মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে গ্রেপ্তার হালেন আলোচিত-সমালোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। তিনি এখন আছেন কারাগারে। অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার আগেই তাকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা, নিন্দার ঝড়। তার জীবনযাপন নিয়ে মন্তব্যেরও শেষ নেই। যা নিয়ে তার সহকর্মীরা পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষা নিয়েছেন, নিতেও বলেছেন।
গিয়াসউদ্দিন সেলিম : পরীমনিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হলো, সেটা দেখে প্রথমে সবাই চিন্তায় পড়ে গেছে! তিনি কী এমন করেছেন? নিশ্চয় বড় কোনো অপরাধ। না হলে এভাবে গ্রেপ্তার হবে কেন? কিন্তু এখন অনেকেই তার পক্ষে। তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছেন সবাই। পরীকা-ে একটি বিষয় বুঝেছি, অন্যের ভুল-ত্রুটি ধরার জন্য আমরা মিডিয়া ব্যবহার করছি। নিজে কেমন সেই চিন্তাটা অনেকেই করেন না। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পর একজন মানুষকে অপরাধী বলা যায়। কিন্তু সেটা হচ্ছে না, তার আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসুস্থভাবে আমরা বিচার করে ফেলছি।
গাজী মাহবুব : চলচ্চিত্রে যে কেউ আপন নয় তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে পরীমনিকা- দেখে। যে শিল্পী মাথার ওপর থাকার কথা ছিল আজ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছেন! তবু আমাদের বিবেক জাগ্রত হচ্ছে না। কেউ কেউ এটি বিনোদন হিসেবে নিয়েছে। হয়েছেন বাণিজ্যের শিকার। এই সব বাণিজ্যের বর্বরতা, অসভ্যতা দেশের নারী সমাজের জন্য চরম লজ্জার। আমরা সিনেমার মানুষ এসব বাণিজ্য বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত এবং শঙ্কিত। আমাদের জীবনেও নানাভাবে বিপদ আসতে পারে। আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত, পরীমনির সঙ্গে সিনেমার মানুষরা যা করেছেন আমাদের সঙ্গেও তাই হবে! এমন দৃশ্য দেখে খুবই কষ্ট পাচ্ছি। অনেক তো হলো এবার এর অবসান হওয়া দরকার। প্রয়াত নায়ক মান্না বুঝতে পেরেছিলেন- এ অঙ্গনের কেউ আপন হয় না। সবাই সুযোগ সন্ধানী। মান্না বলে গেছেন- পৃথিবীতে চলচ্চিত্র জগতের মতো স্বার্থপর কোনো জগৎ আর নেই। এখানে আমরা সবাই বাণিজ্যিক। হৃদয়, প্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, চাওয়া-পাওয়া সব মেকি।
শাকিব খান : বিগত দিনেও একাধিক সিনিয়র শিল্পী এর চেয়েও ভয়ঙ্কর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু তখনকার শিল্পী সমিতি অভিযুক্ত সদস্যের সদস্যপদ স্থগিত করেনি। বরং পাশে ছিল, রাস্তায় নেমেছিল। যেটা হওয়া উচিত। কিন্তু এখনকার শিল্পী সমিতির এসব আচারণ বিতর্কিত। আবারও বোঝা গেল, এ শিল্পী সমিতি সবাইকে এক করতে পারেনি, বরং বিচ্ছিন্ন করেছে। বিভেদ তৈরি করে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নষ্ট করেছে। হয়তো এজন্য চলচ্চিত্রের আজ এই দুর্দশা। এটা দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত- এমন চলতে থাকলে সামনে ঘোর বিপদ।
জ্যোতিকা জ্যোতি : পরীমনির এই সংকট সময়ে একজন নারী হিসেবে আমি চাই, তার সঙ্গে যেন সঠিক বিচার করা হয়। আর যদি তার অপরাধ হয় উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, তা হলে যারা তাকে শৃঙ্খলা থেকে বের করল, তাদেরকেও ধরা হোক, আইনের আওতায় আনা হোক। তাদেরও বিচার করা হোক। তবে পরীমনির এই ইস্যু নিয়ে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। আমাদের বোঝা উচিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভালো কাজের চেয়ে খারাপটা নিয়েই বেশি আলোচনা হয়।
আজমেরী হক বাঁধন : শিক্ষা একটাই, আমরা কারোর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারি না। আর আমাদের এ শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। পরিবারে কোনো বাচ্চাকে স্পেস দিতে আমরা শিখি না। কেন অন্যের জীবন নিয়ে মাথাব্যথা থাকবে? আমাদের নিজেরই তো হাজারটা কাজ থাকার কথা, নিজেকে সংশোধন করার কথা ছিল, দেশ, পরিবারের জন্য কাজ করার কথা ছিল। আমরা কেন চায়ের আড্ডায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের সঙ্গে মানুষেরই কুৎসা করছি? এটা কিন্তু ভীষণই ভয়ঙ্কর! আমাদের দেশে একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে যে এখানে প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটাতে পারে। পরীর বিষয়ে কী ঘটেছে, তা জানি না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবেও এ সংস্কৃতির শিকার।
রাশিদ পলাশ : আমরা সব সময়ই ভালো কাজের পক্ষে। অপরাধ করলে তার বিচার হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যেন হয় ন্যায়বিচার। তবে এই সময়ে আবার একটা বিষয়ে শিক্ষা হয়েছে আমাদের, বিপদে যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু। এই সময় পরীমনির শুটিংয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কারাগারে। মানুষ ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়, তাকে বারবার রিমান্ডে এনে মানসিকভাবে অসুস্থ করা হচ্ছে। এতে তার শিল্পী সত্তা নষ্ট হতে পারে। আমি জানি না পরীমনি কবে মুক্তি পাবে। আদৌ সে শুটিংয়ে ফিরতে পারবে কিনা তাও জানি না।
Leave a Reply