করোনার কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিরতি পুষিয়ে নিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে স্কুল-কলেজ খুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আর এমনটি হলে শিক্ষাবর্ষের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সব ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যেক শ্রেণীর সিলেবাস কিভাবে সংক্ষিপ্ত করে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানো যায় তা নিয়েও কাজ করছে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তিন কোটি ১০ লাখের বেশি। এর মধ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ের (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী) শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় কোটি আর বাকি এক কোটি ৬০ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক পর্যায়ে। এই বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থীর জীবনে যাতে কোনো প্রকার বিরতি চলে না আসে সেই লক্ষ্যেই বছরান্তে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। একই সাথে করোনাকালে স্কুলপর্যায় থেকে কোনো শিক্ষার্থী যাতে ঝরে না পড়ে সেই জন্যও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাকের এডুকেশন প্রোগ্রাম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিলেবাস কাটছাঁট ও বার্ষিক পরীক্ষার বিষয়ে নিজ নিজ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক প্রফেসর গোলাম ফারুক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) মহাপরিচালক মো: ফসিউল্লাহ। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্কুলের পাঠ বিরতিতে মন্ত্রণালয় পরিচালিত কর্মকাণ্ডের নানা দিক নিয়েও ব্র্যাক তাদের একটি জরিপের ফলাফল তুলে ধরে।
মাউশি’র মহাপরিচালক জানান, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে যাতে কোনো প্রকার বিরতি চলে না আসে সেই জন্য আমরা স্কুল বন্ধের মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে সংসদ টিভিতে বিষয়ভিত্তিক ক্লাস চালু করেছি। এটা এখনো চলছে। যদিও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এসব ক্লাসের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে; তারপরেও বলব সরাসরি কিংবা অনলাইনে এসব ক্লাসের উপস্থিতি একেবারে কমও নয়। তিনি বলেন, স্বাভাবিক অবস্থাতেও ক্লাসের উপস্থিতি শতভাগ থাকে না। মাউশি’র এক জরিপের তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বাভাবিক অবস্থাতেও শতকরা ১৪ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেপ্টেম্বরে স্কুল খুললে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সিলেবাস কমিয়ে ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে।
ডিপিই’র ডিজি জানান, করোনার কারণে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাস খুব একটা ক্ষতি হয়েছে এমনটি বলা যাবে না। কেননা প্রাথমিকের বার্ষিক শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী ১৭ মার্চ থেকে রোজার ঈদের আগে স্কুল খোলা থাকার কথা ছিল ১৭ দিন আর ঈদের পরে স্কুল খোলা থাকার কথা ছিল ১০ দিন। সব মিলিয়ে স্কুল গত তিন মাস ধরে করোনার কারণে বন্ধ থাকলেও সেই হিসাবে শিক্ষার্থীদের ক্লাস মিস হয়েছে এক মাস। আর এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে। সুতরাং ডিসেম্বরে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়েও একটা প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
এ দিকে এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি বরাবরই বলে আসছেন যে, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে স্কুল-কলেজ খোলা হবে না। এই সময়ের মধ্যে সব ক্ল¬াসের পরীক্ষাও বন্ধ থাকবে। একই সাথে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষাও করোনার কারণে স্থগিত রয়েছে। বন্ধ রয়েছে কলেজে ভর্তির কার্যক্রম। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে খুলে দেয়া হতে পারে স্কুল-কলেজ। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তও এমনটি রয়েছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply