ঢাকার ধামরাই উপজেলার রৌহাটেক এলাকায় এক বিধবা নারী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম শামেলা বেগম। তার তিনজন সন্তান রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, নিহতের বাড়ি সূয়াপুর ইউনিয়নের রৌহারটেক গ্রামে। তার স্বামীর নাম কালা চাঁন মিয়া। স্বামীর মৃত্যুর পর ওই নারীর সঙ্গে রৌহারটেক জামে মসজিদের ইমাম আশরাফুল ইসলামের (৩৮) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আশরাফুলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। অভিযোগ আছে, এক বছর ধরে ওই নারীর সঙ্গে ইমামের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ইমামের সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্কের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে গতকাল বুধবার দুপুরে ওই নারী মসজিদে গিয়ে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ইমাম আশরাফুলের কাছে বিয়ের দাবি করেন। কিন্তু ইমাম সবার সামনে ওই নারীকে মারধর করে মসজিদ থেকে বের করে দেন। পরে ভুক্তভোগী সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোরহাবের কাছে ধর্ষণের বিচার চান। চেয়ারম্যান তাকে থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেন।
পরে গতকাল রাতে মসজিদের মাঠে সালিস বসে। সেখানে মসজিদ কমিটি ইমাম আশরাফুল ইসলামকে থানায় দেওয়ার জন্য সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার রহিম মিয়ার কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু ইমামের কাছ থেকে মোট টাকা উৎকোচ নিয়ে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন, দলিল লেখক শরীফ হোসেন, মাতবর ইউসুফ আলী, পাগলা মিয়াসহ কয়েকজন মাতব্বর দফাদারের কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন। এ খবর শোনার পর আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগী নিজ ঘরের দরজা লাগিয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।
এ ঘটনা ওই মাতব্বররা পুলিশকে না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফনের চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় সাংবাদকিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দাফন থামিয়ে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
সেলিম হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মাতব্ববররা ইমামকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। তারাও পালিয়ে গেছেন।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার রহিম মিয়া বলেন, ‘মাতব্বররা যদি সঠিক বিচার করত তাহলে বিধবা নারী আত্মহত্যা করতেন না। মাতব্বররা ইমামকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।’
সূয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সোরহাব বলেন, ‘বুধবার বিকেলে রৌহারটেক থেকে এক বিধবা নারী আমার কাছে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তিনি জানান, বিয়ের প্রলোভনে মসজিদের ইমাম আশরাফুল ইসলাম তাকে ধর্ষণ করেছেন। আমি তাকে থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে পারামর্শ দিয়েছিলাম।’
ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্তের পর মূল ঘটনা বোঝা যাবে।’
Leave a Reply