১৯৯৩ সালে এহতেশামের হাত ধরে ‘চাঁদনী রাতে’ ছবিতে শাবনূর নাম ধারণ করে রুপালি আকাশে ফুটে ওঠে এক মায়াবী মুখ। তখন কে জানত, এই নায়িকা অতি অল্প সময়ে শাসন করবেন তারকাখচিত ঢালিউড। প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাতে’ তেমন না চললেও তার গুণের টানে, রূপের টানে নির্মাতারা ছুটে আসেন। সালমান শাহর সঙ্গে জুটি বাঁধার পর শাবনূরের ক্যারিয়ার জোয়ারের নদীতে গতিশীল নৌকার মতো তড়তড় করে এগিয়ে যায়। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বপ্নের নায়িকা। আজ তার জন্মদিন।
১৯৭৯ সালের এই দিনে যশোর জেলার শার্শা উপজেলার নাভারণে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পারিবারিক নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। ছোটবেলায় সবাই ডাকতেন নূপুর বলে। সিনেমায় নাম লেখানোর পর স্বনামধন্য নির্মাতা এহতেশাম নাম রাখেন শাবনূর। এই নামের অর্থ রাতের আলো। সিনেমাজগতে এই নাম আলো ছড়িয়েছে অনেকবার।
১৯৯৪ সালে মুক্তি পায় শাবনূর অভিনীত দ্বিতীয় সিনেমা ‘দুনিয়ার বাদশাহ’। বাদল খন্দকার পরিচালিত এই ছবিও ‘চাঁদনী রাতে’র মতো সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু শাবনূর থেমে থাকেননি। নিজের কাজ করে গেছেন মনোযোগ দিয়েই। এর ফলও অবশ্য পেয়েছেন তৃতীয় ছবিতে। ওই বছরেই মুক্তিপ্রাপ্ত জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ ছবিটি বক্স অফিসে হিট করে। সেই সঙ্গে ঢাকার ইন্ডাস্ট্রি পায় চলচ্চিত্রের নতুন জুটি, সালমান শাহ-শাবনূর। এই জুটি এর পর আরও ১৩টি ছবিতে অভিনয় করেন; যার প্রতিটিই হয় আলোচিত এবং ব্যবসাসফল।
দারুণ অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ শাবনূর দশবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার জয় করেন। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন দুইবার। আর ২০০৫ সালে ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
সর্বাধিক নায়কের প্রথম ছবির নায়িকা হওয়ার রেকর্ডও শাবনূরের দখলে। তার সঙ্গে অভিষেক অনেক নায়কের জন্যই বাড়তি পাওনা। শাবানা-ববিতাদের পর ঢালিউডের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এ নায়িকার সঙ্গে কাজের জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতেন অনেক নতুন মুখ। তবে সবার ভাগ্যে ধরা দেননি তিনি। আবার সবার সঙ্গে ছবি চলেনি তার। প্রথম ছবি ‘চাঁদনী রাত’-এ শাবনূর জুটি বাঁধেন সাব্বিরের সঙ্গে। এরপর ‘মৌমাছি’ ছবিতে অভিনয় করেন শামসের সঙ্গে। ‘আসামী বধূ’ ছবিতে তার বিপরীতে অভিষেক হয় মাসুদ শেখ নামের এক নায়কের।
শাহরিয়ার নাজিম জয়ের প্রথম ছবির নায়িকা ছিলেন শাবনূর। ছবির নাম ‘জীবনের গল্প’। জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা শাহেদ শরীফ খানেরও অভিষেক ছবির নায়িকা তিনি। ছবির নাম ‘হৃদয় শুধু তোমার জন্য’। গায়ক এস ডি রুবেল নায়ক হতে এলে তার দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন শাবনূর। ২০১০ সালে মুক্তি পায় এই জুটির সিনেমা ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’। ২০১২ সালে রাশেদ মোর্শেদ নামের আরেক গায়কের সঙ্গে একটি ছবিতে অভিনয় করেন শাবনূর। ছবির নাম ‘ভালোবাসা সেন্টমার্টিনে’।
জনপ্রিয় ৫
তোমাকে চাই (১৯৯৪) : মতিন রহমান পরিচালিত এ ছবিতে সালমান শাহর বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। ছবিতে দারুণ কিছু আবেগী মুহূর্ত রয়েছে, সঙ্গে অসাধারণ কিছু গান।
স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৫) : সালমান শাহ-শাবনূর জুটির অন্যতম সফল ছবি এটি। এমএ খালেক অতি প্রচলিত ধনী-গরিব ফর্মুলায় সিনেমাটি নির্মাণ করেন। কিন্তু টানটান চিত্রনাট্য, গান ও অভিনয়ের কারণে এটি ক্লাসিক হয়ে গেছে।
বিয়ের ফুল (১৯৯৮) : মতিন রহমান পরিচালিত এ ছবিটি হিন্দি ‘দিওয়ানা’র অফিসিয়াল রিমেক। শাবনূরের অভিনয় ও গানই এ সিনেমার প্রাণ। ছবির ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ গানটি এখনো জনপ্রিয়। শাবনূরের সঙ্গে অভিনয় করেছেন রিয়াজ ও শাকিল খান।
শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ (২০০১) : কমেডি, রোমান্টিক ঘরানার এই সিনেমাটি শাবনূরকে দিয়েছিল অন্যরকম জনপ্রিয়তা। এর পরিচালক ছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। রিয়াজের বিপরীতে শাবনূরের এই সিনেমাটি দারুণ ব্যবসাসফল।
দুই নয়নের আলো (২০০৬) : মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে শাবনূরের বিপরীতে ছিলেন তিন নায়ক- ফেরদৌস, শাকিল খান ও রিয়াজ। কিন্তু শাবনূরের দাপটে কারও কিছু করারই ছিল না। এটি দিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন অভিনেত্রী।
Leave a Reply