেন। প্রতিটি বিপদ থেকে মুক্তির একটি নয় বরং দুটি রাস্তা রেখেছেন। যেমনটি সূরা আলাম-নাশরাহে আল্লাহ বলেছেন, সুতরাং কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে। নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে (৫, ৬)। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে নবীজী বলেছিলেন, এমন কোনো রোগ নেই যার ওষুধ আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। তবে বার্ধক্যের কোনো ওষুধ নেই। (বুখারি : ৫৭২৮)

স্ত্রীর ওপর অত্যাচার নয়
নারীকে অত্যাচার থেকে মুক্তি দিতে নবীজী সেদিনের ভাষণে বলেছিলেন, শোন! নারীদের সাথে কল্যাণকামীতার উপদেশ গ্রহণ করো। তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই তারা তোমাদের কাছে বন্দি থাকে। (তিরমিজি : ৩০৮৭)

স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার
স্বামীর যেমন স্ত্রীর ওপর অধিকার আছে তেমনি স্ত্রীরও স্বামীর ওপর অধিকার আছে। নবীজী বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, জেনে রেখো! নিশ্চয়ই স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার আছে এবং স্ত্রীদেরও তোমাদের ওপর অধিকার আছে। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, যাদের তোমরা অপছন্দ করো, তাদেরকে তোমাদের ঘরে কিংবা বিছানায় বসতে না দেয়া। আর তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা। তাদের জন্য উত্তম খাবার এবং পরিধেয়র ব্যবস্থা করা। (তিরমিজি : ৩০৮৭)

স্বামীর সম্পদ রক্ষাকারী হওয়া
স্ত্রীদের স্বামীভক্ত হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার ঘরবাড়ি, ধন-স¤পদ আগলে রাখা উচিত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ও অনুমোদন ছাড়া তার স¤পদ থেকে দান করাও উচিত নয়। বিদায় হজের ভাষণে নবীজী বলেছেন, স্বামীর অনুমোদন ব্যতীত স্ত্রী তার কোনো কিছু দান করবে না। সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! খাবারও কি নয়? নবীজী বললেন, খাবার তো আমাদের উত্তম সম্পদ। (আবু দাউদ : ৩৫৬৫)

মুসলমান পরস্পরের কল্যাণকামী হওয়া
একজন প্রকৃত মুসলিম অন্য মুসলিমের কল্যাণকামী হবেন। বিপদে-আপদে পাশে থাকবেন। নিজের জন্য যা ক্ষতির ও অপছন্দের তা অন্যের জন্যও ক্ষতির ভাববেন। নবীজী সেদিনের ভাষণে বলেছিলেন, জেনে রেখো! একজন মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। কাজেই এক মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের ওই জিনিস হালাল যা সে স্বেচ্ছায় তার জন্য হালাল করে দেয়। (তিরমিজি : ৩০৮৭)

একজনের অপরাধে অন্যজনকে শাস্তি নয়
অপরাধ যার শাস্তি তার। এটাই ইসলামের বিধিবদ্ধ বিধান। পিতার অপরাধের শাস্তি সন্তানকে দেয়া আবার সন্তানের অপরাধের শাস্তি পিতা-মাতাকে দেয়া যাবে না। কিংবা মালিকের শাস্তি দাস-গোলামকেও দেয়া যাবে না। নবীজী বলেছেন, জেনে রেখো! অপরাধী নিজেই তার অপরাধের জন্য দায়ী-দোষী। ছেলের অপরাধের কারণে বাবা এবং বাবার অপরাধের কারণে ছেলে অপরাধী হবেন না এবং তাদের শাস্তি দেয়া যাবে না। (তিরমিজি : ৩০৮৭) আল্লাহ বলেছেন, প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্মের জন্য দায়ী এবং কেউ অন্যের ভার গ্রহণ করবেন না। (সূরা মায়েদা : ১৬৪)

যেনা-ব্যভিচারের শাস্তি
সেদিন নবীজী সাহাবিদের যেনা-ব্যভিচার থেকে বারণ করেন এবং ব্যভিচারের শাস্তি পাথর নিক্ষেপে হত্যার উল্লেখ করেন। জনৈক সাহাবি বলেন, বিদায় হজে নবীজী যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তার মূলকথা ছিল চারটি যথা : আল্লাহর সাথে শিরক করো না। অবৈধ হত্যা করো না। যেনা করো না এবং চুরি করো না। ভাষণের একপর্যায়ে নবীজী আরো বলেন, ব্যভিচারের শাস্তি পাথর (পাথর নিক্ষেপে মৃত) এবং তাদের বাকি হিসাব আল্লাহর কাছে। (আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া ১ : ৬৪২)

চারটি জিনিসের বিশেষ অঙ্গীকার
সেই সমাবেশের মহাসমুদ্র থেকে একজন সাহাবি নবীজীকে জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাদের কাছে কিসের অঙ্গীকার নেবেন? নবীজী বললেন, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ো। রমজানের রোজা রাখো এবং তোমাদের আমির-নেতাদের অনুকরণ করো। তাহলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া ১ : ৬৪১)

নিজ পিতা বাদে অন্যকে পিতা বানানো
অনেকেই এমন আছেন যারা নিজ পিতা ব্যতীত অন্যকে বাবা বলেন ডাকেন। অন্যজনকে নিজের পিতা বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, যা ইসলাম সিদ্ধ নয়। বিদায় হজের সেই ভাষণে নবীজী বলেছেন, যে ব্যক্তি পিতা ব্যতীত অন্যকে বাবা বলে দাবি করে, তার ওপর কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর অভিসম্পাত। (মুসলিম : ১৩৭০) অন্য হাদিসে এসেছে, যদি কেউ জেনে-শুনে এমনটা করে তাহলে তার জন্য জান্নাত হারাম। (বুখারি : ৬৮৬৬)

কালো-বিকলাঙ্গ হাবশি নেতার অনুসরণ
ঝগড়া ফাসাদমুক্ত নিরাপদ সমাজ গড়তে আমিরের অনুসরণ ও অনুকরণের বিকল্প নেই। নবীজী তার উম্মতদের আমির-নেতার অনুসরণের প্রতি জোর-তাগিদ দিয়েছেন এবং নেতাকে মান্য করা আবশ্যক করেছেন, যদি সেই নেতা ইসলামী বিধিবিধান মোতাবেক দেশ পরিচালনা করে। নবীজী বলেছেন, সাবধান! যদি তোমাদের ওপর কালো-বিকলাঙ্গ কোনো দাসকেও আমির নিযুক্ত করা হয় আর সে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী তোমাদেরকে পরিচালিত করে। তাহলে তোমরা তার কথা শুনবে এবং তার অনুসরণ করবে। (আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া ১:৬৩৫)
নিজ কর্মের হিসাব কিন্তু দিতে হবে
শেষদিনের বিচারে বিশ্বাস রাখা মুমিনের নিদর্শন। কেয়ামতে আল্লাহ মানুষের সব কর্মের হিসাব নেবেন। যেমনটা আল্লাহ বলেছেন, (নবী) আপনার দায়িত্ব (দাওয়াত) পৌঁছে দেয়া আর আমার দায়িত্ব হিসাব নেয়া। (সুরা’দ : ৪০) নবীজী সেদিন দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, অতিশিগগির তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্ম স¤পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সাবধান! আমার মৃত্যুর পরে তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যেও না। (আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া ১:৬.৩৩)
লেখক : খতিব, বাইতুল আজিম জামে মসজিদ, রংপুর

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com