পরনে পোশাক বলছে, তিনি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা। কোমরে বেল্ট। মাথায় গুঁজেছেন ফিল্ড ক্যাপ। সঙ্গে মোটরসাইকেল। সামনের স্টিকারে লেখা পুলিশ। তার সঙ্গের লোকটির বেশভূষা ও কথাবার্তায় পরিষ্কার তিনি একজন সাংবাদিক। তারা দুজন প্রকৃতপক্ষে একটি প্রতারকচক্রের সদস্য। ফন্দি করে পুলিশ ও সাংবাদিক সেজে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিতেন কাড়ি কাড়ি টাকা।
চক্রটির মূলহোতার রাজধানীতে রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট, প্রতারণার টাকায় কেনা। তবে শেষ রক্ষা হলো না। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জালে আটকা পড়েছে এমন প্রতারকচক্রের ৬ সদস্য। এর মধ্যে এক তরুণীও রয়েছেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এসব তথ্য।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও থানার দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. বদিউজ্জামান শাহীন (৪০), মিজানুর রহমান (৪৫), মো. ফয়সাল আহম্মেদ (২৩), কামরুজ্জামান সোহেল (৩২), মো. সাইফুল ইসলাম ইমরান (৩১) ও বীথি আক্তার সোমা (২৬)কে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় পুলিশের পোশাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।
ডিবি পুলিশ জানায়, চক্রের সদস্যরা বনশ্রীর একটি ফ্ল্যাটে আস্তানা গড়ে তোলেন। মানুষকে বিভিন্ন প্রলোভনে ওই বাসায় নিয়ে যেতেন তারা। পরে মেয়েদের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলতেন। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্য, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চক্রের অপর সদস্যরা হানা দিতেন সেখানে। আপত্তিকর ছবি প্রকাশের ভয় দেখিয়ে শুরু হতো দেনদরবার। ভিকটিমদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। ওই টাকায় চক্রের অন্যতম হোতা বদিউজ্জামান শাহীন বনশ্রীতে কিনেছেন আলিশান ফ্ল্যাট।
ডিবি জানায়, ২০১৫ সাল থেকে চক্রের সদস্যরা এই অপকর্ম চালিয়ে আসছিল। তাদের প্রত্যেকের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। শাহীন, মিজান, সোহেল এর আগেও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে। জেল থেকে বেরিয়ে ফের একই অপকর্মে জড়াতেন তারা।
কাওসার আহমেদ রনি নামে এক তরুণ একটি অনলাইন শপ চালান। গত ৮ মার্চ অনলাইনে একটি ব্যাগ অর্ডার করে চক্রের এক সদস্য। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাগ ডেলিভারি দিতে চাইলে চক্রের এক সদস্য ফোন করে কাওসার আহমেদ রনিকে বলেন, আজকেই ব্যাগ ডেলিভারি দিতে হবে। না হলে অর্ডার বাতিল করে দিতে চান তিনি। পরে উপায় না দেখে নিজেই পণ্য পৌঁছে দিতে বনশ্রীতে যান। ওই বাসার নিচ থেকে তাকে চক্রের আস্তানা গড়ে তোলা ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে কাওসার আহমেদ রনির সঙ্গে এক তরুণীকে দিয়ে ছবি তোলা হয়। মারধর করে রনিকে এক লাখ টাকা না দিলে চক্রের সদস্যরা সবকিছু ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার কাছে থাকা এটিএম কার্ড ও পিন জেনে নেন চক্রের সদস্যরা।
এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে রনিকে ছেড়ে দেন। পরে চক্রের এক সদস্য নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে বাকি ৩০ হাজার টাকা পাঠাতে চাপ দিতে থাকেন। কাওসার আহমেদ রনির অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। চক্রের মূলহোতা পনির পলাতক রয়েছেন।
এ বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের সহকারী কমিশনার (এসি) মো. বায়েজীদুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, ‘চক্রের সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। পলাতক পনিরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।’
Leave a Reply