ভারতের উত্তর প্রদেশের কান্নাউজের গুরাশাইগঞ্জের বাসিন্দা প্রিয়া বর্মা (২৯)। তৌফিক (৩২) নামে এক মুসলিম তরুণের সঙ্গে দুই বছর ধরে প্রেমের পর গত ১০ই ডিসেম্বর তাকে বিয়ে করেন তিনি। হিন্দু রীতিতে বিয়ে হয় তাদের। অনুষ্ঠানে প্রিয়ার বাবা-মাও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু এর মাঝেই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন তারা। উত্তর প্রদেশের বিতর্কিত ধর্মান্তরবিরোধী আইনে তৌফিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি এখন জেলে। প্রিয়া বাড়িতে।
বাড়ি থেকে তাকে আবার অন্যত্র বিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।
উত্তর প্রদেশের একটি স্কুলের শিক্ষিকা প্রিয়া। তিনি ও তৌফিক দু’জনেই সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন। তিনি জানতেন যে, মুসলিম ছেলের সঙ্গে বিয়ে মেনে নেবেন না তার বাবা-মা। এজন্য তাদের কাছে রাহুল হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তৌফিককে।
কিন্তু বিয়ের দুই দিন পরই তৌফিকের সত্যিকার পরিচয় জেনে যায় প্রিয়ার বাবা-মা। কিন্তু সবাই সত্যটা জেনে গেলে পরিস্থিতি খুব দ্রুত ভিন্নদিকে মোড় নেয়।
বিয়ের পর প্রিয়া ও তৌফিকের বিয়ের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন তার ভাই। গুরাশাইগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা সে ছবি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে প্রিয়ার বাবা সার্ভেশ শুলকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তৌফিকের পরিচয় ফাঁস করে দেন। দ্রুতই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক নেতা। পুরো ঘটনাটিকে ‘লাভ জিহাদ’ হিসেবে আখ্যা দেন।
প্রিয়া বারবার দাবি করেছেন, তৌফিক তার সাথে প্রতারণা করেননি। তিনি আগ থেকেই তার সত্যিকারের পরিচয় জানতেন। তিনি আরও বলেন, তৌফিক কখনোই তাকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেনি। উল্টো, নিজেই ধর্ম পাল্টে হিন্দু ধর্ম গ্রহণে প্রস্তুত ছিলেন।
হিন্দু ধর্মের নিয়মানুসারে, বিয়ের পরদিনই বাবা-মায়ের বাড়ি ফেরত যেতে হয় মেয়েদের। তৌফিককে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন প্রিয়া ছিলেন নিজের মায়ের বাড়ি। তাকে জোর করে সেখানে বেশিদিন রাখা হয়েছিল।
এর মাঝেই তৌফিককে ধর্মান্তরবিরোধী আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, মিথ্যা পরিচয় দেয়া, প্রতারণার উদ্দেশ্যে বিয়ে করা, ধর্মীয় অনুভূতি আহত করার উদ্দেশ্যে বিদ্বেষপরায়ণ কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়। অন্যদিকে, ধারা ৬ অনুসারে, অবৈধভাবে ধর্মান্তরের উদ্দেশ্যে করা কোনো বিয়ে বাতিল হয়ে যাবে।
এখানে উল্লেখ্য, যে অভিযোগের ওপর দায়ের করে তৌফিকের বিরুদ্ধে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে, তাতে ধর্মান্তরের ব্যাপারে কিছু লেখা নেই।
এদিকে, ঘটনাটি নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, তৌফিকের মুসলিম পরিচয় জানতো না প্রিয়া। কিন্তু তিনি নিজেই তৌফিকের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন। তবে প্রিয়ার দাবি, বাবা-মায়ের চাপের মুখে এমনটা করেছেন তিনি। এখন তিনি তৌফিকের সঙ্গে ফিরে যেতে চান। বাবা-মায়ের কাছ থেকে লুকিয়ে দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদককে তিনি জানান, আমি কিভাবে তার কাছে ফিরে যেতে পারি?
কিন্তু প্রিয়ার বাবা শুকলা তার অবস্থান থেকে নড়তে নারাজ। তিনি বলেন, আমাদের জন্য এ বিয়ে কখনো হয়নি। তিনি এখন প্রিয়াকে হিন্দু কোনো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চান। বলেন, আমরা তার জন্য উপযুক্ত ছেলে খুঁজছি।
এদিকে, সাধারণত এ ধরণের মামলায় ভুক্তভোগীকে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বক্তব্য দিতে হয়। ওই বক্তব্যই আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হয়। এই বক্তব্য দেয়ার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকতে পারে না বলে এর আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু প্রিয়ার কাছ থেকে এমন কোনো বক্তব্য নেয়া হয়নি। পুলিশ তাদের কাছে প্রিয়ার দেয়া বক্তব্যই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেয়া বক্তব্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রিয়ার কাছ থেকে লিখিত অনুমোদন নিয়ে নিয়েছে। প্রিয়ার দাবি, বাবা-মায়ের চাপের মুখে এমনটা করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
(দ্য প্রিন্ট থেকে অনূদিত)
Leave a Reply