সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর প্রথমবারের মতো গতকাল কাশ্মীরে গিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তার এই সফর মূলত নির্বাচনী সফরই। গতকাল কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। তার বক্তব্যের অধিকাংশজুড়েই ছিল কাশ্মীরিদের প্রতি ভালোবাসার বার্তা। তিনি বলেছেন, কাশ্মীরিদের মন জয় করেছি, তবে এখানেই থামব না, আমাদের প্রচেষ্টা আরও অব্যাহত থাকবে। খবর গ্রেটার কাশ্মীর ও বিবিসি।
মোদি তার ভাষণে কাশ্মীরিদের ভালোবাসার বার্তার পাশাপাশি কংগ্রেসের সমালোচনা করেন। মোদি বলেন, ৩৭০ ধারা নিয়ে এখানকার জনগণকে ভুল বুঝিয়েছে কংগ্রেস।
মোদি বলেন, কাশ্মীর নামক পৃথিবীর স্বর্গে আসার পর অনুভূতি ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। সুন্দর পাহাড় এবং আভা স্পর্শ করছে। তার কথায়, জম্মু-কাশ্মীর এখন যে রূপ নিয়েছে তা সারাদেশের প্রত্যেকের স্বপ্ন ছিল। এখন শুধু আপনারা নন, ২৮৫টি ব্লকের এক লাখ মানুষ আমার বক্তৃতা দেখছেন।
একসময় লোকে জানতে চাইতেন, কারা জম্মু-কাশ্মীরে যাবে? এখন এখানে হাজার হাজার মানুষ। জম্মু-কাশ্মীর উন্নয়নের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে কারণ এটি এখন স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পাছে। এই স্বাধীনতা এসেছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ অপসারণের পর, যা একটি বাধা ছিল।
নরেন্দ্র মোদি স্থানীয় কৃষি ও পর্যটনকে সমৃদ্ধ করার জন্য এই দুই খাতে ৬৪ বিলিয়ন রুপি প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। কাশ্মীরে সরাসরি কেন্দ্রের শাসনের পক্ষে কথা বলেন মোদি। বিবিসি জানিয়েছে, এই বিষয়টি অনেক কাশ্মীরিকে ক্ষুব্ধ করেছে। গতকাল জনসভায় জনতার উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি বলেন, জনসভায় যেসব কর্মচারী কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন না, তাদের জন্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি তার বক্তৃতায় যে বার্তাটি দিতে চেয়েছেন তা হলো- সহিংসতার ঘটনা এবং বেকারত্বের উচ্চহার থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তার সরকার ২০১৯ সালের পর থেকে শান্তি ও উন্নয়নের নতুন যুগের কথা বলে থাকে। কিন্তু স্থানীয়রা মনে করে, তারা নাগরিক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশই অঞ্চলটিকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। স্বাধীনতার পর থেকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া প্রায়ই সীমান্তে হানাহানির খবর পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নেয়। এ নিয়ে কাশ্মীরিদের ব্যাপক ক্ষোভ ছিল। তবে বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় বাহিনী নজিরবিহীন কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
Leave a Reply