1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
মার্কিন নির্বাচনের আগেই ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে! অর্থনীতিকে পঙ্গু করতেই ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবে না : ঢাবি ভিসি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়নি, গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে : র‌্যাব বিক্ষোভ ঠেকাতে পাঞ্জাব-ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করে নির্যাতনের পর আদালতে তোলা হচ্ছে : মির্জা ফখরুল আমাকে হত্যা করতেই হামলা চালানো হয় : সালমান খান বিটিভি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত দিচ্ছে রেলওয়ে

আধুনিক সভ্যতায় মানবিক মূল্যবোধ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ মার্চ, ২০২০

আধুনিক যুগে মানবসভ্যতা যদিও বস্তুগত বিচারে এগিয়ে গেছে এবং মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে অনেক ‘নতুন বিষয়’ যুক্ত হয়েছে, তবু সে সেই সোনালি অতীতের কথা ভুলে যেতে পারে না, যখন তাদের জীবনের সব প্রয়োজন পূর্ণ হতো এবং তারা এমন সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করত, যা শিল্প বিপ্লবোত্তর বস্তুবাদী সভ্যতার স্পর্শের বাইরে ছিল। আর মানুষ মানবিক অধিকার ও দায়িত্বগুলোর প্রতি অনেক বেশি যত্নবান ছিল। ঘরে ও বাইরে সর্বত্র মনুষ্যত্বের গুণাবলি বহন করত এবং সবার সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বজায় রাখত। মূলত জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিপ্লব মনুষ্যত্বকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

বর্তমান যুগে মানুষ জীবনের সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নতি অর্জন করেছে এবং করছে। তাদের জীবন এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কিছুদিন আগেও ‘পৃথিবী একটি বিশ্বগ্রাম’ এই ধারণা দেওয়া হতো, আর এখন তা বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞান এমন সব প্রযুক্তি উপহার দিয়েছে, যা পৃথিবীর রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সীমাকে প্রতীকে পরিণত করেছে এবং সব দূরত্ব ঘুচিয়ে দিয়েছে। এই সীমা-পরিসীমা অতিক্রম করার মাধ্যমগুলোও সহজলভ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে মানুষ পরস্পরের ‘হৃৎস্পন্দন’ও শুনতে পারে। প্রাচীনকালে কোনো এক আরব কবি বলেন, ‘মানুষের হৃৎস্পন্দন তাকে বলছে জীবন কয়েক মিনিট ও সেকেন্ডের নাম।’

যদিও এখন দূরত্ব দূর হয়েছে, পরস্পরের সঙ্গে সেকেন্ডে যোগাযোগ করা যাচ্ছে এবং দেশ-মহাদেশ পার হয়ে যাচ্ছে অবলীলায়; কিন্তু তাদের হৃদয়ের মৃত্যু হয়েছে। যেন সারা দেহে, শিরা-উপশিরায় রক্ত চলাচল করছে আর হৃিপণ্ড নির্জীব হয়ে আছে। বড় শহরগুলোয় একই ভবনে বসবাসকারীদের মধ্যে পরিচয় থাকে না। ভবনের নিচতলার অধিবাসী ওপরতলায় বাসকারীকে এবং এক প্রবেশপথ ব্যবহারকারী অন্য প্রবেশপথ ব্যবহারকারীকে চেনার প্রয়োজন বোধ করে না। আধুনিক বিশ্বের আরেক চেহারা এটি। প্রতিবেশী যেখানে অপরিচিতজন এবং সহানুভূতি-মমতাবঞ্চিত। পশুসমাজ যেমন বন্ধনহীন এবং তার চারপাশ সম্পর্কে উদাসীন। আল্লাহ বলেন, ‘তারা পশুতুল্য, বরং তারও অধম এবং তারাই হলো উদাসীন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৯)

পৃথিবীর প্রাচীন ধর্ম ও সভ্যতাগুলো মানবীয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব ও বিবাদের দৃষ্টান্তে পরিণত করেছিল। মতবিরোধ ও বিভক্তি, কলহ ও রক্তপাত, ঘৃণা ও বিদ্বেষ তাদের প্রকৃতির রূপ নিয়েছিল। ফলে তাদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য হয়ে গিয়েছিল। যেন তাদের পরিণতি ফেরেশতারা আগেই অনুভব করতে পেরেছিল এবং আল্লাহকে বলেছিল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে পাঠাবেন, যারা বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাত করবে। অথচ আমরা আপনার সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩০)

কিন্তু আল্লাহর অভিপ্রায় ছিল ভিন্ন। তিনি বললেন, ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩০)

আল্লাহ জানতেন রক্তপাত, হানাহানি ও বিবাদ মানুষের প্রকৃতিবিরোধী। সুতরাং পৃথিবীতে এক দল মানুষ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলেও অন্যরা হবে তাঁর অনুগত ও মানবীয় মূল্যবোধ ও গুণাবলির অধিকারী। আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেন, ‘যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৮)

সুতরাং পৃথিবীর মানুষ দুই শ্রেণিতে বিভক্ত : এক. যারা আল্লাহর নির্দেশনা মান্য করে চলে, দুই. যারা আল্লাহর দ্বিন অস্বীকার করে এবং তার অনুগ্রহের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। দ্বিতীয় শ্রেণির লোকেরা আসমানি জ্ঞান ও পথনির্দেশকে জাগতিক ও বস্তুগত উন্নয়নের পথে অন্তরায় প্রমাণের চেষ্টা করে। অথচ পার্থিব উন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষ ও জীবনের গতিশীলতা আল্লাহর প্রতি ঈমান দৃঢ় করে। কেননা বিজ্ঞান তার সামনে সৃষ্টিজগতের রহস্য ও শৃঙ্খলা উন্মোচিত করে। সে জানতে পারে বিশাল সৃষ্টিজগতে মানুষ একটি ক্ষুদ্র আয়োজনমাত্র। আল্লাহ যেমনটি বলেছেন, ‘আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি মানুষ সৃষ্টির চেয়ে বড় বিষয়। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৫৭)

কিন্তু আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান মানুষকে স্রষ্টামুখী করছে না কেন? কারণ প্রবৃত্তিপূজারি মানুষ ভালোমন্দের মাপকাঠিই পরিবর্তন করে ফেলেছে। প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে গিয়ে তারা বহু ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নিজের মত ও মতাদর্শ বাস্তবায়নের জন্য প্রগতির দোহাই দিচ্ছে এবং আধুনিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা এমনভাবে কথা বলছে যেন আগের যুগের মানুষ ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখত না। তারা মানুষের প্রকৃতিবিরোধী কাজকে তাদের অধিকার প্রমাণের চেষ্টা করছে। তাদের দাবি ধর্ম, সামাজিক মূল্যবোধ, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা ও সংস্কৃতির সব বন্ধন থেকে মুক্ত হয়েই মানুষকে উন্নয়নের রাজপথে হাঁটতে হবে। যে আইন মানুষ তার মানবিক মূল্যবোধ ও হাজার বছরের সামাজিক চর্চা থেকে অর্জন করেছে। আপাতত সুন্দর ‘অবাধ স্বাধীনতা’র দাবি শহর-নগর-গ্রাম সর্বত্র উচ্চকণ্ঠ হচ্ছে এবং স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক শিথিল হচ্ছে। একই সঙ্গে ‘আত্মমুখী’ মানবিক মূল্যবোধ, ভালোবাসা, সৌহার্দ্য ও মমত্ব শূন্য হয়ে যাচ্ছে।

মানবসমাজের এই মানবিক সংকট দূর করতে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধি, ঐশী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার চর্চা, মানুষের চোখ থেকে মোহের পর্দা দূর করা; সর্বোপরি (জীবনের বাস্তবতা ও মানবপ্রকৃতি সম্পর্কে) অজ্ঞতা ও কুসংস্কার থেকে তাদের বের করে প্রকৃত মুক্তির পথে নিয়ে আসা। নবী-রাসুলদের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে এই মুক্তির পথেই আহ্বান জানিয়েছেন—যার ভিত্তি ছিল আল্লাহর একত্ববাদ। মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর পূর্ণতা দান করেছেন। জীবনবিধান হিসেবে ইসলামকে আল্লাহ পরিপূর্ণ করেছেন। আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিন পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের ওপর আমার অনুগ্রহগুলো পূর্ণ করলাম এবং জীবনবিধান হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্য মনোনীত করলাম।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৩)

আল্লাহর আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া; বিশ্বাস ও চিন্তাগত ঔদ্ধত্যের শিকার মানুষদের এই মানবিক ও সাম্যভিত্তিক সমাজ, আল্লাহর আনুগত্যে ভরপুর অনুগ্রহপ্রাপ্ত জীবন ভালো লাগে না। তারা বন্ধনহীন বিশৃঙ্খল জীবন পছন্দ করে, যা পুরো মানবসভ্যতাকেই বিশৃঙ্খলার মুখে ঠেলে দেয় এবং মানবজাতির ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে টেনে নিয়ে এসেছে। এই ধ্বংসযাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েও আরো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পৃথিবীর পুঁজিপতি ও স্বার্থপর কম্পানিগুলো। আর তাদের সহযোগিতা করছে পোষ্য মিডিয়া। তারা প্রকৃত সত্য আড়াল করে অন্তঃসারশূন্য এক চাকচিক্যময় জীবন মানুষের সামনে তুলে ধরছে এবং মানুষকে তার স্রষ্টা থেকে বিমুখ করে পার্থিব জীবনে আচ্ছন্ন করে রাখছে। মানবজাতির এই সংকটকাল ও এই সময়ের করণীয় সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘অন্ধকার রাতের টুকরার মতো বিপর্যয় নেমে আসার আগেই তোমরা সৎকাজের প্রতি অগ্রসর হও। ওই সময় যে ব্যক্তি সকালে মুমিন থাকবে সে সন্ধ্যায় কাফির হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় মুমিন থাকবে সে সকালে কাফির হয়ে যাবে। মানুষ দুনিয়াবি স্বার্থের বিনিময়ে তার ধর্ম বিক্রয় করে দেবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২১৯৫)

ভাষান্তর : আতাউর রহমান খসরু

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com