1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৪৯ অপরাহ্ন

দুই বেলা ভাত জোটে না, আর কত কম খামু?

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১১ এপ্রিল, ২০২১

‘এখন দুই বেলা ভাত জুটছে না। একবেলা কোনোমতে খেতে পারলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকছি। সবাই বলছে, সময় খারাপ, তাই একটু কম খেতে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে। কিন্তু এখন যেটুকু খাচ্ছি তারচেয়ে কত কম খাব? বড়লোকরা ঠিকই তিনবেলা সন্তানদের নিয়ে খাচ্ছে। আমরা সারাদিন কাজ না পেয়ে না খেয়েই আছি! তা হলে কম খাবার সুযোগ কোথায় আমাদের?’ আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন দিনমজুর রকিফুল ইসলাম। অন্যদিনের মতো গতকাল শনিবার সকালেও চট্টগ্রাম নগরীর চক সুপারমার্কেটের সামনে কাজের সন্ধানে অন্য শ্রমিকদের ভিড়ে বসেছিলেন তিনি।

রফিকের বাড়ি ময়মনসিংহে। চট্টগ্রামে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকায় থাকেন। সকাল ৬টা থেকে চকবাজার কাঁচাবাজারের মুখে দাঁড়িয়ে থাকেন কাজের আশায়। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, কাজ জোটে না রফিকের মতো অনেকেরই। গত তিন দিন টানা কাজ না পাওয়া রফিক বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বাড়লে গরিবেরও ভয় বাড়ে। করোনায় নয়, আমাদের ভয়টা না খেয়ে মরা কিংবা বেঁচে থাকার দুশ্চিন্তার।’

চকবাজারের মতো দিনমজুরের কাজ পাওয়ার আশায় নগরীর জামালখান, কাজীর দেউড়ি, সিআরবি, নিউমার্কেট ও টাইগারপাস এলাকায় কোদাল-টুকরি নিয়ে প্রতিদিন বসে থাকেন বহু নিম্নআয়ের মানুষ। লকডাউনে হা-হুতাশের শেষ নেই এসব দিনমজুরের। দিনে এনে দিনে খাওয়া লোকগুলো কীভাবে লকডাউন কাটাবেন, তা নিয়েই যত ভাবছেন। চকবাজার এলাকার হকার দ্বীন মুহাম্মদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘গত বছরের লকডাউনের সময় ৬৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলাম। এখনো সেই ধার শোধ করতে পারিনি। পাওনাদাররা প্রতিনিয়ত তাগাদা দিচ্ছেন। আমি কোনো রকমে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। ভাই, এ বছরও কি একই রকম (লকডাউন) হবে?’

নগরীর আসকার দীঘির পাড়ের ফার্নিচারের দোকানগুলো থেকে ফার্নিচার আনা-নেওয়ার কাজ করেন ভ্যানচালক শুক্কুর আলী। লকডাউন ঘোষণায় দোকানগুলো বন্ধ। তাই জীবিকার চাকায়ও তালা পড়েছে। শুক্কুর বললেন, ‘এভাবে সব বন্ধ করে দিলে আমরা খাব কী? আমাদের তো আর জমানো টাকা নেই।’ চাক্তাই নতুন ব্রিজ এলাকার বাস্তুহারা বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘২৭ বছর ধরে এই শহরে আছি। গত বছরের মতো খারাপ সময় আগে কখনো আসেনি। এখন ভয়ে আছি সামনের দিনগুলো নিয়ে।’ তার সব ভয় স্ত্রী, পাঁচ বছরের মেয়ে আর বৃদ্ধ মাকে নিয়েই। কাজ না থাকলে অনাহারেই থাকতে হবে সবাইকে। বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা রোমেনা বেগম বলেন, ‘আমি এক বাসায় সপ্তাহে ছয় দিন কাজ করতাম। এ সপ্তাহে তারা আমাকে বলেছেন, সপ্তাহে দুদিন করে আসতে। আমার মনে হয় কাজটা আর বেশিদিন থাকবে না।’

এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে নিম্নআয়ের মানুষের কষ্ট লাঘব করতে আরও আটটি বাড়িয়ে ৩০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে টিসিবি। এ ছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ট্রাকে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে সরকারি সংস্থাটি। তবে পণ্যের দাম বাড়ানোই নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর পরও চট্টগ্রামে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনার জন্য প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের ভিড়। টিসিবির চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায়, প্রতি কেজি মসুর ডাল (তুরস্কের) ৫৫ টাকায়, প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকায়, প্রতি কেজি ছোলা ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতকাল শনিবার থেকে খেজুর বিক্রি করা হচ্ছে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) তথ্যমতে, গত ডিসেম্বরে দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৮ সালে ছিল ২১ দশমিক ৬ শতাংশ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com