ঘরে ফেরা হলো না ফুটবলের। ‘ইটস কামিং হোম’ স্বপ্নই হয়ে রইল। ইংল্যান্ডের ৫৫ বছরের অপেক্ষার অবসান হলো না। ‘ইটস গোয়িং রোম’। ইংল্যান্ডকে কাঁদিয়ে চ্যাম্পিয়ন ইতালি। তারা এখন ইউরোপের ফুটবলের সিংহাসনে। ‘হোম অব ফুটবল’-এ রবিবাসরীয় রজনী আবারও বিষণ্নতায় ডোবাল ৬৫ হাজার ইংল্যান্ড ভক্তকে। ইউরোপের দুই বনেদি ফুটবল শক্তির শৌর্য-ঐশ্বর্য শেষে হাসল পাওলো রসি, রবার্তো ব্যাজ্জিওর দেশ। ইউরো ২০২০ এসে মিলিত হলো শেষ বিন্দুর মোহনায়।
ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত থাকার পর অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও নিষ্ফলা থাকে ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত ইউরো ২০২০-এর শিরোপা নির্ধারণের জন্য টাইব্রেকারের আশ্রয় নিতে হয়। টাইব্রেকারে ইতালি জয়ী হয় ৩-২ গোলে।
ম্যাচের বয়স তখন এক মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। সব দর্শক নিজ নিজ আসনে ঠিকমতো বসতে পারেননি। তখনই ভোজবাজির মতো গোল। কর্নার থেকে পাওয়া বলে কিয়েরান ট্রিপিয়ের ক্রস ভাসিয়ে দেন বাঁদিকে। লুক শ-এর বিদ্যুৎ গতির ভলি চোখের পলকে ঠাঁই নেয় পোস্টে। ইংল্যান্ড এগিয়ে যায় ১-০ গোলে। দেশের হয়ে এটি প্রথম গোল ম্যানইউর ফুলব্যাক শ’র। গোটা ওয়েম্বলি আনন্দে আত্মহারা। ক্যামেরায় এ সময় ধরা পড়ে ভিআইপি বক্সে ডেভিড বেকহ্যাম ও হলিউড অভিনেতা টম ক্রুজের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। তাদের সঙ্গে ছিলেন স্যার জিওফ হার্স্ট। ম্যাচের ৬৭ মিনিটে গোল শোধ করে দেয় ইতালি। কর্নারের বল প্রথম দফায় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড। ফিরতি বলে সমতাসূচক গোল করেন লিওনার্দো বোনুচ্চি (১-১)। ইউরোর ফাইনালে সবচেয়ে বেশি বয়সে গোল করার নজির এটি। বোনুচ্চি ৩৪ বছর ৭১ দিন বয়সে গোল করেন। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন পশ্চিম জার্মানির হয়ে হলোজেনবেইন ৩০ বছর বয়সে গোল করেছিলেন।
১৪ ম্যাচ পর ইতালি খেলার শুরুতে প্রথম গোল হজম করল কাল। এরআগে প্রতিপক্ষ তাদের জালে প্রথম গোল দিয়েছিল গত অক্টোবরে। ম্যাচের শুরুতেই ইংল্যান্ড এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রিটিশদের আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। দুই ইংল্যান্ড লিজেন্ড অ্যালান শিয়েরার ও গ্যারি লিনেকার টুইটারে তাৎক্ষণিকভাবে অভিনন্দন জানান শ’কে। এই গোল করার মধ্যদিয়ে শ ইউরোর ইতিহাসে একটি রেকর্ড গড়েন। দুই মিনিটে করা তার গোলটিই ইউরোর কোনো ফাইনালে দ্রুততম গোল। ১৯৬৪ সালে পেরেদা ছয় মিনিটে গোল করেছিলেন। আগের ১৫টি ইউরোর ফাইনালে প্রথমে গোল করা দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১১ বার। ইউরোর ফাইনালে প্রথমে গোল করে ম্যাচ হারা শেষ দল হলো ইতালি। মাত্র তিনটি দেশ এ পর্যন্ত ঘরের মাঠে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ১৯৬৪ সালে স্পেন, ১৯৬৮ সালে ইতালি ও ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স নিজেদের দেশে ইউরোর খেতাব জেতে। এবার সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের। কিন্তু হ্যারি কেইনরা পারলেন না।
এই প্রথম মহাদেশীয় আসর বসেছিল ইউরোপের ১১ শহরে। গত ১১ জুন ইতালির রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ১৬ হাজার দর্শকের সামনে ইতালি-তুরস্ক ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠেছিল ইউরো ২০২০-এর। লন্ডনের ওয়েম্বলিতে ১১ জুলাই ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে শেষ হলো টুর্নামেন্ট।
ইউরোপের সেরা ২৪ দল ছয় গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়াই করেছে। প্রতিটি গ্রুপের শীর্ষ দুটি করে দল এবং তৃতীয় স্থানে থাকা সেরা চারটি দল শেষ ষোলোয় খেলার সুযোগ পায়। খেলা হয়েছে ১১ শহরের ১১টি ভেন্যুতে। করোনা মহামারি সারা পৃথিবী লন্ডভন্ড করার পর ইউরো ২০২০ প্রথম কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট, যা মাঠে গড়িয়েছিল।
Leave a Reply