ইসলামের প্রতিটি নির্দেশনা তার অনুসারীদের জন্যে কল্যাণবান্ধব। ফলে, যে কুরআন মানুষের জীবনবিধান, তা পাঠ করলেও সওয়াব হয়। দুনিয়ার আর কোনো বিতাব অথবা বই নেই, যা শুধু পড়লেও পাঠকের সওয়াব হয়।
হাদিসে এসেছ, হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন: মানুষের মধ্যে আল্লাহর কিছু পরিবারভুক্ত লোক আছে।
সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা? তিনি বললেন, যারা কুরআনওয়ালা: এরা আল্লাহর পরিবারভুক্ত ও তার বিশেষ লোক। (তারগিব ওয়া তারহিব: ০২/৩০৩)
জিকির, কুরআন তেলাওয়াত ও এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। আল্লাহর ভালোবাসার মাধ্যমকে অবলম্বন করে যারা তার নৈকট্য লাভ করে, তারা তার পরিবারভুক্ত ও বিশেষ লোক। আল্লাহও তাদেরকে ভালোবাসেন এবং তারাও তাকে ভালোবাসে।
তিরমিজিতে হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) এর বর্ণনায় এসেছে- যে আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ পড়বে, সে একটি নেকি পাবে। আর প্রতিটি নেকি দশগুণের সমান। আমি বলি না: ‘আলিফ লাম মিম’ একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মিম একটি হরফ। (তিরমিজি, হা. ২৯১০)
কুরআন তেলাওয়াতের যেমন সওয়াব রয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে কুরআনের অর্থ ও মর্মাথ অনুধাবন করাও কুরআন-হাদিসেরই নির্দেশনা। এমন নয় যে, একজন সারাজীবন শুধু কুরআন তেলাওয়াতই করে যাবে বা শুধু কুরআন মুখস্ত করেই বসে থাকবে। বরং কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা বোঝার জন্যেও চেষ্টা করতে হবে।
যেমন ইরশাদ হয়েছে- “আমি আপনার প্রতি এ বরকতপূর্ণ কিতাব নামিয়েছি; তারা যেন এর আয়াতগুলো অনুধাবন করে এবং জ্ঞানীরা উপদেশ গ্রহণ করে।” (সুরা সোয়াদ: ২৯)
আরেক আয়াতে এসেছে, “তারা কি কুরআন নিয়ে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তকরণ বন্ধ?” (সুরা মোহাম্মাদ: ০৪)
আরেক আয়াতে এসেছে, “উপদেশ গ্রহণ করার জন্যে আমি কোরআনকে সহজ করেছি; অতএব, কেউ কি আছে চিন্তা করবে?” (সুরা কামার: ১৭) তবে, এর অর্থ এই নয় যে, কুরআন না বুঝে পড়লে কোনো সওয়াব হবে না। কেননা, কুরআন তেলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত।
আমরা জানি, নফল নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করার অনেক ফজিলতের কথা কুরআন-হাদিসে এসেছে। আচ্ছা, এই ফজিলত কারা লাভ করবে? যারা কুরআনের আরবি ভাষা জানে, শুধু তারাই? নাকি যারা অনারবি, তারাও?
নিশ্চয়ই এই ফজিলত আরবি-অনারবি, সবার জন্যেই অবারিত। এখন যদি কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াবকে এর অর্থ বুঝে পড়ার সাথে শর্তযুক্ত করা হয়, তাহলে দুনিয়ার অসংখ্য মানুষ যারা আরবি জানে না, তাদের তেলাওয়াতের কী হবে?
আল্লাহর অনুগ্রহ কি এতটাই সংকীর্ণ যে, তারা সওয়াব পাবে না? তা ছাড়া যেসব আয়াত বা হাদিসে কুরআন পড়ার ফজিলতের কথা এসেছে, সেসব জায়গায় কুরআন বুঝে পড়ার কোনো শর্ত আরোপ করা হয়নি।
বরং, সাধারণভাবে বলা হয়েছে, কুরআন তেলাওয়াত করলে প্রতি হরফে দশ নেকি। এখানে বুঝে না বুঝে পড়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
কুরআন তেলাওয়াতের সওয়াব আর কুরআন বুঝে পড়ার গুরুত্ব; দু’টি আলাদা বিষয়। একটিকে আরেকটির সাথে সাংঘর্ষিক মনে করা ঠিক নয়।
শুধু তেলাওয়াত করলে যেমন সওয়াবের কথা বর্ণিত আছে, তেমনি কুরআন বুঝে পড়াও শরিয়তের নির্দেশ। হ্যাঁ, আপনি যদি কুরআন বুঝে পড়েন, তাহলে এর প্রতি আমল করার গুরুত্ব আপনার কাছে বেড়ে যাবে।
এবং এটা খুব দরকারি একটা কাজ। আর এটাই হচ্ছে মূল কথা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: অনুবাদক, প্রাবন্ধিক
Leave a Reply