সরকারি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছেন না। বিষয়টি মাথায় নিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় পর্যায় (সেকেন্ড ওয়েভ) মোকাবিলায় মানুষের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ যদি করতে হয় আইন প্রয়োগ করবে প্রশাসন। মন্ত্রিসভা বলেছে, নো মাস্ক নো সার্ভিস। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে মানুষকে মাস্ক পরাতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে কি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বলছে, এই নির্দেশনা মানাতে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সারা দেশে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম মানবজমিনকে বলেন, নো মাস্ক নো সার্ভিস। এই লগো দিয়ে ইতিমধ্যে আমরা প্রান্তিক সবাইকে চিঠি দিয়েছি। জনসচেতনতা তৈরিতে প্রচার করার জন্য আমরা জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দিয়েছি। বাজারে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য বণিক সমিতিকে বলেছি। শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সব মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই ক্রমান্বয়ে সরকারি অফিস, গণপরিবহন, ট্রেন, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সেবা খুলে দেয়ার আগে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু আদতে তা তেমন মানা হচ্ছে না। সরকারি অফিসেই অনেকে মাস্ক ছাড়া যাওয়া-আসা করছেন। যাত্রীবাহী বাসে অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। চালক, চালকের সহকারীর মুখেও মাস্ক দেখা যাচ্ছে না। বাজারে, জনবহুল স্থানে মাস্ক পরছেন না অনেকে। এতে ভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক থেকে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, মাস্ক না পরলে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সেবা মিলবে না। শীতে করোনা বাড়তে পারে, সে জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল-এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সেটা অলরেডি চারদিকে ম্যাসিভ ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয়েছে। চারদিকে যতগুলো আমাদের ইনস্টিটিউশন আছে, সোশ্যাল বা অর্গানাইজেশনাল বা ফরমাল প্রতিষ্ঠান-আমরা তাদের নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। এক নম্বর হলো- নো মাস্ক নো সার্ভিস (মাস্ক না পরলে সেবা পাবেন না)। তারপর হলো সব জায়গায়, সব প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার বা শপিংমল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও ধর্মীয় সম্মেলনে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আমরা এটা কম্পোলসারি (বাধ্যতামূলক) করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা বিভাগীয় কমিশনারদের ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। সব সরকারি-বেসরকারি অফিসের বাইরে বড় একটা পোস্টারের মতো থাকবে- মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না, মাস্ক ছাড়া ব্যবহারও করতে পারবে না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে প্রচার করার জন্য বলা হয়েছে- দিনে দুইবার নামাজের পর প্রচার করার জন্য যে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। আলেম-ওলামাদের সঙ্গেও কথা বলেছি, ওনারাও এটা শুরু করেছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কীভাবে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইন্সপেকশন করা হবে। তাহলে মাস্ক ছাড়া কেউ এলে তাকে সেবা দেয়া হবে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ঢুকতেই দেয়া হবে না, আমরা বলে দিয়েছি। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও। বিভিন্ন প্রডিউসার তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারাও তাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে সেটা চালু করছেন ইনশাআল্লাহ। গণপরিবহনে মানুষ মাস্ক পরছে না- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা এটা দেখবো। এটা আলোচনা হয়েছে। সড়ক সচিব, নৌপরিবহন সচিব ও রেল সচিবের সঙ্গে আমরা কাল-পরশু বসবো ইনশাআল্লাহ। বসে এর একটা ওয়ার্ক আউট করা যাবে।
Leave a Reply