নির্বাচনের প্রচারণা শুরু না হলেও এরই মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য অর্ধশতাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছেন। রাজনীতির মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়ায় সরকারদলীয় প্রার্থীরা মনে করছেন, ফাঁকা মাঠে দলীয় টিকিট পেলেই এমপি হওয়া নিশ্চিত। আর এমন ভাবনা থেকেই অতীতে রাজধানীর অন্য আসন থেকে মনোনয়ন চাওয়া প্রার্থীরাও এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোরেশোরে তদবির শুরু করেছেন। সময়ে অসময়ে তাদের অনেকেই প্রভাবশালী মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতাদের বাসা কিংবা অফিসে গিয়েও ধরনা দিচ্ছেন।
মিরপুর, দারুসসালাম, শাহ্আলী, রূপনগরের আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড এই আসনের আওতাধীন। জাতীয়ভাবেই আসনটির গুরুত্ব অনেক। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসলামুল হক আসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রার্থী এস এ খালেককে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি নৌকার টিকিটে এমপি হন। গত ৪ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়ে যায়। ওই আসনে উপনির্বাচনে এখন মরহুম আসলামের স্ত্রী মাকসুদা হক দলীয় মনোনয়ন চান। তবে এবার উপনির্বাচনে এমপির পরিবারের বাইরে থেকে নতুনদের মধ্যে দক্ষ, অভিজ্ঞ, যোগ্য ও ত্যাগী প্রার্থীদের মূল্যায়ন করার চিন্তা করছে দলটির হাইকমান্ড। সে ক্ষেত্রে জোরালো আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
অবশ্য এর আগের নির্বাচনগুলোতে এস এম মান্নান কচি ঢাকা-১৬ আসন থেকে এবং মাইনুল হোসেন খান নিখিল ঢাকা-১৫ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। তা ছাড়া দু’জনই গত ২০১৯ সালের নভেম্বরের সম্মেলনে পদোন্নতি পেয়ে উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পান। যার ফলে অন্য আসন থেকে মনোনয়ন চাওয়ায় এবং নিকট অতীতে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায় তাদের দু’জনেরই এমপি পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ঢাকা-১৪ এলাকায় অবস্থান করে এমন নেতাদের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ।
তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা মোবাশ্বের চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, এলাকার মাটি ও মানুষের সাথে আমার দীর্ঘকালের সম্পর্ক। গরিব অসহায় মানুষের পাশে সবসময়ই থাকি। তিনি বলেন, ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবসময়ই মূল্যায়ন করেন। আশা রাখি, আসন্ন ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী একজন ত্যাগী ও যোগ্য নেতা হিসেবে আমাকে মূল্যায়ণ করবেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা আরেক ছাত্রনেতা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী। তিনি সরকারি বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। এখন তিনি দারুসসালাম থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
কাজী ফরিদুল হক হ্যাপী নয়া দিগন্তকে বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এলাকাবাসীর সেবা করতে চাই। এলাকার অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আশা করি প্রধানমন্ত্রী আমাকে সেই সুযোগ দেবেন। ঢাকা উত্তর সিটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডের পরপর দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নান বলেন, নিজের জীবনের বিনিময়ে রাষ্ট্রের ভালোকাজের সাথে যুক্ত হতে চাই। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে বৃহত্তর পরিসরে সাধারণ মানুষের জন্য ভালো কিছু করার মনোবাসনা থেকে আমি নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী। মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ বলেন, সারাজীবন দলের জন্য কাজ করেছি। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় আহত হই। দলের জন্য কারাবরণ করেছি। নিজের জীবনকে ফাঁকি দিয়েছি কিন্তু দলকে ফাঁকি দেইনি। আমি আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এই ত্যাগের মূল্যায়ণ করে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
এ ছাড়াও ঢাকা-১৪ আসনে সাবেক এমপি (সংরক্ষিত আসন) ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ বি এম মাজহারুল আনাম ও মিজানুর রহমান মিজান, শাহআলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু, সিআইপি ড. আরিফ আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকেই নৌকার মাঝি হতে চান।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-১৪ আসনে উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৫ জুন, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১৭ জুন, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৩ জুন, প্রতীক বরাদ্দ ২৪ জুন এবং ভোটগ্রহণ ১৪ জুলাই। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন আগামী ১১ বা ১২ জুন চূড়ান্ত হতে পারে।
Leave a Reply