দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদ্য চাকরিচ্যুত উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে বাসায় গিয়ে হুমকি দিয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রে এলেন কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইয়ুব খান।
এর আগেও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগে আলোচনায় আসেন তিনি। আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাষ্ট্রায়ত্ত কেজিডিসিএল প্রধানের দায়িত্ব পালনকালে তিনি ‘মধ্যরাতে’ ৬০ কর্মকর্তার পদোন্নতি দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে তার দুই ছেলেও রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ হলো, তিনি নগরীর জিইসি মোড়ে ১১ কোটি টাকার একটি জায়গা কিনতে সরকারের ১০৪ কোটি খরচ করেছিলেন। এই দুই অভিযোগে তদন্ত করে দুদক। দুটি তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন মো. শরীফ উদ্দিন। তদন্তে দুটি অভিযোগেরই সত্যতা পাওয়া যায়।
সম্প্রতি আইয়ুব খান আলোচনায় আসেন তার বিরুদ্ধে করা মো. শরীফের এক জিডির সূত্র ধরে। জিডিতে শরীফ উদ্দিন অভিযোগ করেন, চাকরিচ্যুত করার ১৬ দিন আগে চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকার বাসায় গিয়ে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি কীভাবে চাকরি করি, তিনি (আইয়ুব খান) দেখে নেবেন। আমি চট্টগ্রামে কর্মরত থাকাকালীন অনেকের জীবন নষ্ট করে দিয়েছি, (তিনি) দুদক দিয়ে আমার জীবন নষ্ট করে দেবেন।’
হুমকি দেওয়ার বিষয়ে গতকাল একাধিকার আইয়ুব খানের মোবাইলে ফোন করা হয়। তবে তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আইয়ুব খানের ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, কেজিডিসিএল-এর ৫৭ কর্মকর্তাকে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট রাতে একযোগে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরদিন শুক্রবার ছুটির দিনেও দেওয়া হয় আরও তিন কর্মকর্তার পদোন্নতি। ওই পদোন্নতি ‘মিডনাইট প্রমোশন’ হিসেবে আলোচিত ছিল। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে আইয়ুব খানের দুই ছেলে আশেক উল্লাহ চৌধুরী ও মহিউদ্দিন চৌধুরীও ছিলেন। তাদের একজনের সনদ ছিল না, অন্যজনের ছিল না অভিজ্ঞতা, তবু হয় পদোন্নতি।
আইয়ুব খানের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়। তিনি এখন অবসরকালীন ছুটিতে। এক সময় পেট্রোবাংলার পরিচালকও ছিলেন তিনি। ওই সময় এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে আমাদের সময়কে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দুই ছেলে ১১ বছর ধরে চাকরি করছে। জালিয়াতি করে কি এতদিন চাকরি করা যায়?’ বেশি দামে জায়গা কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘সংস্থার বোর্ডসভায় অনুমোদন নিয়ে জমি কেনা হয়েছে। সেখানে ৩৩ তলা ভবন হলে ফ্ল্যাট বিক্রি করে ১৬০০ কোটি টাকা আয় হবে।’
অধিক দামে জমি ক্রয়
সরকারি ক্রয়নীতি উপেক্ষা করে ২০১৭ সালে ১১ কোটি টাকার জমি ১০৪ কোটি টাকায় কিনে নেয় কেজিডিসিএল। অধিগ্রহণ পদ্ধতিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমিটি কিনলে খরচ হতো ৩৩ কোটি টাকা। ওই সময় কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন আইয়ুব খান। জমি কেনার পর তার বিরুদ্ধে মোটা অংকের ‘কমিশন বাণিজ্যের’ অভিযোগ ওঠে।
দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিজ ক্ষমতাবলে ২০-২৫ কোটি টাকা, পরিচালনা পরিষদের অনুমতি নিয়ে ৩০ কোটি টাকা আর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা খরচ করে যন্ত্রাংশ ও সম্পদ কিনতে পারবেন। এর চেয়ে বেশি খরচ করলে একনেকের অনুমতি নিতে হয়। আইয়ুব খান এসব নিয়ম মানেননি। তিনি বোর্ড সদস্যদের অনুমতি নিয়েই জমি কিনতে ১০৪ কোটি টাকা খরচ করেন।
অভিযোগ আছে, এমন কর্মকাণ্ডে পাশে না থাকায় কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) মো. আবু জাফর এবং উপমহাব্যবস্থাপক আবদুল হক মজুমদারকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণে বাধ্য করেন আইয়ুব খান।
Leave a Reply