গ্যাসের দাম বাড়াতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশ তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। মূলত ভর্তুকি বেড়ে যাওয়া, বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানিতে অর্থ সংকট এবং আমদানি করা গ্যাস প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করে লোকসানে পড়ায় দাম বৃদ্ধির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে বিদ্যুতের দামও বাড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। ফলে চলতি বছর গ্যাস আমদানিতে অর্থের জোগান দিতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিকল্প দেখছে না সরকার। এমনিতেই করোনাকালে বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের ঊর্ধŸগতিতে নাকাল সাধারণ মানুষ। এমন অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনজীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের দাম বাড়াতে এরই মধ্যে একটি প্রস্তাব পেট্রোবাংলা থেকে জ¦ালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জ¦ালানি বিভাগ থেকে সেই প্রস্তাব পেয়েছে অনুমোদনও। পরে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া হলো বিতরণ কোম্পানিগুলো নিয়ম অনুযায়ী বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠাবে। বিইআরসি সেই প্রস্তাব মূল্যায়ন করে গণশুনানির আয়োজন করবে। গণশুনানি শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে যে কোনো সময় নতুন দাম ঘোষণা করবে বিইআরসি।
বিইআরসি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যমান গ্যাসের দামের প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে জালালাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের দাম বাড়াতে বিইআরসিতে প্রস্তাব জমা দেয়। তবে সেই প্রস্তাব নিয়ম অনুযায়ী না হওয়ায় ফেরত পাঠানো হয় বিইআরসি থেকে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তাদের প্রস্তাব পেট্রোবাংলায় জমা দিয়েছে। সেখানে প্রায় দ্বিগুণ দাম বাড়াতে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আবাসিকে সিঙ্গেল বা একচুলায় গ্যাসের দাম বিদ্যমান ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০০ টাকা এবং দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে ২১০০ টাকা করার। অন্য কোম্পানিগুলোকেও অভিন্ন প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে বিইআরসি থেকে।
জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসিতে লিখিত প্রস্তাব পাঠায় পেট্রোবাংলা। সেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স ও সিলেট গ্যাসফিল্ডের গ্যাসের ঘনমিটার প্রতি গড় ক্রয়মূল্য ১.২৬ টাকা। অথচ শেভরনের থেকে কিনতে হচ্ছে ২.৮৯ টাকা, তাল্লো থেকে ৩.১০ টাকা করে। অন্যদিকে, এলএনজির প্রকৃত ক্রয়মূল্য ৩৬.৬৯ টাকা- অন্যান্য চার্জ দিয়ে ৫০.৩৮ টাকা পড়ছে। দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘন ফুট এলএনজি আমদানি বিবেচনায় এই দর। আমদানীকৃত এলএনজির সঙ্গে দেশীয় গ্যাসের মিশ্রণ শেষে গড় খরচ দাঁড়াবে ৬৫ হাজার ২২৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এই টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে তুলতে হলে ঘনমিটার প্রতি বাড়তি গড় ২০.৩৫ টাকা করা নির্ধারণ করা জরুরি। এই দর দৈনিক ৮৫০ এমএমসিএফ এলএনজি আমদানি বিবেচনায়। আমদানির পরিমাণ বাড়তে থাকলে গড় মূল্য একই হারে বেড়ে যাবে।
বাখরাবাদ গ্যাস কোম্পানি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবে আবাসিকে প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান মূল্য ১২.৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭.৩৭ টাকা, সিএনজি প্রতি ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৬.০৪ টাকা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯.৯৭ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৭.০২ টাকা, ১০ দশমিক ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩.২৪ টাকা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে ১৩.৮৫ টাকা থেকে ৩০.০৯ টাকা, চা শিল্পে ১০.৭০ টাকা বাড়িয়ে ২৩.২৪ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় গ্যাসে বিদ্যমান দর ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯.৬৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী আলী মো. আল মামুন বলেন, জ¦ালানি বিভাগের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমদানি করা এলএনজির দামের চেয়ে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে অর্ধেক দামে। দেশের গ্যাসের চাহিদা মেটাতে দিন দিন আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হচ্ছে। সে জন্যই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে গ্যাসের দাম বাড়ানোর।
Leave a Reply