1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
রেমিট্যান্স ও প্রবাসীদের দেশে ফেরা নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে : পলক মার্কিন নির্বাচনের আগেই ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে! অর্থনীতিকে পঙ্গু করতেই ষড়যন্ত্র করে দেশকে অস্থিতিশীল করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবে না : ঢাবি ভিসি হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়নি, গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে : র‌্যাব বিক্ষোভ ঠেকাতে পাঞ্জাব-ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি সাম্প্রতিক সংঘর্ষে আহতদের দেখতে ঢামেক হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাকর্মীদের গুম করে নির্যাতনের পর আদালতে তোলা হচ্ছে : মির্জা ফখরুল আমাকে হত্যা করতেই হামলা চালানো হয় : সালমান খান বিটিভি ভবনের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন করলেন প্রধানমন্ত্রী

মজুরি বৈষম্যে নারী শ্রমিক

মুনিয়া মুন
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সমঅধিকার নিয়ে অনেক সভা-সেমিনার হয়ে থাকে। কিন্তু দেশে মজুরি-বৈষম্য কমেনি। পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেন নারী। কিন্তু তাদের অর্ধেক মজুরি দেয়া হয়। নারীরা মজুরি বৈষম্যের বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন না। বছর ঘুরে নারী দিবস আসে। তখন নারী শ্রমিকদের মজুরি-বৈষম্যের শিকার হওয়ার বিষয়টি কপচানো হয়। তাদের মজুরির কোনো পরিবর্তন হয় না।

একসময় যারা ঝিয়ের কাজ করতেন এখন তারা মাঠে-ঘাটে কাজ করেন। অনেকে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন, বিশেষত নারী শ্রমিকরা বোরো ফসলের পরিচর্যা, ধানের চারা রোপণ, ধান ও মাটি কাটা এবং ইটভাটায় কাজ করে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে এক দিনের কাজ ধরা হয়। স্থানীয়ভাবে এক দিনের পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ টাকা। এ হিসাবে একজন নারী শ্রমিকেরও ৪০০ টাকার পাওয়ার কথা, কিন্তু তারা সমান কাজ করেও পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি চাকরি তথা আনুষ্ঠানিক খাতে নারী-পুরুষের বেতন-বৈষম্য অনেকটা কম হলেও অনানুষ্ঠানিক খাতে বৈষম্য এখনো তীব্র। গবেষক, নারী উদ্যোক্তা এবং সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে- সর্বস্তরের আয়বৈষম্য নিরসন করা এখনো বাংলাদেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

কাজের মধ্যে পুরুষরা বিশ্রামের বিরতি নিলেও নারীরা তা তেমন নেন না; কিন্তু পুরুষরা ৪০০ টাকা মজুরি পেলে নারীরা পান অর্ধেক। নারীরা ইটভাটায় কাজ করেন। ইট বহন কষ্টকর কাজ। পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা পেলে, নারীরা সর্বোচ্চ পান সেখানে ৩০০ টাকা। সমান টাকা চাইলে কাজ থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় পুরুষ শ্রমিকরা মাটি কেটে দেন, সেই মাটি বহন করেন একজন নারী শ্রমিক। কী মর্মান্তিক। তারপরও নারী শ্রমিকরা বেশি মজুরি-বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। পাথর ভাঙা, প্রক্রিয়াকরণ, সমতল ভূমিতে চাষ করা, চায়ের পরিচর্যা, চা-পাতা সংগ্রহ, চা-কারখানা, ভবন নির্মাণ ও কৃষিকাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিনই পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজে অংশ নিচ্ছেন নারী শ্রমিকরা; কিন্তু মজুরি সমান নয়।

বর্তমানে বাগান থেকে কাঁচা চা-পাতা সংগ্রহ করতে আট ঘণ্টা কাজ করে একজন নারী শ্রমিক পান ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর পুরুষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। বোরো ধান রোপণ, মরিচ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ক্ষেত নিড়ানিসহ অন্যান্য কৃষিকাজে পুরুষ শ্রমিকরা সারা দিন কাজ করে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পেলেও একই কাজ করে নারী শ্রমিকরা পাচ্ছেন ২০০ টাকা। প্রতিদিন সকালে পুরুষ সদস্যদের অন্তত এক ঘণ্টা আগে কাজে যোগ দেন নারীরা। দিন শেষে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পরে কর্মস্থল ত্যাগ করতে হয় তাদের। এরপরও তাদের মজুরি বৈষম্যের শিকার হতে হয়। কাজের ধরন ও সময় অনুসারে মুজরি নির্ধারণ করা হলেও নারীরা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকের অর্ধেক কিংবা তার চেয়েও কম মজুরি পান। একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক দুই বেলায় ৫০০ টাকা মজুরি পেলেও একজন নারী পান ৩০০ টাকা। পরিবারের ক্ষুধা নিবারণে বৈষম্য উপেক্ষা করে কাজ করতে হয় তাদের। অসুস্থ হলে কিংবা কাজে একটু ত্রুটি ধরা পড়লে বেতন কাটা থেকে শুরু করে কাজ হারাতে হয়। অনেকসময় কটূক্তির শিকার হলেও মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। কাজে যোগ দিতে এক ঘণ্টা দেরি হলে দেড় ঘণ্টা শ্রম দিতে হয়।

অনেকসময় বাচ্চা কোলে নিয়েও তাদের কাজ করতে হয়। এ জন্য ‘কাজের ক্ষতি হচ্ছে’ অভিযোগে অতিরিক্ত আরো এক থেকে দেড় ঘণ্টা কাজ আদায় করে নেয়া হয়। নারী নেত্রীদের অভিযোগ, দেশের শ্রমবাজারে এখনো নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন খাতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। কিন্তু পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বেশি শ্রম দিয়েও পুরুষ শ্রমিকের সমান মজুরি পান না নারী। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে কম বা তাদের চেয়ে অর্ধেক মজুরি পাচ্ছেন। কেবল ব্যক্তিমালিকানাধীন বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানেও এমন ঘটনা দেখা গেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সবাই মাস্টাররোলে কর্মরত। বিভিন্ন সময় কাজের প্রয়োজনে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে এসব শ্রমিককে নিয়োগ দেয়া হয়। পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারীদেরও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দু’টি ক্যাটাগরিতে নিয়োগ দেয়া হয়। দক্ষ ও অদক্ষতার ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক বলে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। নারীরা কাজে কোনো ফাঁকি দেন না। যথাসময়েই কাজে হাজির হন।

কর্মজীবী নারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে কর্মক্ষেত্রে মজুরিবৈষম্য মেনে নিয়েই কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকতে হচ্ছে তাদের। ঘরের কাজ সেরে বাইরের কাজে শরিক হচ্ছেন তারা। এভাবে পুরুষের পাশাপাশি সংসারে আর্থিক সহায়তা দিতে অবদান রাখছেন তারা। এ জন্য তাদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। তবে এই নারীদের ভাষ্য, কারণে-অকারণে কর্মচ্যুতির শিকার হন তারা। অনেকসময় নির্যাতনের শিকারও হতে হচ্ছে তাদের। তৈরী পোশাক শিল্প, কৃষিকাজ, ইটভাটা, গৃহস্থালি, নির্মাণ ও বিভিন্ন কলকারখানার কাজসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক কোনো কাজেই নারীরা পুরুষের সমান মজুরি পান না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ বৈষম্য আরো বেশি। এ জন্য দেশের নারী শ্রমিক সংগঠনগুলো আন্দোলনও করে যাচ্ছে।

মালিকদের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ‘সস্তা শ্রমে কাজটা আদায় করা। নারীদের কাছ থেকে সস্তা মূল্যে শ্রম আদায় করা যায়, সে জন্যই তারা এমন বৈষম্য করে যাচ্ছে। রাষ্ট্র্রীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো না থাকায় নারীদের কম মজুরি দিয়ে বঞ্চিত করছেন মালিকরা। বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকির প্রয়োজন। তা না হলে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের বৈষম্য কমবে না।’ দেশের পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের ৮০ শতাংশই নারী। বাকি ২০ শতাংশ পুরুষ। তার মানে হচ্ছে নারী শ্রমিকরাই দক্ষ। দক্ষ না হলে তো এই শিল্পটা আজ বিশ্বদরবারে এই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারত না। নারীরা দক্ষতা ও শৃঙ্খলভাবে কাজ করেন। সে হিসেবে নারীদের অংশশ্রহণ বাড়ছে। কিন্তু এরপরও পুরুষের চেয়ে তাদের মজুরি কম দেয়া হয়। তাদের ঠকানো যায়। এটা আমাদের দেশে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্য। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণেই এটা হচ্ছে। তবে এখন প্রতিবাদ হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবর্তনও হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মজুরিবৈষম্য মেনে নিয়েই পুরুষের সাথে লড়াই করে কাজ করে চলছেন তারা। কখনো সমান কিংবা কখনো বেশি কাজ করছেন। তবু কম মজুরিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

বাঁচতে হলে কাজ করতে হবে এমন প্রতিজ্ঞা করেই যেন বৈষম্যময় পরিবেশে কাজে নেমেছেন। সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, পদায়ন হয়েছে, নারী-পুরুষ সমন্বয়ে কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রান্তিক পর্যায়ে এ বাস্তবতা ভিন্ন। নারীরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন, তারা কাজে ফাঁকি দেন না। সে জন্যই অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নারীদের শ্রমিক হিসেবে নিতে অনেকেই আগ্রহী হন; কিন্তু মজুরি দেয়ার সময় তাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। আমরা চাই, এ ধরনের মানসিকতা থেকে সমাজ মুক্তি পাক। সমাজে নারী ও পুরুষের মজুরিবৈষম্য দূর হয়ে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হোক।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com