ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের জন্মদিন ছিল গতকাল শুক্রবার। আবরারের জন্মদিন উপলক্ষে তার ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুক আইডিতে আবরার ফাইয়াজ এক স্ট্যাটাস দেন। তার দেওয়া ওই স্ট্যাটাসটি দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনের পাঠকদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘আজকে ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১। ভাইয়ার জন্মদিন। ওর বয়স ২৩ বছর হতো আজ। কিন্তু প্রায় দেড় বছর হলো ও চলে গেছে। এখন শুধু ওর কিছু স্মৃতি বাদে আর কিছুই নেই আমাদের কাছে। একটা কবর আছে, কিন্তু সেটাও অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। অনেকেই ভুলে গেছে কে ‘‘আবরার ফাহাদ’’।
বিচার এখনো বহু দেরি। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় অনেক সময় চলে গেছে। কারোর মধ্যে তেমন আগ্রহও নেই আর।
আব্বু এক মাসের মতো বাসায় আসে না। মামলা পেছায় কিন্তু আব্বু অপেক্ষা করছেই কবে বিচার শেষ হবে। নিম্ন আদালতের রায়টা যে তাড়াতাড়ি আসা দরকার। কবে যে পাবো জানি না। শুধু যে পেছাচ্ছেই।
আম্মু আজ কিছু গরিবদের খাওয়াবে। আর কী করা যায় অনেকদিন ধরেই ভাবছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা এখন আম্মুর। এত মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে কল্পনাও করতে পারিনি কিছুদিন আগেও। জানি না আর কোনোদিন ঠিক হবে কিনা।
ও তো আর নেই। কোনো আয়োজন নেই। কিন্তু এই দিনে সবচেয়ে বেশি দরকার ওর জন্য দোয়া। আর ওকে যারা মেরেছিল তারা এখনো হেঁটে বেড়ায়। তাদের ও তাদের সাহায্যকারীদের শাস্তি দ্রুতই আল্লাহ যেন দুনিয়াতেই তাদের দেয়।’
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা চুক্তির বিরোধিতা করে ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নং কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।
ওই ঘটনায় নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।
অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহার বহির্ভূত ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।
মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেহেদী হাসান রবিন, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদুজ্জামান জিসান ও এহতেশামুল রাব্বি তানিম।
এজাহারের বাইরের ছয়জন আসামি হলেন- ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এসএম মাহমুদ সেতু ও মোস্তবা রাফিদ।
মামলাটিতে পলাতক তিন আসামি হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত আসামি।
Leave a Reply