প্রায় এক বছর পর আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বৈঠকে বসছেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকটি এবার অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়ালি। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠকটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টায়। সূত্র বলছে, বিশেষ এই বৈঠকে প্রাধান্য পাবে কোভিড মোকাবিলায় সহযোগিতা, সীমান্তে হত্যা বন্ধ, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পানি সমস্যাসহ দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়। এ ছাড়া আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে বৈঠকে।
উভয় প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠকে এবার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কোভিড মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়টি। এরই মধ্যে নিজেদের উৎপাদিত করোনার টিকা বাংলাদেশকে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ডের তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বৈঠক শেষে ৫টি
সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হতে পারে। এ ছাড়া কয়েকটি এমওইউ চূড়ান্তেরও কাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে হাতি সংরক্ষণ, বরিশালে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প ও জ্বালানি সহযোগিতা (হাইড্রোকার্বন)। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আগে স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী চুক্তিগুলো সই করবেন।
জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে ভারতের পোস্টাল বিভাগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর স্মরণে প্রকাশিত বিশেষ ডাকটিকিট উদ্বোধন করা হবে। প্রদর্শন করা হবে বঙ্গবন্ধু-বাপু (মহাত্মা গান্ধী) ডিজিটাল মিউজিয়ামের ওপর একটি প্রমো। এ ছাড়া ৫৫ বছর পরে একটি ট্রেন ফ্ল্যাগ অফের মাধ্যমে পুনরায় চালু হবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেললাইন সংযোগ। এবারের বৈঠকে প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এর মধ্যে রয়েছে ইনফরমেশন টেকনোলজি, স্পেস, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সসহ অন্যান্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়।
এ ছাড়া পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, বাণিজ্য, বিদ্যুতের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। মনু, মুহুরি, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার, ফেনী ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন ইস্যু নিষ্পত্তিতে একটি কাঠামো তৈরি এবং আগামী মাসেই যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকেরও প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। জেআরসি বৈঠকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করতে ভারতীয় উদ্যোগ প্রত্যাশার কথা জানাবে বাংলাদেশ। ভারতের ঋণের আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো দ্রুত সম্পন্নের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
এই বৈঠক বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানান, সাম্প্রতিককালে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সোনালি অধ্যায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্ট উদ্বোধন হবে। আমাদের বড় বড় ইস্যু, যেগুলো সব সময় আমরা তুলে থাকি সেগুলো উত্থাপন হবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ভারতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কবিষয়ক এক অনলাইন সেমিনারে এ প্রত্যাশার কথা জানান। আজকের শীর্ষ বৈঠকেও এ বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ভারত আগামী মাসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শুরু করবে। বাংলাদেশ আশা করছে, ভারত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রস্তাব আনবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির ১৭ মার্চ ঢাকা আসার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। আজকের বৈঠকে আগামী মার্চে তাকে ঢাকা সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানো হবে।
Leave a Reply