রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদে মোট পাঁচটি খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রায় আট হাজার টাকা। এসব খাতে অনুষদের নিজস্ব অর্থায়নের কথা থাকলেও তা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
যেসব খাতে এই বিশাল অংকের টাকা নেওয়া হচ্ছে তা হলো- বিভাগ উন্নয়ন তহবিলে তিন হাজার টাকা, মডেল ফান্ডে পনেরশো টাকা, ল্যাব ফান্ডে এক হাজার টাকা, প্রদর্শনী ফান্ডে পনেরশো টাকা ও চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগ সমিতিতে এক হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চারুকলা অনুষদের একজন শিক্ষার্থী বলেন, এই টাকা ভর্তির বাইরে নেওয়া হয়। মূলত বিভিন্ন ফি হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে এই টাকা নেওয়া হয়। যদিও অধিকাংশ ফি যেমন মডেল ফি, ল্যাব ফি, প্রদর্শনী ফি এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বহন করার কথা। কিন্তু তা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উত্তোলন করা হয়।
ভর্তির প্রায় ছয় হাজার টাকা ছাড়াও উন্নয়ন ফি ও সংশ্লিষ্ট ফি এবং পরীক্ষার সময় বিভিন্ন উপকরণ কেনাকাটা বাবদ আরও আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা তাদের খরচ করতে হয়, যা অন্যান্য অনুষদে করতে হয় না। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য অনুষদের চেয়ে চারুকলা অনুষদে পড়তে অনেক বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে এই টাকার পরিমাণ সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে । কিন্তু চারুকলা অনুষদে তা আট হাজার টাকা। তবে উন্নয়ন ফি’র নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত আদায়ের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মিলন বলেন, ‘আমরা ২০১৪ সাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রশাসনকে জানিয়ে আসছি । চারুকলায় যে উন্নয়ন ফির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে সেটার তীব্র নিন্দা জানাই আমরা।’ প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এসব খাতে ভর্তুকি দেওয়া কিন্তু তা না করে তারা নিজেদের পকেট ভর্তি করছে। প্রশাসনের মনে রাখা উচিত ভর্তি ফির বাইরে আবার আলাদা করে আট হাজার টাকা প্রদান একজন সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষে কতোটা কষ্টকর।
অতিরিক্ত এসব ফি এর বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড মোহাম্মদ আলীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন , বিভাগ উন্নয়ন ফান্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত। তবে ল্যাব ফান্ড এবার প্রথম, আগে এই ফান্ড ছিল না। চারুকলায় নতুন যে কম্পিউটার ল্যাব হয়েছে তার মেইনটেনেন্স ও ট্রেনিং বাবদ যে খরচ তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদান করছে না তাই এই ফি শিক্ষার্থীদের থেকে নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও ল্যাবে বিভিন্ন কোর্স করানো হবে। চারুকলার অন্তর্গত তিন ডিপার্টমেন্ট আলোচনা করে এটা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া শিল্পকর্ম প্রদর্শনী যেটা আগেও ছিল সেটার উপর ফি নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের নির্দিষ্ট কোনো মডেল প্রদান করা হয় না। তাই মডেল বাবদ খরচের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পনেরশো টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে।
এই ফি কেবলমাত্র ধার্য করা হয়েছে, তবে এখনো আদায় শুরু হয়নি। আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এটা নির্ধারণ করি। তবে ফি আদায়ে শিক্ষার্থীদের আপত্তি থাকলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।
Leave a Reply