৩১ জানুয়ারি ২০২২ দেশের প্রধান কয়েকটি পত্রিকায় গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের বাঘ জিরাফসহ বিভিন্ন পশুর মৃত্যু নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। কয়েকটি টিভি চ্যানেলেও এ বিষয়ে নিউজ হয়েছে। কোন একটি টিভির স্ক্রলে লেখা ছিল বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে এগারোটি জিরাফ মৃত্যুর কারণে সেখানকার পরিচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সুশাসন না থাকলে সেখানে মানুষ পশুপাখি গাছগাছালি কিছুই ভালো থাকতে পারে না। আমাদের দেশে সুশাসন দূরের কথা সাধারণ ভোটের অধিকারটুকুও নেই। বাকস্বাধীনতা মানবাধিকার নেই। দেশের মিডিয়া কোন পর্যায়ে আছে তা সদ্য বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ইংরেজি পত্রিকাওয়ালাদের লোকদের কাছে নিরিবিলিতে জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাওয়া যাবে! মানুষ পশুপাখি গাছগাছালি কোনো কিছুই কোনো অগণতান্ত্রিক দেশে ভালো থাকতে পারে না সেটা কয়েক দিন আগে সুন্দরবন ভ্রমণে গিয়েও প্রমাণ পেলাম। সুন্দরবনের মূল্যবান গাছ কেটে সুন্দরবনকে হালকা করে দেয়া হয়েছে। আর এসব সম্ভব হয়েছে আইনের প্রয়োগ না থাকার কারণে। দেশের কোনো ইনস্টিটিউট দুর্নীতিবিহীন নেই। আমলারা অতি বেপরোয়া দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে পড়েছেন। কারণ তারা জানেন দেশে জবাবদিহি নেই। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। এখানের পশুদের জন্য কি রাষ্ট্র খাবার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখেনি? তাহলে কেনো এগারোটি জিরাফ মারা গেল? আর কেনইবা সেখানে বাঘ মারা যায়? এখানে কি কোনো দায়িত্বশীল আমলা বা মন্ত্রী সেই পটুয়াখালীর আলতাফ হোসেনের ন্যায় বলবেন ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিছে’! শিশু নওশীন হত্যার পর দায়িত্বশীল এক সময়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন। যেটা নিয়ে মিডিয়াতে বেশ ট্রল হয়েছিল। আমরা এমন কোনো নিউজ পেয়েছি যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ মহামারীর কারণে পশুরা মারা যাচ্ছে? না আমরা সেরকম কোনো খবর পাইনি। তাহলে কার দুর্নীতি গাফিলতিতে সাফারি পার্কের এত পশু মারা গেল?
সেটা কি দেশের নাগরিকরা জানতে পারবে? না সেটাও নাগরিকরা জানতে পারবে না। দুর্নীতি সেই সুযোগ দেবে না। বরখাস্ত হওয়া পরিচালক ঘুষ টুস দিয়ে আইনি ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। কয়েক দিন পর এটা কেউ মনেও রাখবে না। ইস্যু একের পর এক তৈরি হতে থাকবে এবং তাতে সেটা হারিয়ে যাবে।
মাত্র কয়েক দিন আগে সুন্দরবনে একটি মৃত বাঘ পাওয়া গেল। এটাও রাষ্ট্রের দায়। সুন্দরবনের পরিবেশ ধ্বংস হওয়ার ফলে সেখানে প্রায়ই বিভিন্ন পশুপাখি মারা যাচ্ছে। যারা বিদেশে বিভিন্ন সাফারি পার্ক ভ্রমণ করেছেন তারা গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ককে সাফারি পার্ক মনে করেন না। কারণ এটা নামেমাত্র সাফারি পার্ক। আমার কাছে এই ব্যবস্থাকে নিষ্ঠুরতা মনে হয়। বনের পশুপাখি ধরে এনে অল্প জায়গায় আটকিয়ে রেখে যত দামি খাবার খাওয়ানো হোক না কেনো তাতে তাদের তেমন উন্নতি হয় না। এরপর যদি সেখানে ন্যূনতম যত্ন না নেয়া হয়, ঠিকমতো খাবার দেয়া না হয় তাহলে সেখানকার পশুপাখি বেঁচে থাকবে কিভাবে?
আমি দুইবার ওই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে গিয়ে আমার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভিতরে ছোট ছোট অনেক মূর্তি। ময়লা ফেলার স্থানগুলোকে মূর্তি আকারে তৈরি করা। এসব অনর্থক। সাফারি পার্কে তো অরিজিনাল পশু আছে, মূর্তির প্রয়োজন কী। শীত সিজনে সেখানে প্রচুর শিক্ষা সফর পিকনিক ইত্যাদি হয়। জমে ওঠে ব্যবসা। পিকনিকে আসা হাজার হাজার মানুষ এই সময়ে সাফারি পার্ককে ময়লার স্ত‚প বানিয়ে ফেলে! বিকট শব্দের মিউজিক। নাচানাচি। ভয়ানক ওই শব্দদূষণে সাফারি পার্কের পশুরা কিভাবে সুস্থ থাকবে, সেটা একটা প্রশ্ন। সাফারি পার্কের প্রধান গেটে অসামাজিক কাজ করার সুযোগ রয়েছে বলে শোনা যায়!
Leave a Reply