1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিএনপির সমাবেশের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে ডিএমপি জুলাই থেকে স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করবে টিসিবি রাফায় অভিযান নিয়ে নেতানিয়াহুকে আবারো সতর্ক করলেন বাইডেন জনগণকে বাদ দিয়ে পাতানো উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে : রিজভী রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল গঠনে নতুন অংশীদার খুঁজুন : আইওএমের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সাক্ষাৎ মানবাধিকার পরিস্থিতিতে অগ্রগতি নেই বাংলাদেশের জনপ্রিয়তায় অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তুলনা, ট্রলের শিকার কঙ্গনা গরমে টক দই খাচ্ছেন? নিয়ম মেনে না খেলে পড়তে পারেন বিপাকে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আজ ঢাকায় আসছেন

সাধারণ মানুষের আশা পূরণ হোক নতুন বছরে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২

পাঠকদের খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভেচ্ছা বিশেষ করে ব্যাংকারদের। প্রকৃতপক্ষে আজ থেকে তাদের ২০২২ সালের ব্যবসায়িক হিসাব শুরু হলো। শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে। ২০২১ সাল তারা শেষ করেছেন গতকাল। কেমন গেল তাদের ব্যবসা পরিস্থিতি? দৃশ্যত ব্যাংকের ব্যবসা ততটা সন্তোষজনক নয়, বিশেষ করে খেলাপি ঋণের দৃষ্টিকোণ থেকে। তবে আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে মনে হয় তাদের বছরটি ভালোই কেটেছে। কোনো বড় ধরনের বেহিসাবি কাজ ব্যাংকিং খাতে হয়নি। আমানতের পরিমাণ বেশ বেড়েছে।

২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ। ২০২০ সালের চেয়ে ১ শতাংশ বেশি। বলা বাহুল্য, আমানত সংকট ব্যাংকে ছিল না, বরং আমানতের পাহাড় অনেক ব্যাংকে। সরকারি ব্যাংকে আমানত বৃদ্ধির পরিমাণ খুবই বেশি। এর ফল হয়েছে খারাপ। আমানতকারী ও সঞ্চয়কারীদের ঠকিয়েছে অনেক ব্যাংক। যে সঞ্চয়ী আমানত ব্যাংকের আমানতের মূল ভিত্তি, তার ওপর ব্যাংকগুলো দুই-আড়াই শতাংশের বেশি সুদ দেয়নি। মাঝখানে ব্যাংকগুলো আমানতের ওপর সুদ দিতে অনীহা দেখালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ম করে দেয় মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে সুদের হার কম হবে না। সারা বছর সুদের ওপর নৈরাজ্য ছিল, যা বছর শেষে একটু স্বস্তিকর হয়। এদিকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এটা খুবই ভালো খবর।

সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা হলো ১২ শতাংশের ওপর। কিন্তু বছরখানেক ধরে প্রাইভেট ক্রেডিটের হার ৮ শতাংশ-সাড়ে ৮ শতাংশ ছিল। গেল অক্টোবরেই তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ হয়। এর অর্থ, ঋণের চাহিদা বেড়েছে। বাড়ার কারণ? ২০২১ সালের প্রথমার্ধ ছিল অস্থিতিশীল। বছরের শেষের দিকে অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করতে শুরু করে। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা, কেনা-বেচা ইত্যাদিতে একটু নড়াচড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। এর প্রতিফলনই ঘটে প্রাইভেট ক্রেডিট বৃদ্ধিতে। বেসরকারি খাত ব্যবসা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগের দিকে নজর দিচ্ছে।

এদিকে কৃষি খাতের অর্জন ও অগ্রগতি যথারীতি সন্তোষজনক। বোরো, আউশ ও আমনের ফলন ভালো হয়েছে। অবশ্য কিছুদিন আগের ঝড়-বৃষ্টি ফসলের কিছুটা ক্ষতি করেছে। বেশকিছু জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ডাল, সরিষা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি রবিশস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব কাঁচাবাজারে পড়েছে। এরপরও বলা যায়, কৃষি খাতের ‘পারফরম্যান্স’ ২০২১ সালে সন্তোষজনক ছিল, যদিও যথারীতি ভালো পরিমাণের গম ও চাল আমদানি করতে হয়েছে।

২০২১ সালে শেয়ারবাজার ছিল উত্থান-পতনের বাজার। বাজারে নতুন কোনো শেয়ার যোগ হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। পুরোনো শেয়ারের ওপরই বাজার ছিল। লেনদেনের পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি সত্ত্বেও বলা যায়, এর পরিমাণ সন্তোষজনক ছিল। অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে নিয়মের বাইরে বিনিয়োগ করেছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নাখোশ হতে দেখা যায়।

মজার বিষয় এই যে, সারা বছর ধরে খারাপ কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা গেছে। অথচ ভালো কোম্পানির শেয়ারের দামে স্থবিরতাই ছিল বলা যায়। বছরজুড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলে বাজারে বিনিয়োগযোগ্য ফান্ডের পরিমাণ নিয়ে। এতে বাজারে মাঝে মাঝে মন্দা দেখা গেছে। বাজারে পৌনে চারশর মতো কোম্পানি। এর মধ্যে ভালো কোম্পানির সংখ্যা খুবই কম। গড়ের হিসাবে শেয়ারবাজার মোটামুটি ভালোই গেছে। বছর শেষে ডিএসইর সূচক ৬ হাজার ৭০০-এর মতো ছিল, যা মন্দ নয়।

২০২১ সালে ওষুধ কোম্পানি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ওষুধের দোকান ভালো ব্যবসা করেছে। বছরের প্রথমদিকে খাবার-দাবারের হোটেলের ব্যবসা খুব বেশি ভালো যায়নি। কিন্তু বছরের শেষে করোনা পরিস্থিতিতে একটু স্বস্তি নেমে এলে খাবার-দাবারের হোটেলের ব্যবসা কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। মধ্যবিত্ত পর্যটনের প্রতি আগ্রহী হয়। বহুদিন তারা ঘরবন্দি ছিল। ছেলেমেয়েদের স্কুল বন্ধ ছিল।

এ প্রেক্ষাপটে ডিসেম্বরের দিকে পর্যটন ব্যবসায় একটা জোয়ার আসে। সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা ইত্যাদি পর্যটনকেন্দ্রে প্রচণ্ড ভিড় পরিলক্ষিত হয়। থাকার হোটেলের অভাব ঘটে। ওইসব জায়গায় খাবারের প্রচণ্ড চাহিদা দেখা দেয়। পরিবহণের ব্যবসাও জমে ওঠে। হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পরিবহণ ব্যবসায়ী, হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী, খাবার-দাবার দোকানের মালিকেরা প্রচুর ব্যবসা করে।

বিমান ভাড়া বাড়ে ব্যাপকহারে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মস্থলে যাওয়ায় টিকিটের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। এর সুযোগ নেয় দেশি-বিদেশি বিমান কোম্পানিগুলো। ফুলের ব্যবসাও ভালো হয়েছে। যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আসন্ন ফাল্গুন মাস, একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা বাড়তে পারে বলে ফুলচাষিরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

২০২১ সালের দুটি ভাগ। প্রথম ছয় মাস গেল অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২০-২০২১-এর অংশ। আর জুলাই-ডিসেম্বর চলতি অর্থবছরের প্রথম অংশ। অর্থবছরের প্রথম ভাগের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স দেখে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলেছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অবশ্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ১ শতাংশ।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, আমাদের জিডিপি হিসাবের ক্ষেত্রে ভিত্তিবছর পরিবর্তিত হয়েছে। জিডিপি হিসাবায়নে আগে ভিত্তিবছর ছিল ২০০৫-০৬। এখন থেকে তা হবে ২০১৫-১৬। ভিত্তিবছর পরিবর্তনের ফলে আমাদের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। তার মানে কি আমরা হঠাৎ করে অধিক ধনী হয়ে গেলাম? না, তা নয়। আগের হিসাবে কতগুলো খাতের মূল্য সংযোজন ধরা হয়নি। ধরা হলে মাথাপিছু আয় এখন যা হয়েছে তা-ই হতো। অর্থাৎ হিসাব ছিল ভুল, তা শুদ্ধ করা হয়েছে। সে যাই হোক, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার হওয়া একটা বড় ঘটনা।

আমরা যদি ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি, আমদানি, রাজস্ব আয়, রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও মূল্যস্ফীতির হিসাব দিয়ে ২০২১ সালকে বিচার করি, তাহলে দেখা যাবে ২০২১ সালের শেষের দিকে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে গতি ফিরে এসেছে। সেটা হয়েছে বড়দিন ও খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে সামনে রেখে। গত বছর তারা নববর্ষ সেভাবে পালন করতে পারেনি।

এবার তাই নববর্ষের প্রস্তুতি হিসাবে পণ্যের প্রচুর অর্ডার দেয়। ফলে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪ শতাংশ। এ সময়ে মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৯৭৯ কোটি ডলার। বলা বাহুল্য, এ রপ্তানি আয়ের ৮৫-৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক থেকে প্রাপ্ত। আমরা রপ্তানি পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্যকরণের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি সামান্যই। রপ্তানি বাড়লে আপসেই বাড়ে আমদানি। কারণ আমাদের অর্থনীতি আমদানিনির্ভর। পোশাক খাতের জন্য আমাদের বিপুল পরিমাণ কাপড়, সুতা, রং ইত্যাদি আমদানি করতে হয়।

এ ছাড়া বছরের শেষে নতুন উদ্যোগেরও সূত্রপাত হয়েছে, যা ‘প্রাইভেট ক্রেডিট’ বৃদ্ধির পরিমাণ থেকে বোঝা যায়। এ ছাড়া আমাদের আমদানিযোগ্য পণ্যের দরও আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে। অথচ এসব পণ্যের বাজার করোনাকালীন স্থিতিশীল, এমনকি নিুগামী ছিল। উচ্চতর পরিমাণের আমদানি, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে গত জুলাই-অক্টোবর এই চার মাসে আমাদের আমদানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। মোট আমদানির পরিমাণ এ সময়ে ছিল ২৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন (এক বিলিয়ন সমান ১০০ কোটি) ডলার। অথচ এর বিপরীতে আমাদের রপ্তানি আয় মাত্র ১৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।

এর ফল হচ্ছে, বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি। এর ফলে অর্থনীতির ওপর চাপ বেড়েছে। আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি চীনের সঙ্গে, তারপরই ভারত। আবার বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে। বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি বেশি বেশি আমদানির ফল। বেশি আমদানি মানেই ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি। এবং তা-ই ঘটছে। ফলে টাকার দাম ডলারের বিপরীতে বেশ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ডলারের দাম মোটামুটি দীর্ঘদিন ৮৫-৮৬ টাকায় স্থিতিশীল থাকার পর হয়ে যায় ৮৮-৮৯ টাকা। এটা কোনোভাবেই ভালো লক্ষণ নয়। কারণ এতে আমদানি ব্যয় বাড়বে। মূল্যস্ফীতির চাপ সৃষ্টি হবে।

আমদানি ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই দেশের ভেতরে বেচা-কেনা, লেনদেন, ব্যাংক লেনদেন ইত্যাদি বাড়ে। আর এর অর্থই হলো সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি। সরকার রাজস্ব আদায় করে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ককর হিসাবে। ব্যবসা বাড়লে এসব ক্ষেত্রে আদায়ও বাড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের রাজস্ব বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তা লক্ষ্যমাত্রামাফিক হয়নি। হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০২১ সালের জুলাই-নভেম্বর এই ৫ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মোট রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ২৬৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। আগের বছরের একই সময়ে মোট আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৭ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা।

আদায় বাড়লেও তা আশানুরূপ হয়নি। অথচ সরকারকে তার খরচ চালিয়ে যেতে হয়, যা কখনো কমতে চায় না। এ অবস্থায় সরকার ঋণ করছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। এতে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বেশ ক্ষতি হয়। কারণ সরকার যে ঋণ নেয়, তার ওপর সুদের হার কম। এর পরিণামে ঠকে আমানতকারীরা। ২০২১ সালে তা-ই ঘটেছে। সরকার আগে বেশি ঋণ নিত সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে। কিন্তু এখন তা সরকার করে না। নানারকম বিধিনিষেধ আরোপ করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ২০২১ সালে বেশ হ্রাস পেয়েছে। এতে সঞ্চয়পত্র ক্রেতা, বিশেষত মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত এবং সাধারণ ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের আয় হ্রাস পেয়েছে।

আবার বিনিয়োগের দ্বিতীয় কোনো বিকল্প ২০২১ সালে বাজারে পরিলক্ষিত হয়নি। সরকার বলছে ‘বন্ডের’ কথা। কিন্তু ‘বন্ড’ বিক্রি কোথায় হয়, কেউ জানে না। রাজস্ব না বাড়াতে সরকার এখন ভর্তুকি কমাতে উদ্যোগী হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার তড়িঘড়ি করে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। কিন্তু সরকার তেলের দাম আর কমায়নি। শোনা যাচ্ছে, সরকার এখন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়াবে। হয়তো ২০২২ সালের যে কোনো সময় এটি ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে দ্রব্যমূল্যের ওপর।

রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি। সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও রেমিট্যান্স পূরণ করে। করোনাকালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছিল। তখন বলা হয়েছিল, এটা বাড়ছে কারণ বাজারে হুন্ডিওয়ালারা এখন নেই। তাই সরকারি চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসছে। অতএব রেমিট্যান্সের পরিমাণ রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু করোনার ব্যাপকতা যখন কমতে থাকে, তখন রেমিট্যান্সেও টান পড়ে। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে আমাদের প্রবাসী আয় ছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ডলার। তা এখন একই সময়ে হ্রাস পেয়ে হয়েছে মাত্র ৮৬০ কোটি ডলার। এটি কোনোভাবেই আমাদের জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

দেখা যাচ্ছে, শত চেষ্টা সত্ত্বেও রেমিট্যান্সের জন্য নতুন বাজার সেভাবে যুক্ত হচ্ছে না। রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম, আমদানির পরিমাণ বেশি এবং রেমিট্যান্সের পরিমাণ কম-এর প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। যেখানে ডিসেম্বরেই আমাদের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে ডিসেম্বরের প্রথমে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এর পরও রিজার্ভ আমাদের জন্য সন্তোষজনক পর্যায়ে আছে বলা যায়।

এদিকে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির দিকে। ২০২১ সালে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অক্টোবরে তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এক্ষেত্রে কথা আছে। মূল্যস্ফীতির পরিমাণ খাদ্যে বেশি এবং গ্রামাঞ্চলে বেশি। এ কারণে মানুষের কষ্টের সীমা নেই। ২০২২ সালে এ মূল্যস্ফীতিই মানুষের বড় বিড়ম্বনার কারণ হতে পারে। করোনা যায় যায় করেও বিদ্যমান।

এর ওমিক্রন ধরনটি এখন সারাবিশ্বকে তছনছ করছে। আমরা কি এর থেকে মুক্ত থাকতে পারব? সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি কীভাবে হবে? যে গরিব মানুষরা দারিদ্র্যসীমার নিচে আছে এবং নতুন করে যারা দরিদ্র হচ্ছে এবং শহুরে দারিদ্র্য সরকার কীভাবে সামলায় তা দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার সুবিধা পেয়েছে বড় বড় ব্যবসায়ী। সাধারণ ব্যবসায়ী ও ছোট উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হয়েছে। তাদের জন্য ২০২২ সালে সরকার কী করে, তাও আমাদের দেখতে হবে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে এখনো শৃঙ্খলা আসেনি। শ্রেণিবদ্ধকরণের (ক্লাসিফিকেশন) নীতিমালা আগের জায়গায় বহাল হলে এক ধাক্কায় খেলাপি ঋণ আসমানে উঠবে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ‘ব্যবসায়ীবান্ধব’। তা হোক, তবে সেটা যেন শুধু ‘বড় ব্যবসায়ীবান্ধব’ বাজেট না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। স্বাস্থ্য খাতের খরচ হতাশাজনক। ২০২২ সালে কি তা বাড়বে? ওমিক্রন প্রতিরোধের কী ব্যবস্থা হচ্ছে?

পরিশেষে আবারও বলতে চাই, সাধারণ মানুষের কাছে আমদানি, রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ইত্যাদি কোনো আশা জাগায় না। তারা দেখে দ্রব্যমূল্য। এই নিরিখেই সরকারের সাফল্যের বিচার। এভাবে বিচার করে বলা যায়, মূল্য পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। সবে আমন ফসল উঠেছে, চাল-গম আমদানিও হচ্ছে; তবু ডিসেম্বর মাসের শেষে কেজিপ্রতি চালের দাম বেড়েছে তিন টাকা। এটা কোনোমতেই কাম্য নয়। ২০২২ সাল তাই হবে পর্যবেক্ষণের বছর, আশা পূরণের বছর।

ড. আর এম দেবনাথ : অর্থনীতি বিশ্লেষক; সাবেক শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com