1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

কীভাবে খুলবে শিক্ষার তালা?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ মে, ২০২১

১৪ মাস বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুয়ার। মাঝে সবকিছু সচল হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালা কবে খুলবে তা আসলে কেউই জানেন না।  ফের অনিশ্চয়তা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে। সময়মতো হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাও। শহরকেন্দ্রিক শিক্ষা কিছুটা সচল থাকলেও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা করুণ। বাড়ছে বাল্যবিবাহ। শিক্ষাবিদরা বলছেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা অপূরণীয়। ক্ষতি পোষাতে সরকারকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এজন্য অন্যান্য দেশের শিক্ষা কার্যক্রমকে অনুসরণের পরামর্শ তাদের। এ অবস্থায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার চিন্তা জোরদার করেছে।

জুন-জুলাইয়ে হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। পরীক্ষার্থীরা অটোপাসের দাবি তুলেও তা দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়িয়ে নেয়া হবে পরীক্ষা। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, এসএসসি-এইচএসসি’র জন্য সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছি। এসএসসি পরীক্ষা হয়তো দু’-এক মাস পিছিয়ে যেতে পারে। পরীক্ষা না হলে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয়া হবে না। প্রয়োজনে বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, পরীক্ষা নেয়া না হলে বিকল্প কীভাবে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে তা ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, পরীক্ষা নেওয়া না নেওয়া করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। তবে এ বছর অটোপাস দেয়া হবে না। করোনা দীর্ঘায়িত হলে সে ক্ষেত্রে কী পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি। গেল বছরের ১৮ই মার্চ থেকে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ২৩শে মে থেকে চালু করবার কথা। কিন্তু করোনার ঊর্র্ধ্বমুখী সংক্রমণে তাও অনিশ্চিত। ইতিমধ্যে ১৭ই মে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেদিন খুলছে না হলের তালা। এ থেকে অনুমেয় ২৩শে মে খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। বুধবার অনলাইনে মিটিংয়ে বসেছিলেন ভাইস চ্যান্সেলরদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ। বৈঠকে ১৭ই মে আবাসিক হল খুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঈদের পর নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, যেহেতু শিক্ষার্থীদের করোনা টিকা দেয়া হয়নি তাই ১৭ই মে আবাসিক হল খোলা হচ্ছে না। তাছাড়া সবকিছু বিবেচনা করে ভর্তি পরীক্ষার তারিখও পেছানো হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের পরে আবার আমরা বসবো। সেখানে বিষয়টির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেশনজট এড়াতে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় উপাচার্য পরিষদের। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেয়া যাবে। তবে শিক্ষার্থী কিংবা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল না চাইলে অনলাইনে পরীক্ষা আয়োজন করা যাবে না।

কীভাবে কাটবে স্থবিরতা? উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ভেবে দেখা যেতে পারে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা কার্যক্রম। কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়নার শিক্ষার্থী ওবায়দুল চৌধুরী অজয় বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোপুরি ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক লেখাপড়া। তবে সেইসঙ্গে ব্যবস্থা রয়েছে অনলাইন ক্লাসেরও। যেসব শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হতে পারেন না তাদের জন্য এই ব্যবস্থা। আবার করোনার প্রকোপ বাড়লে ভাগ করে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। তাতে সপ্তাহে দুইদিন ভার্সিটিতে যেতে হয় আর বাকি দিন অনলাইনে যুক্ত হতে হয়। জাপানের হোক্কাইডো ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার শিমু বলেন, আমাদের দেশের পরীক্ষা আর এখানকার পরীক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা। অধিকাংশ নম্বর থাকে এসাইন্টমেন্ট, ক্লাসওয়ার্ক ইত্যাদিতে। আর কিছু নম্বরের পরীক্ষা হয় তা প্রশ্ন দিয়ে সাতদিন সময় দেয়া হয়। এই প্রশ্ন এমনভাবে সাজানো হয় যাতে সামনে বই ইন্টারনেট থাকলেও কোনো উপকার হবে না, যদি সাজিয়ে লিখতে না পারি।

একই কথা বলেন, সুইডেন লিনিয়াস ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তানভীর ইসলাম জিকু। তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে আমাদের সেশনজট হচ্ছে না। কারণ সব বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস চলছে। আমাদের পরীক্ষা বলতে এসাইন্টমেন্ট ও প্রেজেন্টেশন। বাংলাদেশের মতো মুখস্থ করে লিখে কোনো লাভ নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী জামিনুর রহমান। তিনি বলেন, করোনার প্রভাব বাড়ার পরপরই ক্লাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কিছুদিন আগে ফাইনাল পরীক্ষা হলো। পরীক্ষা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে প্রশ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে সাতদিন আগে। এরপর সাতদিন সময় দিয়ে তা জমা দিতে হয়। প্রশ্ন সৃজনশীলভাবে সাজানো হয় যাতে বই ইন্টারনেট থাকলেও সুবিধা হবে না কোনো। তবে তারা কপি করাটাকে খুবই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে দীর্ঘদিন ধরেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলোতেও। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান বলেন, তাদের পরীক্ষা অনলাইনে হয়। এসব পরীক্ষা দিতে হয় ক্যামেরা অন করে শিক্ষকের সামনে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় নিজস্ব উদ্বাবিত সফ্‌টওয়্যার ভিএলসি’তে। এই সফ্‌টওয়্যারের মাধ্যমে প্রশ্ন দেয়া হয় এবং ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ওই ডিভাইস অসৎ উপায় অবলম্বন করলে ধরে ফেলে। যদিও এসব পরীক্ষা পদ্ধতিতে রয়েছে নানা অসৎ উপায় অবলম্বনের সুযোগ। তবে শিক্ষার্থীরা মুক্ত হচ্ছেন সেশনজটের চিন্তা থেকে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সাজানো হচ্ছে সৃজনশীল পদ্ধতিতে। রাশিয়া সান সাইন কোরাক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক বাংলাদেশি মৌমিতা হক। এই স্কুলে মূলত বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানি শিশুরা লেখাপড়া করে। তিনি বলেন, এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। পরীক্ষা নেয়া হয় চতুর্থ শ্রেণি থেকে। করোনা আসার পর শিক্ষার্থীরা ভাগ ভাগ হয়ে স্কুলে আসে। প্রতি শিক্ষার্থীকে আসতে হয় মাসে ১০দিন। পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, পরীক্ষা সেভাবে কিছুই নেয়া হয় না। যা শিখছে তারই একটা জিস্ট দেয়া হয়। যেমন, আজ অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। যাতে একটাই প্রশ্ন ছিলো- রাশিয়া থেকে তোমার দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে কতোটা যোগাযোগ আছে? যোগাযোগ কম হলে কেন কমছে? পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্ব কতোটা? মার্কস ১৫। তিনি আরো বলেন, এটাকে পরীক্ষা না বলে এসাইনমেন্ট বলা যেতে পারে। তারা বাড়ি থেকে এই প্রশ্ন প্রস্তুত করে এসে আমাদের সামনে শুধু প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রাখা। কীভাবে কাটিয়ে উঠবে শিক্ষা? এই প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞ ড. এম তারিক আহসান বলেন, করোনা চলমান থাকলে কী করতে হবে আর স্কুল খুলে দিলে কী করা হবে- এমন দু’টি উদ্ভাবনী পরিকল্পনা করতে হবে। বই কতটুকু শেষ করা হলো, সেটার পরিবর্তে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষণ পদ্ধতি চিন্তা করা যেতে পারে। ঘাটতি পূরণ করেই এগিয়ে যেতে হবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছেই অনলাইন শিক্ষা পৌঁছায়নি। যে ৩১ শতাংশের কাছে পৌঁছেছে তারা স্বাভাবিক পাঠদানের মতো করে নেয়নি এসব পাঠদান। সরকারি তথ্যানুযায়ীই টেলিভিশন আছে ৬৫ শতাংশ পরিবারে। ক্ষতিপূরণে শিক্ষাবর্ষ জুন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়াও স্কুলে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানের শিক্ষার ওপর বাড়তি জোর দিতে হবে। না শিখে পরবর্তী শ্রেণিতে উঠলে দেখা দেবে নানা সমস্যা। সিলিবাসের সব শিখতে হবে এমনটাও না তবে যেগুলো না শিখলেই নয়, তা অবশ্যই শিক্ষার্থীদের পাঠ করাতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com