চলচ্চিত্রশিল্প বাঁচাতে প্রথমেই দরকার সিনেমা হলের সংস্কার। নতুন নতুন সিনেপ্লেক্স বা মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ। বর্তমানে যে ৬০-৭০টি আছে সেগুলোর অধিকাংশই ভাড়াটিয়া। সেই ৪০ বছর আগের সিনেমা হলের মালিক উদ্যোক্তারা অনেকেই বেঁচে নেই। সিনেমা হলের উত্তরাধিকার নিয়ে চলছে নানা ঝামেলা। একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই। আবার মফস্বলের যে হল আছে সেগুলো বুকিং এজেন্টদের কাছে জিম্মি। এ অবস্থায় প্রকৃত উদ্যোক্তা ও সরকার উদ্যোগী হয়ে প্রতিটি উপজেলায় সিনেপ্লেক্স, জেলাভিত্তিক তথ্য কমপ্লেক্সগুলোতে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স, দেশের ১৩টি হাইটেক পার্কে মাল্টিপ্লেক্স নিয়ে কাজ শুরু করেছে।
আমাদের দেশের সিনেমা হলের পরিবেশ নিয়ে এখন পর্যন্ত কম লেখালেখি, বৈঠক হয়নি। কিন্তু একমাত্র ঈদের সময় হল সংস্কার করা হয়। এ ছাড়া সারা বছরই থাকে অযতœ-অবহেলায়। কিন্তু হল মালিকরা বলেন, সিনেমা না থাকলে হল সংস্কার করে লাভ কী? এমনিতেই এই ব্যবসা এখন লোকসানের। কিন্তু দর্শক এবং ভালো চলচ্চিত্রের অভাবে দেশের সিনেমা হলগুলো যখন এক এক করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন একটা একটা করে বাড়ছে মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল। রাজধানীর বসুন্ধরা সিটিতে তিনটি হল দিয়ে চালু হয়েছিল স্টার সিনেপ্লেক্স। এটা বেড়ে এখন ১২টি হলে সিনেমা দেখাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ সংখ্যা বেড়ে ১০০ হবে বলে জানিয়েছেন স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান রুহেল।
তিনি বলেন, ‘সিনেপ্লেক্সের এই বিস্তারের অর্থ আসলে সিনেমার দর্শক কমেনি; দর্শকদের রুচি পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। দর্শক এখনো সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হওয়ার পেছনে মূল কারণ, পুরনো সিনেমা হলগুলো তাল মেলাতে না পারা। আর বাংলাদেশের সিনেমা নির্মাতারা পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নতুন ধরনের সিনেমা বানাতে ব্যর্থ হওয়ার ফলে গতানুগতিক হলগুলো চলছে না।’
আগামীকাল থেকে মিরপুরে স্টার সিনেপ্লেক্সের একটি শাখা চালু হচ্ছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে সনি স্টার সিনেপ্লেক্স। হলটি মানুষের কাছে সনি সিনেমা হল নামে সুপরিচিত। এই হলটি ভেঙেই আধুনিক স্টার সিনেপ্লেক্স করা হয়েছে। দুই বছরের অপেক্ষা শেষে আগামীকাল এর যাত্রা শুরু হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সনি ও স্টার সিনেপ্লেক্সের মধ্যে চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী হলটি ১৫ বছরের জন্য ভাড়া নেয় স্টার সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সনি স্টার সিনেপ্লেক্সে তিনটি স্ক্রিন থাকবে। আসন সংখ্যা থাকবে মোট ৮০০টি। মিরপুরের কথা বিবেচনা রেখে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হবে।
এদিকে গত ১১ আগস্ট থেকে করোনা সংক্রমণ কমায় ঘোষিত লকডাউন শেষ হয়েছে। সিনেমা হলগুলোও চালু রাখার অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু এখনো দেশের বেশিরভাগ হলই বন্ধ। এ কারণে নেই নতুন সিনেমা, নেই দর্শক। স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটির মূল শাখাসহ রাইফেল স্কয়ার ও মহাখালীর শাখা দুটিও চালু রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু হলগুলোতে চলছে পুরনো সিনেমাই। স্টার সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চাইলেই নতুন সিনেমা মুক্তি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ নতুন সিনেমার অভাব সারাবিশে^। করোনার কারণে দেশের অনেক বিগ বাজেটের সিনেমার মুক্তি আটকে আছে।
আন্তর্জাতিক বাজারেও অনেক সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায়। আমাদের হাতেও হলিউডের অন্য সিনেমা আছে, যেগুলো সেন্সরে জমা আছে। সেন্সর সার্টিফিকেট পেলেই সেগুলো মুক্তি দেওয়া হবে। সবাই আসলে পৃথিবী স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।’ সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখা খোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষ নিজেকে সুস্থ রাখতে ব্যস্ত। তাই বিনোদন নিয়ে কেউ ভাবছে না। আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম সারাদেশে শাখা খোলার। সেটা খুলব। তবে সময় লাগবে। পরিস্থিতি কোনদিকে যায় সেটা আগে বোঝার বিষয় আছে। তার পর সিদ্ধান্ত নেব। তবে আগে বিভাগীয় শহরগুলোতে শাখা খোলা হবে।’
সারা পৃথিবীতে সিঙ্গেল স্ক্রিন বা সিনেমা হলের ধারণা বদলে যায় গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে। পুরো পৃথিবীতেই বিনোদনের জন্য বদলাতে থাকে সিনেমা হলগুলো। এক ছাদের নিচে একাধিক সিনেমা হল বা স্ক্রিন নিয়ে শুরু হয় মাল্টিপ্লেক্স কনসেপ্ট। দিল্লিতে ১৯৯৭ সালে চালু হয় পিভিআর নামের একটি মাল্টিপ্লেক্স। একসঙ্গে চারটা স্ক্রিন নিয়ে শুরু হয় এটি। তার পর থেকে ক্রমান্বয়ে শাখা বাড়াতে থাকেন তারা। পৃথিবীজুড়েই এক স্ক্রিনের সিনেমা হলগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছিল, তখন একসঙ্গে একাধিক স্ক্রিনের মাল্টিপ্লেক্স সফল হয়ে যায়। যেটা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়েই। পছন্দমতো হলে ঢুকে সিনেমা দেখা, খাওয়া-দাওয়া সবকিছুই মেলে এক হলে। সিনেমা দেখার ঝকঝকে বড় পর্দা, সাউন্ড, আসন এমনকি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সবকিছুই সিনেমার জন্য সহায়ক বলে মনে করেন সবাই। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্র থেকে পছন্দের চলচ্চিত্র বেছে নেওয়ার সুযোগ। সব মিলিয়ে দর্শকের কাছে মাল্টিপ্লেক্স জায়গা করে নিয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে আগেভাগে শুরু হলেও আমাদের দেশে মাল্টিপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালে। স্টার সিনেপ্লেক্স নামে নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে তিনটি স্ক্রিনের মাধ্যমে দর্শকদের সিনেমা দেখানো শুরু করে।
Leave a Reply