রাজনৈতিক মামলায় গত দুই মাসে ঢাকার আদালতে ২১ মামলায় বিএনপির ২৭১ জন নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আর গত এক বছরে ২৯টি মামলায় ৩০৪ জন নেতাকর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা আবু তাহের দাইয়া, ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া আমিনুল ইসলাম জাকিরও রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সভাপতি ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বদরুদ্দোজা বাদল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আব্দুল জব্বার ভুইয়া, সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল, ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের সমন্বয়ক সৈয়দ মামুন মাহবুব, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, গত ২০ নভেম্বর ঢাকার দু’টি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কর্তৃক চারটি মামলায় চার বছর আগে মারা যাওয়া বিএনপির নেতা আবু তাহের দাইয়া, ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন এবং ৮ বছর আগে গুম হওয়া আমিনুল ইসলাম জাকিরসহ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানসহ ৫৪ নেতা-কর্মীকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এছাড়া উল্লেখযোগ্য যেসব নেতাকর্মীকে সাজা দেয়া হয়েছে তারা হলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবীব), ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলিম (নকি), বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার। এমনকি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জনাব নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগকেও একটি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলায় গত ১৫ নভেম্বর দুই বছরের সাজা দেয়া হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, আইনজীবী হিসেবে সাজা দেয়া প্রতিটি মামলা পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি, সাজাপ্রাপ্ত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কোনোরূপ অপরাধের সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনো ফৌজদারী অপরাধ প্রমাণ করতে হয় সাক্ষ্য-প্রমাণ দ্বারা। অধিকাংশ মামলায় সাক্ষী হিসেবে শুধু পুলিশ সদস্যকে হাজির করিয়ে সাজা দেয়া হয়েছে। কোনো নিরপেক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি ফৌজদারী কার্যবিধিতে বর্ণিত বিচারিক স্তরসমূহও অনুসরণ করা হয়নি। ফলে যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই তড়িঘড়ি করে বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়া হয়েছে।
“বিএনপি নেতৃবৃন্দকে একের পর এক সাজা দেয়ার মাধ্যমে বিচারিক আদালতের প্রতি সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপের যে অভিযোগ আমরা বারংবার করে আসছিলাম তারই প্রমাণ হলো। সংবিধানের দৃষ্টিতে ‘সকল নাগরিক সমান’ এ কথা আর বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বিচারের নামে বিরোধী দল নিধনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে এ রায়গুলো ইতিহাসে স্থান করে নিলো। আমাদের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ এ রায়গুলো। আইনজীবী হিসেবে আমরা লজ্জাবোধ করছি। এ রায়গুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে যে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল তার সত্যতা প্রমাণিত হলো,” বলা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
Leave a Reply