1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন

তিল ঠাঁই নেই হাসপাতালে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

কোভিড আক্রান্ত পুরান ঢাকার এক ব্যক্তিকে গত ৮ এপ্রিল ভর্তির জন্য ঢাকার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। সেখানে শয্যা না পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও শয্যা না পেয়ে তারা যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে; কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা। এভাবে বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রোগীকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে ঘুরতে হয় তাদের। শেষ পর্যন্ত কোনো হাসপাতালেই ঠাঁই না পেয়ে রোগীকে বাসায় নিয়ে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়। বাসায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে, একপর্যায়ে অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৩৭-এ নেমে যায়। এর পর ১০ এপ্রিল রাতে আবার তাকে বহু কষ্টে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়; কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পরই মারা

যান ওই ব্যক্তি। শুধু পুরান ঢাকার ওই ব্যক্তি নন, কোভিড রোগী নিয়ে এমন অনেকেই এখন হাসপাতালগুলোয় ঘুরছেন হন্যে হয়ে একটি শয্যার আশায়; কিন্তু উপচেপড়া রোগীর ভিড়ে সত্যিকার অর্থেই যেন নতুন শয্যা হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ।

আমাদের সময়ের ঢামেক প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম বাবু জানান, তাদের হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটে রোগীর চাপ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক রোগী আছেন, যাদের ভর্তির জন্য আনা হলেও শয্যার অভাবে অক্সিজেন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। শুধু কোনো রোগী রিলিজ হলে বা কেউ মারা গেলেই তখন শয্যা ফাঁকা হয়। তখনই কেবল সেই শয্যায় নতুন রোগী ভর্তির সুযোগ মেলে। এ ছাড়া এখানে বেশি রোগীর চিকিৎসা প্রদানের জন্য আরেকটি ব্যবস্থা আছে। কোনো রোগীকে কয়েকদিন চিকিৎসা দেওয়ার পর যদি দেখা যায় তার অক্সিজেন লেভেল ভালো আছে, বাসায় পাঠালে সমস্যা হবে না, তখন ওই রোগীকে ছুটি দিয়ে নতুন রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।

বিএসএমএমইউর কোভিড ইউনিটের এক কর্মচারীও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি জানান, শয্যার অভাবে তাদের হাসপাতাল থেকেও প্রতিদিন রোগী এসে ফেরত যাচ্ছে। কোভিড রোগীদের যেসব শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেগুলোতে সেন্ট্রাল লাইন অক্সিজেন সংযোগ দেওয়া আছে। তাই শয্যার বেশি রোগী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে হাসপাতালের উল্টো পাশেই নতুন করে বেতার ভবনে যে কোভিড ইউনিট চালু হয়েছে, সেখানে রোগী ভর্তি করা যায়। তবে যেসব রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন তাদের বেতার ভবনে রাখা যাবে না। কারণ সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেন নেই, মৃদু উপসর্গ রোগীদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত দেশের করোনা ডেটিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৩৬৪টি সাধারণ শয্যা এবং ৬৭২টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট শয্যা রয়েছে ১১ হাজার ৩৬টি। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় ৫ হাজার ৪৮৪ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ৫৩০ জনসহ মোট ৬ হাজার ১৪ রোগী ভর্তি আছে। তার পরও রোগীর চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এটি সারাদেশের চিত্র হলেও ঢাকার চিত্র ভিন্ন। বর্তমানে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের জন্য শয্যা আছে ২৭৫টি। অথচ এর বিপরীতে সেখানে রোগী ভর্তি আছে ৩৮৭ জন। অর্থাৎ শয্যার অতিরিক্ত ১১২ জনকে সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগের দিন মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩১০টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ৩২৪ জন।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীতে ১০টি সরকারি এবং ১২ বেসরকারিসহ মোট ২২টি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪ হাজার ২৩টি এবং আইসিইউ শয্যা ৩৭৭টিসহ মোট শয্যা রয়েছে ৪ হাজার ৪০০টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি আছে সাধারণ শয্যায় ৩ হাজার ৫৬২ জন এবং আইসিইউ শয্যা ৩৭০ জনসহ মোট ৩ হাজার ৯৩২ জন। শতকরা হিসাবে সাধারণ শয্যার বিপরীতে ৮৮.৫৫ শতাংশ এবং আইসিইউ শয্যার বিপরীতে ৯০ শতাংশ রোগী ভর্তি আছে।

ঢাকার ১০টি সরকারি হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ২ হাজার ৭৮৬টি এবং আইসিইউ শয্যা ১৩২টিসহ মোট শয্যা আছে ২ হাজার ৯১৮টি। এর মধ্যে সাধারণ শয্যায় ২ হাজার ৪৭৫ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ১২৯ জনসহ মোট ২ হাজার ৬০৪ রোগী আছে। আর ঢাকার সরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যার বিপরীতে ৮৮.৮৪ শতাংশ এবং আইসিইউ শয্যার বিপরীতে ৯৮ শতাংশ রোগী ভর্তি রয়েছে। গতকালের হিসাবে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ২টি এবং মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১টি আইসিইউ শয্যা খালি ছিল। এর বাইরে অন্য কোনো হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। ফলে গুরুতর অসুস্থ রোগীরা চিকিৎসা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ অবস্থায় সরকার ঢাকায় আরও কয়েকটি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালুর নির্দেশ দিয়েছে। গত ২২ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকর দপ্তরে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়- দেশে প্রতিনিয়ত কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সম্ভাব্য পরিসিস্থিতি মোকাবিলায় লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আইসোলেশন সেন্টার ও সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো। এ ছাড়া শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালককে প্রতিষ্ঠানটিতে কোভিড রোগীর সেবা কার্যক্রম চালু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি হাসপাতাল করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com