বাংলাদেশের ক্রিকেটে দেড় শ’র উপর স্ট্রাইক রেটে গোটা টুর্নামেন্ট ব্যাট করেছেন- এমন নজির খুব কমই পাওয়া যায়। এমনকি টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের টপ ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট ১২০ থেকে ১৩০ এর গন্ডিতে, সেখানে মুনিম শাহরিয়ার এবার গোটা বিপিএলে ১৬১ দশমিক ৮১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন। পাঁচ ম্যাচে বল খেলেছেন ১১০টি, রান তুলেছেন ১৭৮।
ফরচুন বরিশালের ফাইনালে ওঠার পেছনে ময়মনসিংহের এই মারকুটে ব্যাটসম্যানের অবদান রয়েছে, বিশেষত শেষ চার ম্যাচে তুলেছেন ২৫ বলে ৪৫, ২৮ বলে ৫১, ২৫ বলে ৩৭ এবং ৩০ বলে ৪৪।
১৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি।
বিবিসি বাংলার সাথে ফোনালাপে মুনিম শাহরিয়ার বলেন, তিনি বল পেটানোর অনুশীলন করেই বড় হয়েছেন।
‘এটা আমার বাসার বারান্দা থেকে শুরু হয়েছে। বাবা বলতো ক্রিকেট খেল, বাবাই বেশি ক্রিকেট খেলতে নিয়ে যেতেন, একটু বড় হওয়ার পরই মাঠে যাওয়া শুরু করি। আমি শুধু চেষ্টা করতাম ছক্কা মারার।’
বাংলাদেশে যারা ক্রিকেট অনুসরণ করেন এবং খেলাটি নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেন তাদের অনেকেই মুনিম শাহরিয়ারের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে ফরচুন বরিশালের হয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পেস বোলার মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ছয় মারা দেখে একজন লিখেছেন ‘ঠিক যেন চোখে লেগে আছে শটটা’।
মুনিম শাহরিয়ারের নাম এখন সর্বত্র, অনেকে তাকে মনে করছেন বাংলাদেশের টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ারপ্লেতে যে দৈন্যদশা দেখা যায়, তার সমাধান।
ভারতের ক্রিকেট অনুসারীদের কেউ কেউ টুইটারে মুনিমকে নিয়ে আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনই মূলত তাকে মূলধারার ক্রিকেটে তুলে এনেছেন। মুনিম শাহরিয়ার এর আগেও পারফর্ম করেছেন নানা পর্যায়ে। কিন্তু এবারে তিনি নজর কেড়েছেন বিপিএল দিয়ে।
‘মুনিম ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে, এমন একটা ছেলেকেই চাচ্ছিলাম। হয়তো ফিটনেস ও ফিল্ডিং নিয়ে আরো কিছু কাজ আছে বাকি।’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের শুরুতে কোভিড পজিটিভ আসায় খেলতে পারেননি মুনিম, তখনও বরিশালের ওপেনিং কম্বিনেশন গুছিয়ে উঠতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট, দলের প্রায় সব ব্যাটসম্যানকেই ইনিংস শুরু করতে পাঠিয়েছে দলটি।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হার্ড হিটার হিসেবে সুপরিচিত ক্রিস গেইলের সাথে ওপেন করতে নামেন মুনিম, ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ বেলায় দাঁড়িয়ে ক্রিস গেইল এখন আগের মতো বোলারদের ওপর দাপট দেখাতে পারেন না, অন্তত এই বিপিএলে দেখা যায়নি, দায়িত্ব নিয়ে গেইলের অভাব পূরণ করেছেন মুনিম।
তিনি বলেছেন, গেইলের সাথে ব্যাট করতে নেমে বিশেষ কিছু মনে হয় না। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট পেশাদারিত্বের সাথে খেলবেন এমন একটা মনোভাব নিয়েই মাঠে নেমেছেন।
‘যখন মাঠে নামি অনেক বিষয়ই মাথায় থাকে না, শুধু বোলার ও আমি থাকে, বলের দিকেই ফোকাস থাকে।’
তবে আমুদে স্বভাবের গেইলের কাছে উপভোগ করাটা শিখছেন মুনিম শাহরিয়ার।
‘ওর সাথে যতক্ষণ কথা হয় বলেন খেলাটা এনজয় করার কথা।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে খেলেছেন মুনিম, সেখানেও তিনি কোচ হিসেবে পেয়েছেন খালেদ মাহমুদ সুজনকে। নির্দিষ্ট রান না পেলে, পরিসংখ্যান ভালো না থাকলে বাংলাদেশে টিম ম্যানেজমেন্টের নজরে পড়া কঠিন। কিন্তু মুমিনের মতে, খালেদ মাহমুদ সুজন তাকে ‘নিজের মতো খেলার’ সুযোগ দিয়েছেন।
সাকিব আল হাসানের দলে খেলছেন তিনি, মুনিমের মতে সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেটারের সাথে খেললে যে কোনো তরুণ কারো চাপ কমে যায়, ‘নির্ভার একজন মানুষ। ইতিবাচক ছাড়া কোনো চিন্তা করেন না। যতটুকু যা বলার সোজাসাপ্টা সামনেই বলে দেন।’
ডাকনাম জুম্মন, ময়মনসিংহে টেপ টেনিস ক্রিকেটে সুপরিচিত নাম ছিলেন দীর্ঘদিন, সেখান থেকে বাংলাদেশের শীর্ষ টি-টোয়েন্টি লিগে আসার পথটা মুনিম তৈরি করে নিয়েছেন, তিনি মনে করেন, ক্রিকেট যে খেলবেন এটা তিনি জানতেন, কেবল খেলে গেছেন নিজের মতো করে।
প্লে অফে খেলা নিশ্চিত হওয়ার পর সাকিব আল হাসান আলাদাভাবেই মুনিমের প্রশংসা করে বলেন, ‘এই বিপিএলের বড় আবিষ্কার মুনিম শাহরিয়ার।’
জাতীয় দলে খেলবেন কি না তা এখনই বলা মুশকিল। কিন্তু মুনিম ইতোমধ্যে তারকাখ্যাতি পেয়ে গেছেন।
সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার সাথিরা জাকির জেসিও মনে করেন, যেসব ক্রিকেটার এবার আলাদা করে নজর কেড়েছেন তাদের মধ্যে মুনিম শাহরিয়ার থাকবেন।
‘মুনিমের ব্যাটিংয়ের ধরনটা বাংলাদেশে খুব একটা দেখা যায় না। কোনো রাখঢাক নেই।’
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply