লোহিত সাগরে ইয়েমেনভিত্তিক হাউছি যোদ্ধাদের প্রতিরোধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সামরিক জোট গঠন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাচ্ছেন না। তার অনেক মিত্রই প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে দ্বিধাগ্রস্ত রয়েছে, অনেকে কোমর বেঁধে তার সাথে নামছেও না।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের ওপর ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে হাউছিরা ঘোষণা দিয়েছে যে লোহিত সাগর দিয়ে ইসরাইলগামী সব ধরনের জাহাজে তারা হামলা চালাবে। ইতোমধ্যেই তারা বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে। এর ফলে তেল সরবরাহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই নৌরুটটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ‘অপারেশন প্রসপারেটি গার্ডিয়ান’ নামের জোট গঠন করার কথা ঘোষণা করেছিল।
আমেরিকার দুই শীর্ষ মিত্র ইতালি ও স্পেন এই অপারেশনে অবদান রাখার কথা ঘোষণা করলেও বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা নৌবাহিনী থেকে নিজেদের দূরে রাখবে।
পেন্টাগন জানিয়েছে, তাদের ‘অপারেশন প্রসপারেটি গার্ডিয়ান’-এ ২০টির বেশি দেশ যোগ দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক দেশ প্রকাশ্যে এই জোটে শরিক হওয়ার কথা স্বীকার করেনি। আবার যারা যোগ দিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই নামকাওয়াস্তে তা করেছে। রণতরী না পাঠিয়ে স্টাফ অফিসার পাঠিয়েই কাজ শেষ করেছে।
মার্কিন বাহিনীতে অন্যদের যোগ দিতে অনীহার অন্যতম কারণ হিসেবে বিশ্লেষেকরা গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলার কথা বলছেন। ওই হামলায় ২১ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছে।
মাদ্রিদের কমপ্লুটেনস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড হার্নান্দেজ বলেন, ‘প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় ইউরোপিয়ান সরকারগুলো জোটে যোগ দিতে উদ্বেগে রয়েছে।’ তিনি বলেন, ইউরোপের অনেক দেশই ক্রমবর্ধমান হারে ইসরাইলের সমালোচনা করছে। ইসরাইলের বাড়াবাড়িতে অনেক দেশই হতাশ।
গত ১৯ নভেম্বর থেকে হাউছিরা লোহিত সাগরে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কিত জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। আর যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নৌবাহিনী ওই হামলা প্রতিরোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুয়েজ খাল ব্যবহার করে লোহিত সাগর দিয়ে প্রায় ১২ ভাগ বিশ্ববাণিজ্য হয়ে থাকে। এই পথটি ব্যবহার করতে না পারলে আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে জাহাজগুলোতে চলতে হবে। এতে করে সময় ও ব্যয় উভয়টিই বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্র যদিও বলেছে, ২০টি দেশ তাদের সামুদ্রিক অভিযানে যোগ দিতে রাজি হয়েছে। কিন্তু তারা নাম প্রকাশ করেছে মাত্র ১২টির। যেসব দেশ এই অভিযানে শরিক হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা, ডেনমার্ক, গ্রিস, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, সেশেলস।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যে এই উদ্যোগে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেনি।
আবার ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগে সম্ভবত যোগ দেবে না। এক সিনিয়র ভারতীয় অফিসার জানান, মার্কিন জোটে শরিক হলে তারা আরো বেশি টার্গেট হবে বলে আশঙ্কা করছে। এ কারণে তারা এতে যোগ দিতে চাচ্ছে না।
Leave a Reply