রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফিট এলাকায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অজ্ঞাতনামা লাশ শনাক্ত ও হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা- হলেন ফারুকুল ইসলাম (৪৩), কাজী ইমরান মাহমুদ (৩২) ও সালাউদ্দিন খলিফা ওরফে সুমন (৩৮)। ঘটনার কিছু দিন পরই তাদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।
সিআইডি জানায়, গত বছরের ১৯ জুন ঢাকা খিলক্ষেত থানাধীন পূর্বাচল হতে ঢাকাগামী ৩০০ ফুট রাস্তার দক্ষিণ সাইডে ঝোপের ভিতর অজ্ঞাতনামা নারীর লাশ দেখতে পেয়ে খিলক্ষতে থানা পুলশি, সিআইডি ক্রাইমসিন টিমকে সংবাদ দেয়।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে সিআইডি ক্রাইমসিন টিম ঢাকা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেন।
সিআইডি ক্রাইমসিন টিম অজ্ঞাতনামা নারীর লাশের ছবি, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স সংগ্রহ করেন। সিআইডি ক্রাইমসিন টিম কর্তৃক সংগ্রহকৃত ফিঙ্গার প্রিন্ট এর মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অজ্ঞাতনামা লাশ এর পরিচয় শনাক্ত করে এবং তার নাম সুমি হাসান (৩০), জেলা-গোপালগঞ্জ বলে জানতে পারে।
সিআইডি আরও জানান, সুমি হাসানের স্বামীর নাম জাহিদ হাসান একজন ড্রাইভার এবং সে বর্তমানে ঢাকায় থাকে। উক্ত জাহিদ হাসানের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা যায় ঘটনার সময়কালীন তার অবস্থান জিগাতলা। জিগাতলা হতে জাহিদ হাসানকে খুঁজে বরে করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তিনি মৃত সুমি হাসানের প্রাক্তন স্বামী।
পরে সুমির মাতা আম্বিয়া খাতুনের বাড়িতে গিয়ে সুমি হাসানের ছবি দেখালে তিনি সুমি হাসানকে শনাক্ত করেন।
“যেভাবে গ্রেপ্তার”
সিআইডি জানায়, পালিত মাতা আম্বিয়া খাতুনের নিকট থেকে সুমি হাসানের মোবাইল নম্বর নিয়ে তা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ভিকটিম সুমি হাসান (৩০) জীবিত অবস্থায় সর্বশেষ অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৮ জুন ৩টি নাম্বারে কথা বলেন।
তার লোকেশন খিলগাঁও এলাকায় দেখা যায়। নম্বর ৩টির রেজিষ্ট্রেশন পর্যালোচনা করে গ্রাহকের নাম ১) ফারুকুল ইসলাম (৪৩), ২) কাজী ইমরান মাহমুদ (৩২) ও ৩) সালাউদ্দিন খলিফা দের তথ্য পাওয়া যায়। কললিষ্টের সূত্র ধরে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে তারা সুমি হাসানের সাথে অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সর্ম্পকের কথা স্বীকার করে।
আসামিরা জানায় যে, সুমি হাসান উক্ত কাজের জন্য ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। আসামিদের নিকট ৩০ হাজার টাকা নাই মর্মে জানায়। উক্ত টাকা না দিলে ভিকটিম সুমি হাসান বিষয়টি আসামি ফারুকের স্ত্রীর নিকট ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। যার ফলে বর্ণিত আসামিগণ পরস্পর যোগসাজসে সুমি হাসানকে ২০২০ সালের ১৮ জুন রাতে হত্যা করে এবং হত্যার পর লাশ গুম করার জন্য পরের দিন অর্থাৎ গত অপরিচিত সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া করে নিয়ে খিলক্ষেত থানাধীন পূর্বাচল হতে ঢাকাগামী ৩০০ ফুট রাস্তার দক্ষিণ সাইডে রাস্তার পাশের ঝোঁপের ভিতর সুমি হাসানের ডেড বডি ফেলে দেয়।
আসামিরা সুমি হাসানকে হত্যা করতে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখেছে মর্মে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
সিআইডির সূত্রে জানা যায়, মামলাটি তদন্তকালে মৃত সুমি হাসানের ভ্যাজাইনাল সোয়াব এর ডিএনএ এর সাথে সন্ধিগ্ধ আসামিদের ডিএনএ এর তুলনামূলক পরীক্ষায় বীর্যের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ডিএনএ পরীক্ষায় সুমি হাসানের ভ্যাজাইনাল সোয়াব হতে যে ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায় সেখানে আসামিদের ডিএনএ পাওয়া যায়।
তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ, সুরতহাল প্রতিবেদন, আসামিদের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, আইটি ফরেনসিক রিপোর্ট, ডিএনএ প্রফাইল রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে গ্রেপ্তারকৃতরা নিহত সুমি হাসানের সাথে অর্থের বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক করে সুমি হাসানের দাবি করা মতে ৩০ হাজার টাকা না দেওয়া এবং আসামি ফারুকের স্ত্রীকে বিষয়টি বলে দেওয়ার হুমকির কারণে তাকে হত্যা করে।
মামলাটি তদন্ত সমাপ্ত করে ৩ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।
Leave a Reply