জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো না দেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষেপেছে ইসরাইল। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেছেন।
সোমবার জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ১৪-০ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধের ১৭০ দিন পর জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করতে সক্ষম হলো। আর তা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো না দেয়া। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ভেটো দেয়ায় তা পাস করা যায়নি।
প্রস্তাবটিতে পবিত্র রমজান মাসে বৈরিতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়, যাতে ‘দীর্ঘস্থায়ী, টেকসই যুদ্ধবিরতি’ পথ সৃষ্টি হয়। এতে হামাস এবং অন্যান্য গ্রুপে হাতে ৭ অক্টোরব থেকে আটক সকল পণবন্দীর মুক্তির আহ্বান জানানো হয়।
এতে নিজ নিজ হাতে আটক বন্দীদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে গাজায় মানবিক সহায়তা বাড়ানোর জরুরি প্রয়োজনের কথা বলা হয়, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার ওপর জোর দেয়অ হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে রুশ দূত ভ্যাসিলি নেবানজিয়া ‘স্থায়ী’ যুদ্ধবিরতির বদলে ‘দীর্ঘস্থায়ী’ যুদ্ধবিরতি শব্দ ব্যবহার করায় আপত্তি জানান। তিনি স্থায়ী শব্দটি প্রস্তাবে রাখার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি।
নিরাপত্তা পরিষদে আরব দেশগুলোর প্রতিনিধি আলজেরিয়া প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য স্লোভেনিয়া, সুইজারল্যান্ড, মোজাম্বিক, হায়েনা, ইকুয়েডর, জাপান ও কোরিয়া এতে সহযোগিতা করে।
যুক্তরাষ্ট্র এতে ভোটদানে বিরত থাকায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানান। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পরিকল্পিত ওয়াশিংটন সফর বাতিল করেছেন। তিনি হামাসের হাতে আটক বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির শর্ত না দিয়ে ভোটাভুটির অনুমতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‘নীতিগত অবস্থান’ থেকে ‘পিছু হটেছে’ বলে অভিযোগ করেছেন।
নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের অতীতে ভেটো দেয়ার একটি মূল কারণ ছিল পণবন্দীদের মুক্তির শর্তকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের সাথে সরাসরি যুক্ত না করা। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি, বিষয় দুটি সংযুক্ত। রাশিয়া ও চীন যুদ্ধবিরতির নিঃশর্ত আহ্বানের পক্ষে ছিল।
সোমবার অনুমোদিত প্রস্তাবে জিম্মিদের মুক্তি দাবি করা হলেও এটিকে যুদ্ধবিরতি শর্ত হিসেবে গণ্য করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র এমন এক সময়ে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নেতানিয়াহু গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ শহরে সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক ইসরাইলি স্থল আক্রমণ রোধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাইডেনের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কার্বি বলেন, পণবন্দী চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধবিরতির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ‘অবিচল’ রয়েছে।
কার্বি বলেন, ‘আমরা ভোটদানে বিরত থাকার কারণ হলো, প্রস্তাবে হামাসকে নিন্দা জানানো হয়নি।’
সূত্র : আরব নিউজ, ভয়েস অব আমেরিকা এবং অন্যান্য
Leave a Reply