1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গা পুরুষদের বাধাতেই জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যর্থ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ জুন, ২০২১

গত চার বছরে বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি ১৪৩টি সংস্থা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির আওতায় আনতে পারেনি। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে চালু করা যায়নি জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো ধরনের পদ্ধতিও। সরকারি জরিপ বলে, কেবল তালাকপ্রাপ্ত কিছু নারী গোপনে স্বল্পমাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। দুটি বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে পুরুষদের মাঝে কনডম বিতরণের চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, শরণার্থীদের মাঝে সচেতনতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। অনেক নারী স্বল্পমেয়াদি জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। আমরা ইপিআইসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রাখার ব্যাপারেও কাজ করে যাচ্ছি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যে কোনো শর্তেই রোহিঙ্গা নারীরা মিয়ানমার ফিরে যেতে চায়; কিন্তু ফিরতে চায় না পুরুষরা। মিয়ানমারে সব নারীই এক ধরনের স্বাধীনতা ভোগ করে, যে সুযোগ রোহিঙ্গা নারীরা বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে পায় না। মিয়ানমারে কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করলে ওই পুরুষের ১৬ বছর জেলের বিধান আছে।

তালাক দিলে পুরুষকে জেল খাটতে হয় ৬ বছর; কিন্তু গত চার বছরে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কোনো নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে কিংবা তালাক দেওয়ার কারণে এক পুরুষকেও শাস্তির আওতায় আসতে হয়নি। বাংলাদেশের সরকার কিংবা বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান এই বিষয়ে আইনি হস্তক্ষেপ করে না। রোহিঙ্গা শিবিরে তালাকের সংখ্যা খুবই বেশি। অনেক পুরুষ নিয়মিত স্ত্রীদের তালাক দেন এবং একের পর এক বিয়ে করেন। অনেকে এক শিবির থেকে অন্য শিবিরে গিয়ে বিয়ে করেন। এক্ষেত্রে তারা আর্থিকভাবে লাভবানও হন। রোহিঙ্গা সমাজে যৌতুক প্রথা চালু আছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, উখিয়া ও টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মোট রোহিঙ্গার ৫২ শতাংশ মেয়ে, আর ৪৮ শতাংশ হলো পুরুষ। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এখানে চালু না হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হলো পুরুষদের মানসিকতা। দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলো নারীদের জন্য ডিগনিটি কিট নামে যেসব পণ্য সরবরাহ করে, তা নারীরা গিয়ে আনতে পারেন না, আনেন পুরুষরা। এসব পণ্যের মধ্যে আছে সেনিটারি নেপকিন, রেজার, টুথপেস্ট, ব্রাশ, সাবান ইত্যাদি। এসব সেনিটারি নেপকিন কখনো নারীর হাতে পৌঁছে না। পুরুষরা পথিমধ্যে বিক্রি করে দেন। প্রথম মাসিক হওয়ার পর কোনো নারী পুরুষের অনুমতি ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে পারেন না।

রোহিঙ্গা শিবিরগুলোকে ঘিরে গত চার বছরে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বা যৌথ সাড়াদানকারী পরিকল্পনার আওতায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি অর্থে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে ১৩ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬০ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমে। এসব কাজের মধ্যে ছিল জন্মনিয়ন্ত্রণ, শিশুদের ইপিআই টিকা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, খাল-নদীর পানির পরিবর্তে গভীর নলকূপের নিরাপদ পানি পান করা, বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ সংরক্ষণ, খোলা জায়গায় পায়খানা না করে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ইত্যাদি।

বেসরকারি সংস্থা ইপসার হেড অব রোহিঙ্গা রেসপন্স প্রোগ্রাম মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, পয়ঃনিষ্কাশন এবং নিরাপদ পানি পানের ব্যাপারে সচেতনতা ছিল না। গত চার বছরের টানা প্রচেষ্টায় শিবিরগুলোতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এখন গভীর নলকূপের পানি পান করছে। তারা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ব্যবহার করছে। গতবছর বেসরকারি সংস্থাগুলোর (এনজিও) স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক ব্যাপক কার্যক্রমের কারণে শিবিরগুলোতে করোনার বিস্তার তেমন ঘটেনি; কিন্তু বারবার বলার পরও দেখা গেছে, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা উদাসীনতা দেখিয়েছে। ফলে গতবছরের তুলনায় এবার শিবিরগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

গত কয়েকদিনে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে অনেক রোহিঙ্গা পুরুষের সঙ্গে কথা হয়। কথা হয় আরআরআরসি কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে। আরআরআরসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে সামরিক জান্তার দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার শঙ্কায় থাকত। তাই পুরুষরা তাদের স্ত্রীকে সবসময় গর্ভবতী করে রাখতেন। বছরের পর বছর ধরে চালু থাকা এই প্রবণতা থেকে রোহিঙ্গারা এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি। তিনি বলেন, গত চার বছরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির আওতায় এসেছে। আরআরআরসির স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা এমআরএইচ ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে শতভাগ পরিবার পরিকল্পনা প্রণয়নের চেষ্টা করছি।

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে প্রতিবছর গড়ে ৪০ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে। চলতি বছর এই সংখ্যা ৪৮ হাজার। বাংলাদেশ সরকার ছাড়াও দেশি-বিদেশি ১৪৩টি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) টানা চেষ্টাও জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সফল হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com