1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ায় শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার শঙ্কা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩

নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা উপকরণের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অতিপ্রয়োজনীয় উপকরণ কলমের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসায় ইতোমধ্যে সব মহলেই এ নিয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর আগে থেকেই কাগজসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বর্ধিত দামে বিক্রি হচ্ছে। অনেক অভিভাবক এখন সন্তানের লেখাপড়া ও ভবিষ্যত নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগও জানিয়েছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি শনিবার (৩ জুন) জানিয়েছেন বাজেটে শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হলেও তা কমানোর জন্য সংসদে দাবি তুলবেন তিনি।

গত ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা উপকরণের দামবৃদ্ধির ঘোষণা আসার পর অনেক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকার ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের অভিব্যক্তি। অভিভাবকদের অনেকেই জানান, নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত অনেক পরিবারের জন্যই এই উচ্চদ্রব্যমূল্যের বাজারে যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা সেখানে বাজেটে যেভাবে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে তাতে অনেক পরিবারের সন্তানদেরই লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার মতো সামর্থ থাকবে না।

অন্যদিক গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন য্দ্ধুকেন্দ্র্রীক কারণে হঠাৎ করেই বেড়ে যায় শিক্ষা উপকরণের দাম। তখন থেকে আজও পর্যন্তই বই, খাতা, ব্যাগ, পোশাক, সবকিছুরই দাম বাড়তি। বিক্রেতারা বলছেন, আমদানি ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সাংসারিক টানাপোড়েনের মধ্যেই অবশ্য বেশ হিসাব করেই শিক্ষা উপকরণ কিনতে হচ্ছে বলে জানালেন অভিভাবকরা।

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারে শিক্ষা উপকরণের জন্য ব্যয় আগের তুলনায় গড়ে অন্তত দেড়গুণ বেশি হবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলকেন্দ্রীক এলাকায় রয়েছে শিক্ষা উপকরণের স্টেশনারি দোকান, ইউনিফর্ম বিক্রির প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাগ ও জুতোর শো রুম। এসব দোকানে ক্রেতারা এসে উচ্চমূল্য দেখে অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রেতারা জানালেন, শুধু ঢাকা নয় সারাদেশের চিত্র একই। শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কম। আগামীতে তা বাড়লেও আগের মতো হবে না বলে শঙ্কা বিক্রেতাদের। কেউ কেউ লাভ কমিয়ে বিক্রি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।

কয়েকজন ক্রেতা জানান, প্রতিটি শিক্ষা উপকরণেরই দাম বেড়েছে। তাই কেনাকাটায় হিসাবি হতে হচ্ছে। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কাটছাট করতে হচ্ছে পরিবারের অন্য খাতের খরচেও। অনেকেই আবার খরচের হিসাব মেলাতে না পেরে সন্তানের লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করছেন বলে জানান। অন্যদিকে বর্তমানে নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে এমনিতেই নাজেহাল সাধারণ মানুষ। সেইসাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক অভিভাবকই রীতিমত দুশ্চিন্তায়।

মিরপুরের অভিভাবক গৃহিনী আনজুম আরা বলেন, ‘আমার স্বামী আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। তার এলাকার রোজগারে সংসার চালানোর পর বাচ্চাদের লেখাপড়া চালিয়ে নেয়াটা এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয়। এর মধ্যে কাগজ, কলম, খাতাসহ শিক্ষা উপকরণের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে দুশ্চিন্তাও অনেকটা বেড়েছে। এখন সংসারের খুঁটিনাটি খরচগুলো কাটছাঁট করে বাচ্চাদের লেখাপড়া সামনের দিকে চালিয়ে নিতে হবে। আর এটাও যদি সম্ভব না হয় তাহলেতো বাচ্চাদের লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়া আর কোনো উপায়ই থাকবে না।

তিনি আরো জানান, সরকার যদি এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয় তবে ভবিষ্যতে বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হবে।

অবিভাবক তানভীর হাসান জানান, অন্যান্য জিনিসের সাথে বছরে কয়েক দফা শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়ছি। ১২০ পৃষ্ঠার ৩৫ টাকার ভার্সিটি খাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা এবং বাচ্চাদের হাতের লেখার ২০ টাকার খাতা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। শুধু কাগজ আর খাতাই নয় দাম বেড়েছে প্রয়োজনীয় সব শিক্ষা উপকরণের। শুধু অভিভাবকই নয়, দামের এই বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে শিক্ষকদেরও। এভাবে লাগামহীনভাবে শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়াতে শিশুদের বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

শনিবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় লাইব্রেরি ও স্টেশনারি দোকানে ঘুরে দেখা গেছে দুই টাকার ফটোকপি এখন পাঁচ টাকা। প্রতি রিম দিস্তা কাগজের দামও বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। মোটা মলাটের ২০ টাকার খাতার দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। গত ১ জুন বাজেট ঘোষণার পর থেকেই আরো বাড়িয়ে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন দোকানীরা। কলমের দাম বাড়ার ঘোষণা আসার পর সাধারণ বলপয়েন্ট কলমও পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। শিক্ষা উপকরণের প্রতিটি পণ্যের দামের ক্ষেত্রে এই একই অবস্থা। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে শুধু বাবা মা একা নন, ঊর্ধ্বদামে এখন সরাসরি নাকাল হচ্ছে খুদে শিক্ষার্থীরাও। অনেক পরিবারে একাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও তো তাদের অবস্থা আরো সঙ্কটে। অভিভাবকদের অনেকের পক্ষেই তাদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বর্তমান বাজারমূল্যের সাথে শিক্ষা উপকরণেরও মূল্য বৃদ্ধিতে বাড়তি চাপে পড়েছেন সব অভিভাবক।

বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় আকাশচুম্বী। সেই সাথে এখন আবার সমানতালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিক্ষা উপকরণের দামও। ফলে একটি পরিবারে যদি দুই বা তিন সন্তান শিক্ষার্থী (লেখাপড়া অবস্থায়) থাকে তাহলেও তো ওই পরিবারের এখন পথে বসার উপক্রম। সাধারণ বাজার খরচের সাথে শিক্ষা উপকরণের বর্ধিত দামের কারণে অনেক পরিবারেই নাভিশ্বাস উঠেছে।

রাজধানীর বাংলাবাজার আর নীলক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, মার্কার, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, বাচ্চাদের লেখার স্লেট, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহৃত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।

শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে শনিবার ঢাকার বাইরে একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রী ড. দীপু মনিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল শিক্ষা উপকরনের দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘বাজেট পরবর্তী আলোচনায় শিক্ষা উপকরণের দাম না বাড়ানোর দাবি তোলা হবে। বাজেট বরাদ্দ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। তবে চলতি বছরে জিডিপির হারে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কম। কিন্তু আমাদের যে মেগা প্রজেক্টগুলো চলছে, সেগুলোর কাজ শেষ হলে আমি বিশ্বাস করি শিক্ষা খাতে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। শিক্ষাই হবে আমাদের মেগা প্রজেক্ট।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com