করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নির্দেশনা অনুযায়ী, আফ্রিকার সাতটি দেশ থেকে বাংলাদেশে এলে ১৪ দিন নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। দেশগুলো হলোÑ বতসোয়ানা, লেসোথো, ইসোয়াতিনি, ঘানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে। এসব দেশ থেকে ফেরত আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের জন্য বেশ কিছু হোটেল নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি হোটেলের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে কোয়ারেন্টিন ছাড়াই বাড়ি যেতে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুইটি হোটেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে সরকারের একটি দফতর। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোপন প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আগত যাত্রীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাসদস্যদের তত্ত্বাবধানে বিদেশফেরত যাত্রীদের সরকার অনুমোদিত হোটেলের প্রতিনিধির নিকট হস্তান্তর করা হয়। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ওই যাত্রীদের ০৭ ও ১৪তম দিনে দুইটি কোভিড টেস্ট করা হয়। ইদানীং বিদেশফেরত যাত্রী কর্তৃক হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়ম বহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কোয়ারেন্টিন আদেশ অমান্য সংক্রান্ত কিছু ঘটনা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় মো: আলিফ সৈয়দপুর থেকে আশকোনা হজ ক্যাম্প কোয়ারেন্টিন সেন্টারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিকে ফোন করেন এবং হোটেল ব্লু ক্যাসেলের বিরুদ্ধে কোয়ারেন্টিনে অনিয়মের অভিযোগ করেন। ওই ব্যক্তি হোটেল ব্লু ক্যাসেলের প্রতিনিধির সাথে তার কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ডিং প্রেরণ করেন। রেকর্ডিং থেকে জানা যায় যে, হোটেল ব্লু ক্যাসেলে যাত্রীদের নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে আবশ্যিক হোটেল কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিন শেষ হওয়ার আগেই হোটেল ত্যাগ করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। কোনো যাত্রী যদি হোটেলে আবশ্যিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে না চান এবং আবশ্যিক কোভিড টেস্ট ব্যতীত হোটেল ত্যাগ করতে চান তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ওই সুযোগ প্রদান করা হয়। সে ক্ষেত্রে চাহিদাকৃত অর্থ প্রদানের শর্তে হজ ক্যাম্পে হোটেল কর্তৃক কোয়ারেন্টিনের প্রয়োজনীয় রিপোর্ট প্রদান ও প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করার দায়িত্ব হোটেল কর্তৃপক্ষ পালন করবে বলে জানানো হয়। ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য হোটেল ব্লু ক্যাসেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে হোটেলে উপস্থিত অন্য যাত্রীদের অবস্থা জানতে চাওয়া হলে সব যাত্রী হোটেলে উপস্থিত আছেন এবং প্রত্যেকের কোভিড টেস্ট সময়মতো করানো হচ্ছে বলে অবহিত করা হয়। পরে হজ ক্যাম্প থেকে একজন সেনাসদস্য কর্তৃক পরিচয় গোপন রেখে পুনরায় হোটেল প্রতিনিধিকে ফোন করে হোটেল রুম ভাড়া করার নিয়মাবলি জানতে চাওয়া হলে হোটেল প্রতিনিধি একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (০১৭৩৫৩৬৩৬৫০) ফোন দিতে বলেন। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিতে ফোন দিয়ে কথোপকথনের মাধ্যমে মো: আলিফের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
গত ১৪ জানুয়ারি মো: ইমাম হোসেন চৌধুরী দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে আগমন করেন এবং তাকে হোটেল গ্রিন হাউজ প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়। গত ২১ জানুয়ারি ওই যাত্রীর প্রথমবার কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয় এবং রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া যায়। পুনরায় গত ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হয় এবং রাত ১০টার সময় বর্ণিত ব্যক্তির পজেটিভ রিপোর্ট প্রাপ্তির সাথে সাথে বিষয়টি হোটেল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য বলা হয়। গত ২৯ জানুয়ারি বর্ণিত ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, একই দিনে বেলা ১টার সময় হোটেল প্রতিনিধি তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যায়। এ সময় হোটেল প্রতিনিধি তাকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্নের জন্য হাসপাতালের ভেতরে যান। পরে তিনি ওয়েটিং রুমে এসে দেখেন ওই ব্যক্তি সেখানে নেই। তখন তিনি হাসপাতালের ভেতরে সমস্ত জায়গা পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওই ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত হন। গত ৩০ জানুয়ারি হজ ক্যাম্পের সেনাসদস্য বর্ণিত ব্যক্তি সম্পর্কে পুনরায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিতভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করতে বলে। তখন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২৮ জানুয়ারি ওই যাত্রীর দ্বিতীয়বার কোভিড-১৯ টেস্ট করা হয় এবং দ্বিতীয় টেস্টের ফলাফলও নেগেটিভ হবে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তিনি ২৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে হোটেল ত্যাগ করেন। একই সাথে কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ হলে পুনরায় হোটেলে হোটেলে ফেরত আসবেন বলে জানান। পরে কোভিড পজেটিভ রিপোর্ট আসায় ওই যাত্রীকে অবহিত করা হলে তিনি আর আসবেন না বলে জানান। ওই যাত্রী নোয়াখালীর শ্বশুর বাড়িতে অবস্থান করছেন।
প্রতিবেদনে ঘটনাদ্বয়ের সাথে সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিতপূর্বক যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়।
Leave a Reply