লিওনেল মেসি আর বার্সেলোনায় ১০ নম্বর জার্সিতে খেলতে নামবেন না। নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে কাতালান ক্লাবটি। আর এর মধ্য দিয়ে ২১ বছরের সম্পর্ক ভেঙে গেল। এদিকে গুঞ্জন মেসির প্রাইভেট বিমান ফ্রান্সের পথে রয়েছে। সম্ভবত তিনি পিএসজিতে যোগদান করছেন। মেসির এই চলে যাওয়ার খবরে হাহাকার দেখা দিয়েছে। রাতেই বার্সেলোনার স্টেডিয়াম
ন্যু ক্যাম্পে শয়ে শয়ে ভক্ত ও অনুরাগী হাজির হন। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তারা। মেসির এই বিদায় মানতে পারছেন না তারা। লিওনেল মেসি নিজেও বার্সেলোনায় থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক জটিলতা ও স্প্যানিশ লা লিগার কঠোর নিয়মকানুন ভেদ করে থাকতে পারলেন না। মেসি আর বার্সার নয়। এই খবরে হতাশায়
ভেঙে পড়েছেন সমর্থকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে সর্বত্র মেসির জন্য মাতম চলছে।
বার্সেলোনা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে। এবার মেসি কোথায় যাবেন? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। নেইমার গতকাল টুইটারে পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা গেছে তিনি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের জার্সিতে মেসিকে জড়িয়ে
ধরেছেন। ভক্ত ও সমর্থকরা আশা করছেন মেসি হয়তো ফ্রান্সের ওই ক্লাবটিতে যোগ দেবেন। এদিকে ইংল্যান্ডের ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিতেও তার যাওয়া নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। ম্যানসিটিতে তার সাবেক কোচ পেপ গার্দিওলা রয়েছেন। করোনা মহামারীর মধ্যে বিশে^র একসময়ের সবচেয়ে বেশি বেতনভুক্ত ফুটবলারকে রাখা বা চুক্তিবদ্ধ করা সহজ কথা নয়।
মেসির চলে যাওয়া নিয়ে কাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন বার্সেলোনার ক্লাব প্রেসিডেন্ট লাপোর্তে। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ক্লাবকে যে অবস্থায় এসে পেয়েছি, তা আসলে বর্ণনাতীত। লোকসানের অঙ্কটা আমরা যা ভেবেছিলাম তার থেকে অনেক বেশি। আমরা যা ভেবেছিলাম তার থেকে খরচের পরিমাণটাও অনেক বেশি। মোট বেতন ক্লাবের মোট আয়ের ১১০ শতাংশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। লা লিগার এফএফপি (ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে) নিয়ে কঠোর নিয়ম আছে; কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে আমাদের ক্লাবের বেতন কাঠামোতে কোনো নির্দিষ্ট সীমাই রাখা হয়নি এত দিন। ঋণের পরিমাণটাও তাই হয়ে গেছে আকাশচুম্বী। এমতাবস্থায় মেসির চুক্তি নবায়ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। মেসির চুক্তিটা কীভাবে করা যায়, সেটি নিয়ে আমরা তাই অনেক ভেবেছি, ঝুঁকিও নিতে চেয়েছি; কিন্তু চূড়ান্ত হিসাব-নিকাশের পর আমাদের মনে হয়েছে ক্লাবের জন্য সেই ঝুঁকিটা এই মুহূর্তে অনেক বেশি হয়ে যাবে। ক্লাবের টেলিভিশন স্বত্বকে আমি ৫০ বছরের মতো সময় ধরে বন্ধক রাখতে রাজি নই। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটা ১২২ বছরের পুরনো। মেসির প্রতি আমরা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব; কিন্তু কোনো খেলোয়াড়, কোচ বা সভাপতি এই ক্লাবের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি ক্লাবের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় মেসিও নয়। তাই এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ একটা বিনিয়োগে আমি কখনই আগ্রহী নই। মেসিকে আমরা অবশ্যই দলে রাখতে চেয়েছিলাম; কিন্তু যখনই আমরা ক্লাবের আর্থিক অবস্থা নিয়ে সবিস্তারে জেনেছি, আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই চুক্তি নবায়ন করলে ক্লাবের ভারসাম্যের জন্য হানিকর হয়ে উঠবে। মেসি বার্সায় থাকতেই চেয়েছিল, সদিচ্ছাটা ছিল পরিষ্কার। আমি তাই এই চুক্তির আলোচনায় সংশ্লিষ্ট ক্লাব ও মেসির প্রতিনিধিদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
মেসিকে রাখার শেষ চেষ্টা করেছে বার্সেলোনা। মেসিও থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু শেষে তাকে রাখা যায়নি। ২০০০ সালে মেসি কিশোর বয়সে যোগ দেন বার্সেলোনায়। ২০০৪ সাল থেকে সিনিয়র লেভেলে খেলেন। ক্লাব পর্যায়ে সম্ভাব্য সব জিতেছেন তিনি। ক্যারিয়ারটা এখানেই শেষ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না। এখন মেসি নতুন কোন চ্যালেঞ্জ হাতে নেবেন সেটা দেখার অপেক্ষা। কোন ক্লাবে যাবেন আর তার জাদু দেখাবেন সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
Leave a Reply