ইসরাইল সরকারে নতুন রাজনৈতিক গোলযোগে মারাত্মক সঙ্কটে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বিশেষ করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বেনি গাঞ্জের সাথে দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে।
গত ৭ অক্টোবর থেকেই একের পর এক সমস্যায় রয়েছেন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারা, গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য তিনি অভ্যন্তরীণ চাপে ছিলেন। এর পর হামাসের হাত থেকে বন্দীদের সবাইকে মুক্ত করতে না পারা, ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার জন্য আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন তিন।
এখন ৭৪ বছর বয়স্ক নেতানিয়াহু আরেকটি সঙ্কটে পড়েছেন। এর ফলে তিনি রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকতে পারবেন কিনা, তার অতীতের সব কৃতিত্ব বহাল থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
গাজায় চলমান হামলা নিয়ে নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইসরাইলি মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্টের মধ্যকার উত্তেজনা ‘বেশ বেড়েছে।’
তিন সদস্যবিশিষ্ট যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য হচ্ছেন নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট ও গাঞ্জ। বিরোধের কারণেই শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর সংবাদ সম্মেলনে গ্যালান্ট ও গাঞ্জ অনুপস্থিত ছিলেন। উভয়েই প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তাদের মধ্যকার বিরোধের মূল বিষয় হলো দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের তীব্রতা এবং যুদ্ধের পর গাজার নিয়ন্ত্রণভার কার কাছে থাকবে।
জেরুসালেম ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির সভাপতি ইফরাইম ইনবার দি মিডিয়া লাইনকে বলেন, ‘আমার মনে হয় জবাবটা খুবই সহজ। নেতানিয়াহু বুঝতে পারছেন যে গ্যালান্ট ও গাঞ্জ যুদ্ধের পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হতে চাইছেন।’
গ্যালান্ট ও নেতানিয়াহুর মধ্যকার বিরোধ নতুন কিছু নয়। গত মার্চেই বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় সংস্কারের বিরোধিতা করার জন্য তাকে বরখাস্ত করেছিলেন নেতানিয়াহু। এই পদক্ষেপের ফলে নতুন করে গণবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।
এদিকে হামাসের হাতে থাকা বন্দীদের মুক্তির জন্য তেল আবিবে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। এসব বিক্ষোভ থেকে এখন আগাম নির্বাচনের দাবি তোলা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।
ইসরাইলের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা নেতানিয়াহু এখন জনসমর্থনহীন হয়ে পড়েছেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৭০ ভাগ লোক তার পদত্যাগ চায়। তবে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পক্ষে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। আর এর জোরেই নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থেকে যেতে চাইছেন।
জেরুসালেমের বাসিন্দা সামি সকল বলেন, নেতানিয়াহু দেশের চেয়ে তার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি তার সুনাম রক্ষা করতে বেপরোয়া হয়ে ওঠেছেন।
তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর একান্ত ব্যক্তিগত অ্যাজেন্ডা রয়েছে। তিনি জানেন যে ইসরাইলি রাজনীতিতে তার দিন শেষ হয়ে আসছে।
গাজার যুদ্ধ মার্কিন প্রশাসনের সাথেও নেতানিয়াহুর বিরোধকে প্রকট করে তুলছে। নেতানিয়াহুর নিন্দুকেরা জোর দিয়ে বলছেন যে তিনি দেশের চেয়ে আত্ম-স্বার্থ এবং রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আর এ কারণে তার উচিত পদত্যাগ করা।
সূত্র : জেরুসালেম পোস্ট
Leave a Reply