শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যে দিনই খোলা হোক, অন্তত ৬০ কার্যদিবস ক্লাস নিয়েই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাস নেওয়ার উপযোগী করা হচ্ছে। অন্যদিকে পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ বছরের এসএসসি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে। এতে নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে বিষয়-কাঠামো, নম্বর ও সময় বণ্টন।
নতুন এই কারিকুলাম অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সপ্তাহে ছয় দিনই পাঠদান হবে পরীক্ষার্থীদের। বেশি ক্লাস হবে ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ে। এর পর ক্রমান্বয়ে অন্য সব বিষয়ের ক্লাস হবে। ইংরেজি প্রথমপত্রের ক্লাস হবে ৫০টি, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস ৪৮টি, গণিতে ৪০টি। ৩০টি করে ক্লাস হবে বাংলা প্রথমপত্র, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান, অর্থনীতি, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, ভূগোল ও পরিবেশ, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং, কৃষিশিক্ষা, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, চারু ও কারুকলা বিষয়ে। ২০টি করে ক্লাস হবে বাংলা দ্বিতীয়পত্র, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও খেলাধুলা, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা, হিন্দুধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, খ্রিস্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা, বৌদ্ধধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে। ক্যারিয়ার শিক্ষার ক্লাস ১০টি।
এই কারিকুলাম প্রণেতারা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগে গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল। ওই সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের যতটুকু পড়ানো হয়েছে, এর সঙ্গে বাকি শিক্ষাক্রমের অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং পরবর্তী শ্রেণিতে যাওয়ার জন্য যতটুকু দক্ষতার প্রয়োজন- সেই আলোকে প্রণয়ন করা হয়েছে বিশেষ এই শিক্ষাক্রম। পরীক্ষা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সরকারের নির্ধারিত বিশেষ এই সিলেবাসের ভিত্তিতেই এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হবে।
এই উদ্যোগকে ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে শিক্ষাবিদ ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ আমাদের সময়কে বলেন, পরীক্ষা গ্রহণ করেই শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি সর্বক্ষেত্রে সমাদৃত। এখনো পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার অনেক সময় আছে শিক্ষার্থীদের। এ সময়কে গুরুত্ব দিয়ে বাড়িতে প্রস্তুতি নিলে তাদের ফলও ভালো হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রস্তুতি সম্পর্কে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ সরকার ঘোষণা করবে। আমরা পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরীক্ষার কেন্দ্র নির্ধারণের জন্য স্থায়ী ভবনে নির্মিত প্রতিষ্ঠানে নতুন কেন্দ্র স্থাপন বা পরিবর্তনের জন্য আবেদন চাওয়া হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার নতুন কেন্দ্র স্থাপন ও কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা বোর্ডে পাঠাতে হবে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেসব কেন্দ্রের আবেদন করার প্রয়োজন নেই।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছরের মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এ ছুটি ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে এবং কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সে সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।
গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এক অনুষ্ঠানে জানান, পুনরায় খুলে দেওয়ার জন্য দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে শিগগির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, আগামী জুনে এসএসসি এবং জুলাই-আগস্টে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।
Leave a Reply